কাকরাইল মাদরাসা : বিশ্বময় ছড়াচ্ছে দ্বীনি শিক্ষার আলো

আবরার আবদুল্লাহ ।।  

কাকরাইল মসজিদ বাংলাদেশে তাবলিগের প্রধান কেন্দ্র। এ মসজিদ থেকে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েন দ্বীনপ্রাণ মানুষ। মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেন কুরআনের কথা, হাদিসের বাণী। এ কথা সবাই জানে। কিন্তু ঠিক তার পাশেই যে রয়েছে ইলমে দ্বীনের প্রাচীন একটি ফোয়ারা তা ক’জন জানে? যে ফোয়ারায় তৃষ্ণা মেটায় বহু শিক্ষার্থী। তারা এখানে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করেন এবং দাওয়াত ও তাবলিগের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেন বিশ্বময়। দ্বীনের সেই ফোয়ারার নাম মাদরাসায়ে উলুমে দ্বীনিয়া, কাকরাইল।

হজরতজি ইউসুফ রহ. এর সময় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের হিসেবে কাকরাইল মারকাজের সাথে প্রতিষ্ঠিত হয় মাদরাসায়ে উলুমে দ্বীনিয়া। মক্তব থেকে শুরু হওয়া মাদরাসাটিতে এখন মেশকাত শ্রেণি পর্যন্ত রয়েছে।।

দেশের অন্য দশটি মাদরাসা থেকে মাদরাসায়ে উলুমে দ্বীনিয়ার ভিন্নতা হলো এখানে দেশি শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে শতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীও লেখা-পড়া করেন। যাদের অধিকাংশই এসেছেন মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে থেকে।

মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জানান, কাকরাইল মসজিদ সংলঘ্ন মাদরাসাটি কাকরাইল মারকাজ কর্তৃক পরিচালিত। মাদরাসার সকল ব্যয়ভারও বহন করে মারকাজ। বাংলাদেশে তাবলিগের প্রধান মুরব্বি মাওলানা মুহাম্মদ যোবায়ের মাদরাসাটির পরিচালক।

মাদরাসার শিক্ষক ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল মুফতি উসামা জানান, নব্বই দশকের শেষভাগ থেকে কাকরাইল মাদরাসায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগমন শুরু হয়। বর্তমানে মাদরাসায় ৯০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের অধিকাংশই এসেছে কিরঘিস্তান থেকে। এছাড়াও ইউক্রেন, চায়না, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, শ্রিলঙ্কা, আজারবাইজান ইত্যাদি দেশের শিক্ষার্থী রয়েছে।

এসব দেশে ইসলামি শিক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা না থাকাই শিক্ষার্থীদের আগমনের প্রধান কারণ হিসেবে জানান মুফতি উসামা। বিশেষত অমুসলিম দেশের শিক্ষার্থীদের অনেকেরই নিজ দেশে ইসলামি শিক্ষার সুযোগ নেই। অনেকের দেশে ইসলামি শিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যেমন চায়না। তারা দ্বীনী শিক্ষা অর্জনের জন্য এখানে আসে।

তবে এখানে কেনো? সে উত্তরও দেন তিনি। এখানে যারা আসেন মারকাজের সূত্রেই আসেন। তাবলিগের কাজের সঙ্গে জড়িত এমন ব্যক্তিরাই সন্তানদের পড়াতে বাংলাদেশের এ মাদরাসায় পাঠান। শুধু তাই নয় এ মাদরাসায় পড়ার শর্তই হলো অভিভাবককে ৩ চিল্লা সম্পন্ন করতে হবে।

এমন শর্তের কারণ জানতে চাইলে বিব্রত হন একজন শিক্ষক। নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, এটি সাধারণ ধারার কোনো মাদরাসা নয়। এ মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দ্বীনের মুবাল্লিগ তৈরির জন্য। আর পরিবারে যদি দ্বীনের মেহনত (তাবলিগের কাজ) না থাকে তবে সন্তানের মানসিকাও সেভাবে গড়ে ওঠে না।

শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, তাবলিগি মেজাজে গড়ে তোলার জন্যই এ মাদরাসায় কোনো নির্ধারিত বোর্ডের সিলেবাস অনুসরণ করা হয় না। বরং তাবলিগের প্রধান মারকাজ নিজামুদ্দিন ও রায়বেন্ডের অনুসরণ করা হয়। এবং এ মাদরাসার প্রধান শিক্ষা মাধ্যমও উর্দু বলে জানান তিনি।

তার কাছেই জানতে চাই বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও কি একই কারিকুলামে পড়ানো হয়? হ্যা, তাদেরকে একই কারিকুলামে পড়ানো হয়। তাদের শিক্ষা মাধ্যম বাংলা ও উর্দু।

মাদরাসা ঘুরে দেখা গেলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়া, থাকা ও খাওয়ার আয়োজন সাধারণ শিক্ষার্থীদের চেয়ে ভিন্ন। মাদরাসার ৫ম ও ৬ষ্ঠ তালায় তাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে ভিন্ন শিক্ষক।

একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে মুফতি উসামা বেলাল নামের একজনকে ডেকে পাঠান। বেলাল ৬ বছর যাবত কাকরাইল মাদরাসায় পড়ছে। হিফজ শেষ করে শোনাচ্ছে এখন। সে জানালো, তার বাড়ি কিরঘিস্তান। বাবা-মা সবাই দেশে থাকে। বাংলাদেশে সে একাই এসেছে।

তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, কেন বাংলাদেশে আসলে? তোমার দেশে ইসলামি শিক্ষার সুযোগ নেই? বেলাল বললো, আমার দেশে ইসলামি শিক্ষার ব্যবস্থার রয়েছে। আমি এখানে এসেছি দ্বীন শিখতে, দ্বীনের মেহনত শিখতে। আমাদের দেশে দ্বীনের মেহনত শেখার এমন সুযোগ নেই।

বেলাল আরও জানালো, সে এবং তার দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী দুই থেকে তিন বছর পর বাড়ি যায়। আর মাদরাসা যখন বন্ধ থাকে তখন দ্বীনের মেহনত শেখার জন্য তাবলিগে সময় দেয়। আর নিয়ে তাদের মনে কোনো দুঃখ নেই।

সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আবদুল্লাহ নামের অপর এক শিক্ষার্থীও দ্বীনের মেহনত শেখাই তার বাংলাদেশে আসার কারণ হিসেবে জানান।

বিদেশ থেকে আগত এসব শিক্ষার্থী যে তাবলিগি মানসিকায় বড় হচ্ছে তা বোঝা গেলো বেলালের সঙ্গে কথা শেষ করার পর। কথা শেষে বেলাল বিনয়ের সঙ্গে প্রতিবেদককে দ্বীনের মেহনতে বের হওয়ার দাওয়াত দিলো। প্রতিবেদক মুগ্ধ হয়ে শুধু বললো, মাশাআল্লাহ! আমি চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ!

পূর্ববর্তি সংবাদমেঘনায় জাল ও ট্রলার জব্দ
পরবর্তি সংবাদবহু আলেমকে দেখবেন, তার সনদটি কোথায় আছে, তিনি জানেন না। সনদ খুঁজে দেখার আগ্রহও তার নেই -মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ