মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং উম্মতের বিভক্তির প্রতিযোগিতা ।। মিযান হারুন

মিযান হারুন  ।।  

জামিয়া ইসলামিয়া মদীনার (মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়) দুভার্গ্য যে এটার জন্ম বড় বড় কিছু মহীরূহের ছায়াতলে হলেও লালন-পালন ও তরবিয়ত এমন একদল মানুষের হাতে হয়েছে যারা প্রতিষ্ঠাতাদের যোগ্য উত্তরসূরী ছিল না। ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আজ ষাট বছর হয়ে যাওয়ার পরে বিশ্বব্যাপী ইলমী ও দাওয়াতী খেদমতে ব্যাপক অবদান রাখলেও সময়ে সময়ে এগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে কিছু মানুষের ভূমিকা। পুরো মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বের পরিবর্তে এই বিশাল প্রতিষ্ঠান বরাবর সেই ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করেছে বা তাকে দিয়ে করানো হয়েছে। এটা আরেকবার প্রমাণিত হলো নতুন প্রতিযোগিতার ঘোষণা দেখে।

অনলাইনে অনেকের দেয়ালেই মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা প্রতিযোগিতার বিজ্ঞপ্তি ভেসে বেড়াচ্ছে। রচনা প্রতিযোগিতা। আহলে সুন্নাত বিরোধী বিভিন্ন ফিরকার ওপর। এসব ফিরকা হলো ১. দায়েশ, ২. আল-কায়েদা, ৩. ইখওয়ান, ৪. তাবলীগ জামাত! আপনি চিন্তা করতে পারবেন কোন্ মস্তিস্ক নিয়ে তাবলীগ ও আলকায়েদাকে একই পাল্লাতে রাখা হলো? কিংবা ইখওয়ান ও দায়েশকে এক করা হলো? সর্বোপরি তাদের সবাইকে আহলে সুন্নাহ থেকে বের করে দেয়া হলো? বাকি রইলো কারা? নিশ্চয়ই সালাফিজম। কারণ দেওবন্দিয়্যাত/সুফিবাদ এরা তাবলীগের ভেতরে ঢুকে পড়ে। জামাআতে ইসলামীকে ইখওয়ানের খালাতো ভাই মনে করা হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে সালাফিজম ছাড়া উম্মাহর সকল মানহাজ আহলে সুন্নাহর বাইরে।

এখন যদি আমাদের দেশের মাদরাসাগুলোতে সালাফিজমকে ফিতনা বলে সেটার বিরুদ্ধে বক্তৃতা/অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় আপনি দোষ দিবেন কী করে? আপনি দোষ দেয়ার নৈতিকতা রাখেন না। মদীনার লাইব্রেরিতে কমপক্ষে ৫ টা বই আমি নিজে পড়েছি সবগুলো দাওয়াত ও তাবলীগের বিরুদ্ধে। দেওবন্দের বিরুদ্ধে। শাইখ হামূদ তুওয়াইজিরী তো লিখেছেন তাবলীগীদের নামাজ বিশুদ্ধ নয়!!! মদীনার কৃতিছাত্র শামছ আফগানী তার মাস্টার্স ও পিএইচডির রিসালাতে দেখিয়েছেন দেওবন্দীরা কবরপূজারী। আজও এ রিসালা আরবে পড়া হয়, চর্চা হয়।

করণীয় কী? আমি বলি কি উম্মাহর এই দুরবস্থায় এগুলো উচিত নয়। প্রত্যেককে নিজের লাগাম টেনে ধরতে হবে। তাদেরটা তারা করুক। আমাদের করণীয় আমি বলে দিচ্ছি। সেটা হলো, মদীনার এই চিত্র দেখে বাকি সব অবদানকে ছোট করা যাবে না। কারণ দুয়েকজন ব্যক্তির মেযাজের ওপর ভিত্তি করে আপনি পুরো একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে ছুঁড়ে ফেলতে পারেন না। তাছাড়া ওখানে পড়েও আমাদের আকাবিরদের মানহাজের ওপরে থাকা ভাইদের সংখ্যাও কম নয়। মদীনার ফারেগ উদারপন্থী উলামায়ে কিরামের সংখ্যাও সন্তোষজনক। অপরদিকে সৌদির সব বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা আলেমদের মানসিকতাও কিন্তু এমন নয় সেটাও মনে রাখতে হবে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার মাশায়েখগণ আগে তাবলীগ/দেওবন্দিয়্যাত ইত্যাদি সম্পর্কে বিরূপ ধারণা রাখতেন। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ কথা বলার পরে মনে হয়েছে তাদেরকে সঠিকভাবে এখানে তুলে ধরা হয়নি। দেওবন্দিয়্যাত/তাবলীগের ওপর ইতিবাচক লেখা খুব কম। প্রচার বলতে গেলে কিছুই নেই। এগুলোতে গুরুত্ব দিতে হবে। নিজেরা নিজেদের তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়ে কেবল আরবদের দোষ দিলে হবে না। আমরা কিন্তু আমাদের যথাযথভাবে তুলে ধরিনি আরবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের বৃহত্তর ঐক্য কায়েম করে দিন। মন থেকে হিংসা ও বিদ্বেষ মুছে দিন। আমীন।

পূর্ববর্তি সংবাদসৌদি নৌযানে হুথিদের হামলা
পরবর্তি সংবাদভিক্ষুকের সালামের উত্তর না দিলে কি কোন সমস্যা আছে?