বৃহস্পতিবার অপরাহ্ন : ঘরে ফেরার ডাক

আতাউর রহমান খসরু

ঘড়ির কাঁটা তখন পাঁচটা ছুঁই ছুঁই। একটু পরই মাগরিবের আজান। নেমে আসবে অন্ধকার। এখনও বাস ধরতে পারে নি হাশেম সরদার। আর দশজন ঘরমুখী মানুষের সাথেই দাঁড়িয়ে আছে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে। এখান থেকে বাস ধরে যাবে মানিকগঞ্জের দত্তপাড়ায়। হাশেম সরদার একজন পোশাক শ্রমিক। প্রতি বৃহস্পতিবার অফিস শেষে বাড়ি যান।

শুধু কল্যাণপুর নয়; বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘরমুখী মানুষের এ ছোট ছোট ঢেউ দেখা যায় শহরের প্রতিটি ছোট-বড় বাসস্ট্যান্ডে, গলির মুখে। পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে ঢেউগুলো জমাট বেঁধে আবার রাতের প্রথম প্রহরেই মিলিয়ে যায় শহরের মিলন মোহনায়।

কর্মসপ্তাহের শেষ দিনে ঘরমুখো মানুষগুলোর মতোই ব্যস্ত হয়ে ওঠে শহরের রাস্তাগুলো। দুপুর থেকে সন্ধ্যা-রাত মানুষের ভীড়ে ও যানবাহনের ভারে মুখর হয়ে থাকে। ভীড় ও যানজটে শ্রমক্লান্ত মানুষের মতোই ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলতে থাকে গাড়ি। তবে এ ক্লান্তির মধ্যেও যেনো সজাগ থাকে ঘরফেরা মানুষের চোখ। সেখানে জ্বলজ্বল করে কর্মমুক্তির আশ্বাস। যেন বৃহস্পতিবার বিকেল মানেই একটু স্বস্তি আর এক মুঠো সজীব নিঃশ্বাস।

 

শহরবাসী কর্মজীবীর জন্য বৃহস্পতিবার বিকেল মানে কর্মসপ্তাহের সমাপ্তির দিন। কিন্তু ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা ও শহরতলী মানুষ –যারা জীবিকার তাগিদে শহরে থাকেন- তাদের কাছে বৃহস্পতিবার ঘরে ফেরার দিন। অপেক্ষার দিন। সপ্তাহের শেষ দিনটি আসার আগ থেকে তারা এবং বাড়িতে ছেড়ে আসা আপনজন অপেক্ষা করেন বৃহস্পতিবারের। এই তো একদিন পর ঘরে ফিরবে বাবা, ফিরবে কলজে ছেঁড়া সন্তান। তাই নগরের বৃহস্পতিবারের সাথে যুক্ত হয় কিছু আবদারও। ঘরফেরা মানুষের হাতে হাতে ঝুলতে থাকে ছোট-বড় রঙিন ব্যাগ। ঘরে অপেক্ষমান মানুষের স্বপ্ন।

নিভে যাওয়ার আগে যেমন প্রদীপ ঝলসে ওঠে কর্ম-সপ্তাহের শেষ মুহূর্তে তেমন বৃহস্পতিবার বিকেল জেগে শহরের পুরো অবয়বে। অফিস-আদালত থেকে শুরু করে শপিংমল-ফুটপাত পর্যন্ত সবকিছুই যেন চঞ্চল হয়ে ওঠে। শূন্য হতে থাকে অফিস-আদালত। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা করতে দোকানে দোকানে মহরা দেয় ঘরমুখী মানুষ। খোঁজে ফেরেন আপনজনের স্বপ্ন-সাধ।

এই ব্যস্ত শহরে ব্যস্ত প্রতিটি বিকেল। তবে বৃহস্পতিবার বিকেলটা সব বিকেল থেকে ভিন্ন। অন্য বিকেলগুলো একান্ত শহরবাসীর। আর বৃহস্পতিবার বিকেলটা সার্বজনীন। এ বিকেলের উৎসব, আনন্দের স্রোতধারা খুঁজে পাওয়া যায় না অন্য কোনো বিকেলে। ক্লান্তি, জনজট-যানজটের বিড়ম্বনা বা কোনো কিছুই ম্লান করতে পারে না সে উচ্ছ্বাস। প্রিয়মুখ, প্রিয় ছবি উজ্জীবিত করে যায় অবিরাম। এই তো আরেকটু দেখবো ক্লান্তিবিনাশী হাসি।

রাতের সাথে সাথে গভীর হয় শহরের ক্লান্তি। ক্লান্তি থেকেই নিস্তব্ধ হয়ে যায় অবসন্ন শহর। এরপর বিশ্রামকাতর সকাল, স্বস্তির দিন। আবার ব্যস্ত জীবন, ব্যস্ত শহর আর অপেক্ষা একটি মুখর বিকেলের।

পূর্ববর্তি সংবাদমানবসম্পদ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় ৩য় বাংলাদেশ
পরবর্তি সংবাদ`আল্লামা শাহ আহমদ শফির নেতৃত্বে উলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ আছে’