টঙ্গীর ওয়াজাহাতি জোড়ে তাবলিগ-সাথীদের ঢল, গৃহীত ৯ সিদ্ধান্ত

টঙ্গীর ওয়াজাহাতি জোড়ে তাবলিগ-সাথীদের ঢল

ইসলাম টাইমস ডেস্ক : শুক্রবার টঙ্গীর পাইলট স্কুল ময়দানে অনুষ্ঠিত ওয়াজাহাতি জোড়ে তাবলিগ-সাথীদের ঢল নেমেছে। জুমার কিছুক্ষণ পর থেকে টঙ্গীর শবগুজারির সবকটি পয়েন্ট থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যেও সাথীরা এসে একত্র হন। আমন্ত্রিত মেহমান ওলামায়ে কেরাম আছরের আগ থেকেই বক্তব্য শুরু করেন। মাগরিবের সময় ময়দান এবং আশপাশের সবকটি মসজিদ মুসুল্লিতে ভরে যায়। রাত নয়টা পর্যন্ত চলা এই জোড়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও কাকরাইল মারকাজের মুরুব্বিরা বয়ান করেন। এ জোড়ে ৯টি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।

কয়েক বছর ধরে চলে আসা তাবলিগ জামাতের সংকট বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে। দেশ-বিদেশের ওলামায়ে কেরাম ও তাবলিগের প্রবীণ মুরুব্বিরা এর জন্য দায়ী করছেন মাওলানা সাদ কান্ধলবীকে। তিনি বিভিন্ন সময় দাওয়াতি বয়ানে বেশকিছু মারাত্মক ভুল কথা বলেছেন। বারবার তাকে বলার পরও তিনি এ বিষয়ে নিজের ভুল স্বীকার করছেন না। তাই ওলামায়ে কেরাম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাবলিগ জামাতে চলমান এই সংকট নিরসন ও প্রকৃত বিষয় তুলে ধরতে দেশব্যাপী ওয়াজাহাতি জোড় করার। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার (১২ অক্টোবর) টঙ্গীর কলেজ গেইট পাইলট ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এই ওয়াজাহাতি জোড়। দুপুর তিনটা থেকে অনুষ্ঠিত জোড়ে বৃষ্টির মধ্যেও ওলামায়ে কেরাম ও তাবলিগ-সাথীদের ঢল নামে।

অনুষ্ঠিত জোড়ে ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম ও বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ার মুফতি মানসূরুল হক, মারকাযুদ দাওয়া আলইসলামিয়ার আমিনুত তালিম মাওলানা আবদুল মালেক, শাইখ যাকারিয়া ইসলামি রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক, আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী, বিবাড়িয়ার মাওলানা সাজেদুর রহমান, মাসনা মাদরাসার মাওলানা ইয়াহইয়া, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, কাকরাইলের মুরুব্বি মাওলানা রবিউল হক, মাওলানা আবদুল বার ইবনে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মুকিত, মুফতি কেফায়াতুল্লাহ আজহারী প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম দিক-নির্দেশনামূলক বয়ান পেশ করেন।

ওয়াজাহাতি জোড়টির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন টঙ্গী দারুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মাসউদুল করীম, স্থানীয় ওলামায়ে কেরাম ও তাবলিগ-সাথীরা।

আজকের জোড় থেকে ৯টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

১। জমহুর ওলামায়ে কেরাম একমত হয়েছেন তিনটি মৌলিক কারণে : ক. কুরআন ও হাদীসের মনগড়া ব্যাখ্যা। খ. তাবলীগের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে তাবলীগ ব্যতীত দ্বীনের অন্যান্য মেহনতকে যথা দ্বীনি শিক্ষা ও তাসাউফ ইত্যাদিকে হেয় প্রতিপন্ন করা। গ. পূর্ববর্তী তিন হযরতজীর উসূল ও কর্মপন্থা থেকে সরে যাওয়ার কারণে বর্তমানে মাওলানা সাদ সাহেবকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয় ও নিষিদ্ধ।।

২। মাওলানা সাদ সাহেব হযরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ.-এর রেখে যাওয়া শুরায়ী নেযামকে উপেক্ষা করে নিজেই নিজেকে আমীর দাবী করেছেন, যা শরীয়ত বিরােধী। তাই তার কোনো সিদ্ধান্ত এবং ফায়সালা বা নির্দেশ কাকরাইল তথা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করা যাবে না।।

৩। দারুল উলুম দেওবন্দ আশংঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, মাওলানা সাদ সাহেব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ থেকে সরে গিয়ে নতুন কোনো ফেরকা গঠনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।

এহেন পরিস্থিতিতে বালাদেশের কোনো জামাত বা ব্যক্তিকে নিযামুদ্দীনে পাঠানাে বা যাওয়া মুনাসিব হবে না। অনুরুপভাবে নেযামুদ্দিন থেকে আগত কোনাে জামাতকে কোনো জেলায়/থানা/ইউনিয়নে কাজ করার সুযোগ দেওয়া যাবে না।

৪. মাওলানা ইলিয়াস রহ., মাওলানা ইউসুফ রহ. ও হযরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ-এর বাতলানো পদ্ধতিতে তাবলিগের কাজ সারা দুনিয়ায় সমা সমাদৃত ও গৃহীত হয়েছে।

তাই বাংলাদেশে এই তিন হযরতের পদ্ধতিতে এবং ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে তাবলিগের কাজ পরিচালিত হবে। নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করা যাবে না। কাকরাইল ও টঙ্গী ময়দান এবং জেলা মারকাযসহ সকল মারকায এই নীতিতেই পরিচালিত হবে।

৫। কাকরাইল মসজিদের যে সকল শুরা সদস্য আমরণ মাওলানা সাদ সাহেবের ভ্রান্ত আকীদা অনুসরণের শরীয়ত পরিপন্থী হলফনামা করেছেন, তারা শুরাসদস্য থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। অতএব তাদেরকে তাবলীগের কাজে শুরা ও ফায়সাল না রাখার আহ্বান জানানাে যাচ্ছে।

৬। ২০১৮ সালের বিশ্ব ইজতেমার পূর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের সভাপতিত্বে ত্রিপক্ষীয় তথা ১. কাকরাইলের আহলে শুরা ২. শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম ৩. স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলাের বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখার জোর আহ্বান জানানাে যাচ্ছে। সিদ্ধান্তগুলাে নিম্নরূপ :

ক. মাওলানা সাদ সাহেব দারুল উলুম দেওবন্দের সাথে মতপার্থক্য দূর করে দারুল উলুম দেওবন্দের আস্থা অর্জন না করা পর্যন্ত বাংলাদেশে আসতে পারবেন না।

খ. নিযামুদ্দীনের যে সকল আকাবির উলামায়ে কেরাম মাওলানা সাদ সাহেবের সাথে দ্বিমত পােষণ করে মারকায় ত্যাগ করে চলে গেছেন, তাদের সাথে সমস্যা নিরসন করে একসাথে বাংলাদেশে আসবেন, একা আসবেন না।

৭। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে উল্লেখিত বিষয় দুটির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত মাওলানা সাদ সাহেবের কোনাে পরামর্শ ও নির্দেশনা তাবলীগের সাথী ভাইগণ এ দেশে চালানাের চেষ্টা করবেন না; বরং এ দেশের দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত কাকরাইল মারকাযের মুরুব্বীদের পরামর্শক্রমেই চলবে।

৮। এবারের পাঁচ দিনের জোড় ৭,৮,৯,১০,১১ ডিসেম্বর ২০১৮ইং অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৮-এর টঙ্গী ইজতেমায় সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে আগামী ২০১৯ সালের টঙ্গী ইজতেমার জন্য নির্ধারিত তারিখ প্রথম পর্ব ১৮,১৯,২০ জানুয়ারী ও দ্বিতীয় পর্ব ২৫,২৬,২৭ জানুয়ারীর সাথে আজকের মজমা ঐকমত্য পোেষণ করছে।

৯। ২০১৯ সালের ইজতেমার আগে ও পরে কোনাে জেলাওয়ারী ইজতেমা হবে না। উপরােক্ত ঘােষণাসমূহ যথাযথ বাস্তবায়নে এবং বর্তমানে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলারােধে সরকারের সার্বিক সহযােগিতা কামনা করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তি সংবাদউগান্ডায় ভারি বৃষ্টিপাত ও ধস, নিহত ৩৪
পরবর্তি সংবাদসেনাপ্রধানকে নিয়ে বক্তব্যের জন্য জাফরুল্লাহর দুঃখপ্রকাশ