নিজস্ব প্রতিবেদক : গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে দেশে ও দেশের বাইরে থাকা দ্বীনদার মুসলমানদের। ভিভিওটিতে দেখা যাচ্ছে একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে গানের তালে তালে ফুলের মালা দিয়ে অতিথিদের সম্মান জানাচ্ছে ছাত্রীরা। একজন স্কুল শিক্ষকের নির্দেশে ফুলের মালা হাতে নিয়ে তাদের উঠ-বস করতেও দেখা গেছে।
অনুষ্ঠানে মেয়েদের দিয়ে ফুলের মালা পরানো, মালা পরানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ধর্মের রীতি অনুসরণ ইত্যাদি বিষয় দ্বীনপ্রাণ মানুষকে আহত করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয় ব্যাপকভাবে সমালোচিতও হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যশোরের চৌগাছা উপজেলার এবিসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। আর অতিথিদের মধ্যে ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
ব্যাপক সমালোচনার মুখে এমপি মনির গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিকে অনঅভিপ্রেত বলে উল্লেখ করেছেন এবং ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে সমালোচনাকারীদেরও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের মালা পরিয়ে দেয়ার একটি ভিডিও নিয়ে সমালোচনা করা হচ্ছে। যা উদ্দেশ্য প্রণোদিত।’
বিজ্ঞজনদের দাবি, এমপি মনিরের দুঃখ প্রকাশ করা ইতিবাচক। তবে তার বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে তিনি মানুষের ধর্মীয় অনুভূতির বিষয়টি বুঝতে পারেননি।
এ বিষয়ে ইসলাম টাইমসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে জামিআতুল উলুম মোহাম্মদপুরের মুহাদ্দিস মাওলানা তাহমীদুল মাওলা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের জন্য অবদান রেখেছেন এমন সবার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে। তাদের শ্রদ্ধা জানানোর ব্যাপারে আমাদের ভিন্নমত নেই। কিন্তু শ্রদ্ধা-সম্মান-ভক্তি জানানোর ক্ষেত্রে যেন আমরা ইসলামের মূলনীতির বাইরে চলে না যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা জানানো বা বরণ করার ক্ষেত্রে হিন্দু ধর্মের প্রণাম-পূজার সঙ্গে পদ্ধতিগত মিল রয়েছে। ইসলামি শরিয়তে এটি নিন্দনীয়। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, “যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদের অন্তর্ভূক্ত।” হাদিসের ভাষ্যানুযায়ী হিন্দু রীতি অবলম্বন অবশ্যই অন্যায়।’
‘ইসলামের সম্মানজ্ঞাপন ও অভিভাদনের নিজস্ব নিয়ম-রীতি রয়েছে। আমাদের সম্মান-শ্রদ্ধা-ভালোবাসার প্রকাশ সে নিয়মমাফিক হওয়া আবশ্যক।’-বলেন মাওলানা তাহমীদুল মাওলা।
তার বক্তব্যের সঙ্গে আরেকটি বিষয় যোগ করেন মারকাযুদ্দাওয়াহ আলইসলামিয়া-এর উস্তায, লেখক ও খতিব মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, আলোচিত ঘটনার কয়েকটি দিক আমি তুলে ধরতে চাই। এক. যেসব মেয়েরা ফুল দিয়েছে তাদের উপর শরয়ি পর্দা ফরজ ছিলো। ফুল দিয়ে অতিথি বরণের ঘটনায় শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান পর্দা লঙ্ঘিত হয়েছে।
দুই. ইসলাম নারীকে যে সামাজিক ও ধর্মীয় মর্যাদা দিয়েছে তার সঙ্গে এ দৃ্শ্যটির বৈপরিত্য রয়েছে। এতে নারীর সম্মানের অবমাননা করা হয়েছে। নেতৃবৃন্দ যে দল বা পর্যায়েরই হোক তাদের সম্মানার্থে এভাবে ছাত্রীদের, নারীদের ব্যবহার করা অগ্রহণযোগ্য। আমি মনে করি এটি ভোগবাদী সংস্কৃতির অংশ।
সাথে সাথে আরেকটি বিষয় বলতে চাই, এভাবে ফুলের মালা দিয়ে সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে ছাত্র বা পুরুষদের ব্যবহার করা হলেও তা আপত্তিকর হতো। ছাত্রীদের দিয়ে এভাবে সম্ভাষণ জানানোয় বিষয়টি আরও বেশি আপত্তিকর হয়েছে।
উভয় আলেম প্রত্যাশা করেন, মুসলমানের উচিৎ জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামি অনুশাসন, রীতি-নীতি মেনে চলা।
