আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যেভাবে এলো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদরাসার অবদানের কথা

আবরার আবদুল্লাহ ।।

গত বছর আগস্টে মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যা শুরু হওয়ার পর প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। তাদের আশ্রয় দেয়া হয় বিভিন্ন ক্যাম্পে। মানবিক সাহায্য নিয়ে নির্যাতিত এসব মুসলমানের পাশে দাঁড়ান দেশের দ্বীনপ্রাণ সাধারণ মানুষ। বিশেষত এবারের রোহিঙ্গা সংকটে আলেমদের ভূমিকা ছিলো চোখে পড়ার মতো।সাধারণ মুসলমানের সহযোগিতায় তারা বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেন রোহিঙ্গাদের হাতে।

নগদ অর্থ, শুকনো ও তৈরি খাবার, কাপড়, চিকিৎসা সামগ্রীর পাশাপাশি আলেমরা সেখানে বেশ কিছু মসজিদ ও মাদরাসা নির্মাণ করেন। রোহিঙ্গা নর-নারী দ্বীনি প্রয়োজন ও শিশুদের দ্বীনি শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তারা এসব দ্বীনি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে ওঠা মাদরাসা-মসজিদ রোহিঙ্গাদের মধ্যে উগ্রবাদের বিস্তার ঘটাতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে এর বিরোধিতা করে দেশের চিহ্নিত কিছু গণমাধ্যম। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর দাবির মুখে দুয়েকটি মাদরাসা ও মসজিদ বন্ধ করে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।

কিন্তু এবার ঠিক বিপরীত চিত্র উঠে এল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এএফপি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাদরাসাগুলো শিশুদের জন্য শিক্ষা ও নিরাপত্তার জায়গা হিসেবে উল্লেখ করে একটি রিপোর্ট করে।

রিপোর্টে তারা বলে, মাদরাসাগুলো রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা শিশুরা যেন আত্মপরিচয় ভুলে না যায় সে লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে মাদরাসাগুলো।

এএফপির রিপোর্টটি বাংলাদেশের ডেইলি স্টার, ভারতের হিন্দু টাইমস, তুরস্কের ডেইলি সাবাহ, ইন্দোনেশিয়ার ইন্দোশিয়াটুডে, ইয়াহুসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম পুনর্মুদ্রণ করে।

প্রতিবেদক বলেছেন, মাদরাসাগুলো মুসলিম শিশুদের ইসলামি শিক্ষা ও নীতি-নৈতিকতা শেখাচ্ছে।

রোহিঙ্গা মাদরাসায় কর্মরত রফিক বিন হাবিব প্রতিবেদককে বলেন, ‘উগ্র বৌদ্ধ ও মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরাকানের মাদরাসা-মসজিদকে বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। তারা বহু মাদরাসা ও মসজিদ ধ্বংস করেছে। সেসব মসজিদ-মাদরাসায় যারা কর্মরত ছিলেন তাদের অনেকেই এখানে রোহিঙ্গা শিশুদের দ্বীন শেখাচ্ছেন, মসজিদের দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রায় প্রতিটি মসজিদের সাথে কুরআন শেখার মক্তব রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সবচেয়ে বড় মাদরাসায় চারশো শিক্ষার্থী এবং ছোট মাদরাসাগুলো ১০-১২ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে মেয়ে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থাপনা পর্যাপ্ত নয়।

প্রতিবেদক বলেন, মাদরাসাগুলো রোহিঙ্গা শিশুদের তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি শিক্ষা দিচ্ছে। শুধু তাই নয়; তাদেরকে বাংলা, আরবি, ইংরেজি ও উর্দু ভাষাও শেখানো হচ্ছে।

প্রতিবেদনে একটি নতুন প্রজন্ম –যারা সব ধরনে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত- তাদের শিক্ষা ও সার্বিক বিকাশে মাদরাসগুলোর অবদান তুলে ধরা হয়েছে।

পূর্ববর্তি সংবাদসুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলনের স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন
পরবর্তি সংবাদহৃদরোগে আক্রান্ত মাওলানা সাঈদের জন্য দোয়া কামনা