সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর ।।
উসমানি খেলাফতের জাহাজটির নাম ‘এরতুগরুল’। তুরস্কে উসমানি সাম্রাজ্যের প্রথম গোড়াপত্তনকারীর নাম ছিল এরতুগরুল। সেই বীরের নামেই নামকরণ করা হয়েছে জাহাজের নাম।
১৮৯০ সালের ১৭ জুন সকালবেলা এরতুগরুল নামের জাহাজটি ভিড়ল জাপানের উপকূলবর্তী শহর ইয়োকোহামার বন্দরে। জাহাজের ৬০০ নাবিক নেমে এল ইয়োকাহামা বন্দরের বাঁধানো ঘাটে। এরতুগরুল ইয়োকোহামার বন্দরে ভিড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন এক ইতিহাসের জন্ম হল। জাপানের সঙ্গে এই প্রথম সংযোগ ঘটল ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বের। এর আগে আর কোনো মুসলিম অফিসিয়ালি জাপানের মাটিতে পা রাখেনি।
এই জাহাজের কাপ্তান ছিলেন আলি উসমান পাশা। ইয়োকোহামাতে নোঙর করার পর রাজকীয় অতিথি হিসেবে তাদের বরণ করে নেন তৎকালীন জাপানের মেইজি সম্রাটের পরিষদবর্গ। কাপ্তান উসমান পাশা এবং তার নাবিকদল জাপানে রাজকীয় অতিথি হিসেবে আপ্যায়িত হন। কিছুদিন পর তিনি জাপানের সম্রাটের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।
তিনি সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে লিখেন, ‘সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাত করে সম্মানিত বোধ করছি। তিনি যে সম্মান দিলেন, সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’
এই সৌজন্য সাক্ষাতের মাধ্যমে জাপানের মানুষ প্রথম ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারে এবং এ ধর্ম সম্পর্কে আগ্রহী হয়। বিশেষত উসমানি খেলাফত এবং তুরস্কের সঙ্গে জাপানের ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়।
এরতুগরুল জাহাজ জাপানে ৩ মাস অবস্থান করে ১৫ সেপ্টেম্বর তুরস্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। কিন্তু যাত্রা শুরু করার ৩ দিন পর জাপানের কুশিমোতো উপকূলে সামুদ্রিক টাইফুনের কবলে পড়ে। ঝড়ের কবলে পড়ে জাহাজটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। জাহাজের নাবিক ও মাল্লাদের মধ্যে ৫৫০ জন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। মাত্র ৬৯ জন নাবিক কোনোভাবে প্রাণ বাঁচাতে পারে। জাহাজের নাবিক আলি উসমান পাশা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।
পরবর্তীতে একটি জার্মান জাহাজ এবং তিনটি জাপানি জাহাজ তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। আহত নাবিকদের দ্রুত চিকিৎসা দিয়ে তাদের তুরস্কে ফেরার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। জাপানের নৌবাহিনীর কঙ্গো ও হিয়ে নামের দুটো জাহাজে তাদের তুরস্কে পাঠানো হয়।
এই ঘটনার পর তুরস্ক এবং জাপানের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পায়। এভাবেই ধীরে ধীরে তুরস্কের মুসলিম সংস্কৃতি অনুপ্রবেশ করতে থাকে জাপানের সমাজজীবনে। জাপানি নাগরিকগণ পরিচিত হতে থাকেন নতুন এক বিশ্বাসের সাথে।





