ফিলিপাইনের ম্যানিলায় দাওয়াতের কাজের সম্ভাবনা অনেক

মাসউদুল হাসান ।। ম্যানিলা থেকে ফিরে

ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় হালাল খাবারের সমস্যাটা প্রকট। কোনো হোটেলেই হালাল খাবারের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় না। মাছ জাতীয় কিছু খেতে চাইলেও হয়তো এমন এক কড়াই বা প্যানে ফ্রাই করে এনে দেবে যেখানে এর আগে শুকরের গোশত রান্না করা হয়েছে। এ জন্য খাবারের ব্যাপারে খুব সাবধান থাকতে হয়।

তিন দিনের সফরে (৯-১১ অক্টোবর) সম্প্রতি ম্যানিলার বাটলার প্যান-প্যাসিফিক হোটেলে উঠেছিলাম। সেখানে আবার একটু অন্যরকম সুব্যবস্থা আছে বলে মনে হল। হোটেল বেয়ারাদের আমি স্বতন্ত্র ব্যবস্থায় শুধু ডিম ভেজে দেয়ার কথা বললে ওরা উত্তরে বলল- ‘ও বুঝেছি, মুসলিম স্টাইল। ওভাবেই ভিন্ন প্যানে ভেজে আনব।’ শুধু ডিমভাজা খেয়েই দিন পার করেছি।

ম্যানিলার মানুষের সাধারণ আচরণ বেশ ভদ্রোচিত। ওরা হাসিমুখ এবং নাগরিক জীবনে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহিষ্ণুতার ব্যাপারে সচেতন। সুন্নতি পোশাক নিয়ে চলাফেরা করতে কোথাও কোনো সমস্যা বোধ করিনি। ওদের ইমিগ্রেশনে সুন্নতি লেবাসের মুসলিমদের প্রতি চীনের মতো কড়াকড়ি নেই।

চীনের ইমিগ্রেশনে এসব ক্ষেত্রে বেশ সমস্যা হয়। আমি সতর্কতামূলকভাবে সব সময়ই ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় খেয়াল রাখি যেন আমার গায়ের সঙ্গে কোনো মেটাল পদার্থ না থাকে। কলম, চাবি, মোবাইল সব বিচ্ছিন্ন করে রাখি। এর ফলে যেসব জায়গায় দ্বীনদার মুসলমানদের প্রতি বাড়তি দৃষ্টি ও কড়াকাড়ি করা হয়- সেসব জায়গাতেও বিব্রত হওয়া থেকে বাঁচা যায়।

ম্যানিলায় মসজিদ কম। নামাজ-ঘর আছে বিভিন্ন জায়গায়। মুসলিম তো আছেই, মিন্দানাও থেকে আগত অনেক মুসলিমও সেখানে বসবাস করে। সাধারণ থেকে নিয়ে ব্যবসাকর্মে নিয়োজিত স্বচ্ছল-সামর্থ্যবান মুসলিমও আছে।

মাদরাসা নেই বললেই চলে। মসজিদে ঢুকে কোনো সুন্নতি পোশাকের মুসলিম দেখে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে জানা যায়, তিনি হয়তো দাওয়াত ও তাবলিগের সঙ্গে যুক্ত, না হয় অন্য কোনো জায়গা থেকে কওমি মাদরাসাপড়ুয়া কেউ।

এমনিতে ম্যানিলায় সালাফি মতাদর্শী মুসলমানের সংখ্যা বেশি। শাফেয়ি মাজহাবের অনুসারীরাও সেখানে সালাফি মতাদর্শের ভেতরে হারিয়ে গেছেন। এমন অনেককে সেখানে পাওয়া যায়, যারা হালাল-হারামের মোটেই বাছবিচার করেন না। কিন্তু কথায় কথায় বলছেন, এটা বেদআত, এটা হাদীসে নেই, এটা ভুল। হালাল গোশতের ব্যাপারেও তাদের কারো কারো মাঝে মারাত্মক ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি পাওয়া যায়। তারা বলেন, অমুসলিম-প্রধান দেশে অমুসলিমরা কোনো প্রাণী জবাই করলেও সেটা খাওয়া যায়।

ফিলিপাইনের বেশির ভাগ নাগরিক জন্মগতভাবে খ্রিষ্টান। কিন্তু বাস্তব জীবনে ভোগবাদী ধর্মহীন জীবনই যাপন করে। বিশ্বাসের জায়গাটাও তাদের ওই রকমই।

এসব জায়গায় দাওয়াতের কাজ হেকমত ও মহব্বতের সঙ্গে জোরদার করলে অনেক ফায়দা হতে পারে ইনশাআল্লাহ!

পূর্ববর্তি সংবাদগ্রিসে সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ শরণার্থীর মৃত্যু
পরবর্তি সংবাদজাতীয় ঐক্যফ্রন্ট : অসম ঐক্যে সমতার সূত্র!