আল্লামা আহমদ শফীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিলেন আজিজুল হক ইসলামাবাদী

আতাউর রহমান খসরু ।।  

কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি ও হেফাজতে ইসলাম নিয়ে আবারও নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন আল্লামা আহমদ শফী। গতকাল চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আল্লামা আহমদ শফীকে দেয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চলমান রাজনীতি, কওমি স্বীকৃতি ও হেফাজত ইসলাম বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন তিনি।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি ও হেফাজতে ইসলাম দুটি ভিন্ন বিষয়। হেফাজত একটি ঈমানি আন্দোলন আর কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি আমাদের অধিকার। স্বীকৃতি দেয়াতে আমরা সরকারকে ধন্যবাদ দিয়েছি। কিন্তু তার অর্থ আমরা কওমি মাদরাসা ও হেফাজত-কোনোটাকে বিক্রি করে দেইনি।

এ সময় তিনি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হেফাজতের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

হেফাজতে ইসলামের আমির ও আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া-এর চেয়ারম্যান বর্ষীয়ান এ আলেম তার বিরুদ্ধে প্রচার করা বিভিন্ন প্রোপাগাণ্ডার প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, যারা বলছে আমি আওয়ামী লীগ হয়ে গেছি তারা মিথ্যা বলছে। আমার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যও নেই।

মূলত আল্লামা আহমদ শফী হাটহাজারী মাদরাসায় তার দেয়া একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হওয়া সমালোচনার উত্তর দিয়েছেন।

গতকালের প্রতিবাদের আগেও হেফাজতে ইসলাম ও হাইয়াতুল উলয়া গণমাধ্যমে পৃথক পৃথক বিবৃতি পাঠিয়ে আল্লামা আহমদ শফীর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যার প্রতিবাদ জানায়।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীর কাছে চলমান বিতর্ক বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলাম, কেন আল্লামা আহমদ শফীকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে হল?

জবাবে তিনি বলেন, হুজুরের একটি বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা ও অপপ্রচার চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একটি মহল তা পরিকল্পিতভাবে উস্কে দিচ্ছে। তাই হজরতকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে হয়েছে।

‘কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি ও হেফাজতের ইসলাম এক নয়’ একথার ব্যাখ্যাও জানতে চেয়েছিলাম তার কাছে। উত্তরে মাওলানা ইসলামাবাদী বলেন, হেফাজতে ইসলাম এ দেশের সর্বস্তরের মানুষের ঈমানি আন্দোলন। এর সঙ্গে গণমানুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ সংগঠনের কাজ হলো দেশ বা দেশের বাইরে ঈমান ও ইসলামের উপর আঘাত আসলে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। আর কওমি মাদরাসার কাজ দ্বীনিশিক্ষা নিশ্চিত করা।

হেফাজতে ইসলামের এ নেতা একথা বলার কারণও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আল্লামা আহমদ শফী একই সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের আমির এবং আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া-এর চেয়ারম্যান হওয়ায় অনেকেই দুটি বিষয়কে গুলিয়ে ফেলেন। তাই তিনি স্পষ্ট করে দিলেন বিষয় ‍দুটি এক নয়। দুই প্রতিষ্ঠানের নীতি ও কর্মকাণ্ডেও মিল নেই।

আল্লামা আহমদ শফী তার বক্তব্যে কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি ও হেফাজতের প্রভাব যেন কেউ নির্বাচনে ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়েও সতর্ক করেন। মাওলানা ইসলামাবাদীর নিকট প্রশ্ন করেছিলাম, আপনারা স্বীকৃতি ও হেফাজতের রাজনৈতিক ব্যবহারের আশঙ্কা করেন? করলে কাদের ব্যাপারে করেন?

উত্তরে তিনি বলেন, অনেকেই নিজস্ব এজেন্ডা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনে যুক্ত হয়। তারা তার প্রভাব-প্রতিপত্তি ব্যবহার করতে চায়। হেফাজত ও কওমি স্বীকৃতির বিষয়টিও এর বাইরে নয়। সুতরাং সতর্ক তো থাকতেই হবে। যেন কেউ আমাদের অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে না পারে। এটা ভেতরেও হতে পারে, বাইরেও হতে পারে।

প্রশ্ন ছিল, আল্লামা আহমদ শফী বলেছেন, ১৩ দফা আন্দোলন চলবে। তাহলে কি আবারও আন্দোলনে নামছেন?

‘প্রয়োজন হলে অবশ্যই নামবো। অতীতেও যখন প্রয়োজন হয়েছে আমরা মাঠে নেমেছি।’ বলেন আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

আল্লামা আহমদ শফীর আজকের বক্তব্যে সরকার অসন্তুষ্ট হতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করলে এ হেফাজত নেতা বলেন, সরকার বা কোনো পক্ষের সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির কথা চিন্তা করলে ইসলাম ও মুসলমানের সঠিক প্রতিনিধিত্ব করা যাবে না। আল্লামা আহমদ শফী তা করেনও না।

পূর্ববর্তি সংবাদহৃদরোগে আক্রান্ত মাওলানা সাঈদের জন্য দোয়া কামনা
পরবর্তি সংবাদঅবশেষে ভেঙেই যাচ্ছে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ!