মাফ করে দিন!

মুহাম্মাদ ইলিয়াছ খান  ।।  

আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগের কথা। রাসুলের প্রিয় দুই সাহাবির ঘটনা। একজন হজরত আবু জর রাযি., অন্যজন হজরত বেলাল রাযি.। একজন গোত্রের সরদার। অন্যজন হাবশী ক্রীতদাস। ইসলামের পরশে তারা ভুলে গেছেন তাদের অন্য সব পরিচয়। এখন তাদের পরিচয় একটাই। মুসলিম ভাই।

তাদের মাঝে একবার কোনো বিষয়ে তর্ক হল। একপর্যায়ে হজরত আবু জর রাগের বশে বেলালকে বলে বসলেন, বেটা! কালো ঘরের সন্তান! …

রাসুলের মহান সাহাবি হলেও তারা তো মাটিরই মানুষ। তাই মানবীয় দুর্বলতাও তাদের মাঝে ছিল। তাই রাগের বশে তিনি তাকে অশালীন শব্দ বলে ফেললেন। হজরত বেলাল রাসূলের দরবারে গিয়ে অভিযোগ করলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আবু জরকে ডেকে পাঠালেন। জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তাকে গালি দিয়েছ?

আবু জর রাযি. কোনো লুকোছাপা করার চেষ্টা করলেন না। সত্যের অকপট স্বীকৃতি দিলেন। আবু জর বললেন, হ্যাঁ’।

রাসুল আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তার মায়ের কথা উল্লেখ করে …?

এবারো আবু জর রাযি. অস্বীকার করলেন না। দোষ মাথা পেতে নিয়ে সরল স্বীকারোক্তি দিলেন, আল্লাহর রাসুল! কেউ কাউকে গালি দিলে তো বাবা-মায়ের নাম নিয়েই গালি দেয়!

রাসুল এবার বললেন, আবু জর! তোমার মাঝে তো জাহেহি যুগের প্রভাব রয়ে গেছে।’

রাসুলের ছোট্ট কথাটি আবু জরের মনে বড় ধাক্কা দিল। তার চেহারার রঙ পাল্টে গেল।

তিনি বললেন, এই বার্ধক্যের সময়ও আমার মাঝে জাহেলিয়াত রয়ে গেছে?

রাসুল বললেন, হ্যাঁ।

তিনি অনুতপ্ত হলেন। ভাবছেন, জীবনের এত দীর্ঘ সময় ইসলামের ছায়ায় কাটানোর পরও সেই নিন্দিত জাহেলিয়াত আমার মাঝে রয়ে গেল! অনুতাপের ভার মাথায় নিয়ে বসে আছেন রাসুলের সামনে।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আবু জরকে অধীনস্থ ও অপেক্ষাকৃত ছোটদের সঙ্গে আচার-আচরণের ক্ষেত্রে কিছু উপদেশ দিলেন।

কোমল ভাষায় রাসুল বললেন, শোনো, তোমাদের অধীনস্থরা তোমাদের ভাই, আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করেছেন। অধীনস্থ ভাইয়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। তুমি যা খাবে তাকেও তা খাওয়াবে। তুমি যে মানের কাপড় পরিধান করবে তাকেও সে মানের কাপড় পরতে দেবে। সাধ্যাতীত কাজের বোঝা তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে না। কাজ করতে কষ্ট হলে নিজে তাকে সহায়তা করবে।’

রাসুলের মায়াভরা উপদেশ শুনে আবু জর আরো বিগলিত হলেন। অনুতপ্ত হলেন। নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে ছুটে গেলেন হজরত বেলালের কাছে। নতজানু হয়ে বেলালের সামনে মাটিতে বসে পড়লেন। ক্ষমা প্রার্থনা করলেন।

নত হতে হতে নিজের চেহারা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন, যেন মাটির সঙ্গে মিশে যেতে চাইছেন! এরপর যা করলেন তা শুধু রাসুলের সাহাবিগণই করতে পারেন। ইতিহাসে এমন ঘটনার খুব একটা পুনরাবৃত্তি ঘটেনি।

অনুতপ্ত অবনত আবু জর বললেন, বেলাল! আপনার পা দিয়ে আমার মুখ মাড়িয়ে দিন! আপনার পদধূলি আমার চেহারায় লাগিয়ে দিন! (সূত্র: সহিহ মুসলিম: ১৬৬১)

এমনই ছিল সাহাবিদের অবস্থা। কারো সঙ্গে মনোমালিন্য হলে তা দীর্ঘায়িত না করে কত দ্রুত শেষ করে ফেলতে সচেষ্ট ছিলেন তারা।

আমাদের জীবনেও এমন ছোটখাট ব্যাপার ঘটে থাকে। কারো সাথে রাগ বা কটু কথা হয়ে যায়। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়। এসব ক্ষেত্রে আমরাও যদি একটি শব্দ বলতে শিখি তাহলে হয়ত অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে। ভুল হয়ে গেছে, মাফ করে দিন।

পূর্ববর্তি সংবাদইংল্যান্ডে বেড়েছে মুসলিমবিদ্বেষী অপরাধের হার
পরবর্তি সংবাদদেয়ালিকা আঁকা থাকে স্বপ্নের রঙে