সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর ।।
টোকিও সেন্ট্রাল মসজিদের আশপাশের রাস্তাগুলোতে প্রায়ই এক বয়োবৃদ্ধ লোককে দেখা যায়। গায়ে সাদা ধবধবে লম্বা জামা আর মাথায় সাদা রুমাল ঝুলিয়ে তিনি টোকিওর পথচারীদের কাছে বিতরণ ছোট ছোট লিফলেট। পথচারী কেউ সেগুলো নিয়ে পড়ছে, আবার কেউ তার এমন আজানুলম্বিত সাদা পোশাক দেখে হেসে চলে যাচ্ছে। বৃদ্ধ তবু বিলি করতে থাকেন লিফলেট। জাপানের রাজধানী টোকিওর মানুষের কানে কানে পৌঁছে দেন ইসলামের দাওয়াত।
অশতীপর এই বৃদ্ধের নাম শায়খ নেয়ামাতুল্লাহ খলিল ইবরাহিম। জন্মেছিলেন তুরস্কের আমাসায়া অঞ্চলে ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে। ছোটবেলায় বাবার কাছে দীক্ষা নেন ইসলাম প্রচারের। তুরস্কের অনেক আলেম ও দাঈর সংস্পর্শে আসার সুযোগ পান বাবার মাধ্যমে। অল্প বয়সেই তিনি ইসলামের বিভিন্ন জ্ঞান ও প্রজ্ঞা আয়ত্ত করতে সমর্থ হন।
১৯৫৫ সালে তার বয়স যখন কেবল ২৩ বছর, তখন তিনি ইস্তাম্বুলের অন্যতম প্রাচীন সুলতান আহমদ মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে সেবাদানের সুযোগ পান। দীর্ঘদিন এ মসজিদে সেবাদানের পর তিনি তুরস্কের বিভিন্ন মসজিদে ইমাম ও ইসলাম প্রচারক হিসেবে কাজ করেন।
ইসলাম প্রচারে তিনি তার পুরোটা জীবন উৎসর্গ করেন। গত শতাব্দীর আশির দশকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন জাপানে ইসলাম প্রচারের। পুরো পরিবার নিয়ে তিনি জাপানে চলে আসেন।

তুর্কিভাষা ছাড়াও আরবি, উর্দু, ফার্সি, ইংরেজি, জাপানি, চাইনিজ ভাষায় কথা বলতে পারা শায়খ নেয়ামাতুল্লাহ জাপানের টোকিওতে যখন ইসলামের দাওয়াত নিয়ে আসেন, তখন টোকিওর মানুষ ইসলাম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতো না। ছিল না কোনো মসজিদ বা ইসলামিক সেন্টার।
শায়খ নেয়ামাতুল্লাহ নতুন উদ্যম নিয়ে টোকিও শহর চষে বেড়াতে থাকেন। মানুষকে শোনাতে থাকেন ইসলামের আহ্বান। ধীরে ধীরে তার প্রচেষ্টায় টোকিওতে গড়ে ওঠে একাধিক মসজিদ। তিনি টোকিওর হাজার হাজার মানুষের কানে পৌঁছে দিয়েছেন কালেমার দাওয়াত। শত শত মানুষ তার হাতে ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হয়েছে।
প্রতিদিন তিনি ইসলামের দাওয়াত সম্বলিত লিফলেট নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। যারা তার কথা শুনে আগ্রহী হয় তাদের তিনে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন মসজিদে। প্রতি রাতে তিনি টোকিওর একাধিক মসজিদে যান মানুষদের আল্লাহর পথে ডাকতে। তিনি নিজ খরচে ট্যাক্সি ভাড়া করে মানুষদের নামাজের জন্য মসজিদে নিয়ে আসেন। মসজিদই যেন তার ঘর-বাড়ি।

প্রায় নব্বুই বছর বয়সী শায়খ নেয়ামাতুল্লাহর দাওয়াতি কার্যক্রম এখনও থেমে নেই। শুধু টোকিও নয়, কালেমার দাওয়াত নিয়ে প্রায়ই তিনি চলে যান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। দ্বীন প্রচারের জন্য তিনি বিশ্বের প্রায় ৫৫টি দেশ সফর করেন। মানুষের মাঝে পৌঁছে দেন ইসলাম ও ভালোবাসার বাণী।
তিনি তার দোয়ার মধ্যে প্রায়ই বলে থাকেন :
‘হে আল্লাহ, তুমি ইসলামের শত্রুদের হেদায়েত দান করো। তাদের শত্রুতাকে ভালোবাসা এবং ইসলামের শক্তিতে রূপান্তরিত করে দাও। যেমন নাকি তুমি উমর, খালিদ এবং ইকরামা রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে করেছিলে।

