ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী ।।
জামাল খাশুকজি। তুর্কি বংশোদ্ভূত সৌদি লেখক ও সাংবাদিক। গত ২রা অক্টোবর ১৮ তে ইসতাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে গিয়ে নাকি হারিয়ে গেছেন।
এ সব বেশ পুরোনো খবর। নতুন খবর হলো―তাকে খুন করা হয়েছে। কোথায়? এই সৌদি দূতাবাসে। কে খুন করেছে? দৃশ্যপটে খুনি হিসাবে যাদের দেখানো হচ্ছে তারা―১ ও ২অক্টোবর দুটি প্রাইভেট বিমানে করে উড়ে-আসা পনেরো জনের একটি ঘাতক দল। এ ছাড়া আরও জড়িত আছে বলে প্রবল ধারণা করা হচ্ছে সৌদি দূতাবাসের স্থানীয় কর্মকর্তারা। এ সবও এখন অনেকটা বাসি খবর। তাজা খবর কী তাহলে?
তাজা খবর হলো―সৌদি রাজতন্ত্র বারবার অস্বীকার করার পর এখন স্বীকার করছে যে, তারাই সৌদি দূতাবাসের ভেতরে খাশুকজিকে হত্যা করেছেন! কিন্তু হত্যা করার ইচ্ছে ছিলো না। কর্মকর্তাদের সাথে খাশুকজি যখন হাতাহাতি শুরু করে দিলেন, তখন তাকে হত্যা না করে কোনো উপায় ছিলো না! … আহা, কী দারুণ যুক্তি!
লাশ কোথায়? কীভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে? এ ব্যাপারে বিবৃতি নীরব! …
মনে করা হচ্ছে―খাশুকজিকে একটি করাত দিয়ে চিরে-চিরে টুকরো-টুকরো করা হয়েছে―যখন তিনি জীবিত!! যখন তিনি আরশ-কাঁপানো কণ্ঠে চিৎকার করছেন!! চিৎকার অবশ্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে―ঘাতকের মিউজিক শুনতে সমস্যা হওয়ার কারণে! আরও ধারণা করা হচ্ছে― তারপর অজানা কোনো স্থানে তাকে ফেলে দিয়ে আসা হয়েছে। জঙ্গলে বা কূপে। কিন্তু সেকথা এখন স্বীকার করা হচ্ছে না।

দূতাবাসের ভেতরে হত্যাকাণ্ড সঙ্ঘটনের দায় যেহেতু এর মাঝেই স্বীকার করা হয়েছে, মনে হচ্ছে― লাশ কোথায়, কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাও স্বীকার করতে হবে! দুদিন আগে কিংব পরে! যদিও বিষয়টা তখন আরও লেজে-গোবরে হয়ে যাবে! কিন্তু নতুন ফেরাউনদের মাথায় এসব ঢুকছে না। নিজেদের অপকর্ম লুকোতে এখন তারা একমিথ্যা ঢাকছে―শতোমিথ্যা দিয়ে।
কিন্তু মিথ্যা কি ঢেকে রাখা যায়?
মহাফেরাউন কোন্ মিথ্যাটাকে ঢাকতে পেরেছিলো?
এই খবরগুলোও এখন পুরোনো! না-বললেও পারতাম। না-লিখলেও চলতো। কিন্তু দায় এড়ানো যাচ্ছে না। বিবেকের দংশন তো থামছে না। ভেতর থেকে শুধু আওয়াজ আসে― কিছু তো বলো! কিছু তো লিখো! চুপ করে আছো কেনো?! খাশুকজিদের প্রতি কোনো দরদ ও মায়া কি অনুভব করো না? …
একটু কল্পনা করুন― জীবন্ত মানুষকে করাত দিয়ে চির-চির করলে কেমন লাগতে পারে! চোখে পানি এসে যায় না?! ঈমানী গায়রত কথা বলে ওঠে না?!
কসাইয়ের বাচ্চা ওই কসাইটা কে? যে এমন নিষ্ঠুরতায় খাশুকজিকে চির-চির করেছে? ও নাকি সৌদি এক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ। ময়নাতদন্ত করতে করতে যার হাত বেশ পেকেছে। তাই তাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রভুদের খুশি করতে করাত নিয়ে সে হাজির হয়েছে। নাকি প্রভুরাই করাত নিয়ে আসতে বলেছে?
সবই তো তাহলে পূর্ব পরিকল্পিতই মনে হচ্ছে? শুধু শুধু মল্লযুদ্ধের উদ্ভট অযৌক্তিক কাহিনী ফাঁদার কী দরকার ছিলো? …
জালিম ও জুলুম অস্থায়ী। শুধু একটু সমালোচনার জন্যে যারা নিজদেশের একজন নামী-দামী পদস্থ ভদ্র ও সজ্জন নাগরিককে জীবন্ত হত্যার প্রতিজ্ঞা করতে পারে―তাদেরকে জাহেলি যুগে জীবন্ত কন্যশিশু হত্যাকারীদের সাথে তুলনা করলে কি ভুল হবে? … নাকি মহাফেরাউনের সাথে তুলনা করলে বেমানান হবে?
নবীর দেশের বাদশা সেজে কেনো এই ফেরাউনী? কে তুমি হে যুবরাজ―পর্দার গায়ে আঘাত করছো?
পবিত্র ভূমিতে নিওমসিটি (আধুনিক বেশ্যালয়) খোলার আয়োজনে মেতে উঠেছো?
ধরে ধরে আলেম-উলামা জেলে পুরছো? অসহায় করছো অসংখ্য শিশুকে―ইয়েমেনে?
শুধু অস্ত্র ও ক্ষমতার ঝলক দেখাতে? ইসরাঈলের হাতে তুলে দিতে চাইছো আলকুদস―আলআকসা?
এই ‘নাপাক’ তুমি হতে চাও আগামীদিনের খাদিমুল হারামাইন?
ছি! হটে যাও! তোমাকে মানি না আমরা! যতোই ঢাকতে চাও, পারবে না―খাশুকজির রক্তে হাত তোমার লাল!
এই লালই হবে তোমার কাল! অপেক্ষা করো, আমরাও অপেক্ষা করছি!
