যিয়াদ বিন সাঈদ ।।
আজকাল ভোরে ঘুমকে খুব বেশী প্রশ্রয় দিতে ইচ্ছে করে না। এড়িয়ে চলি। কড়া লিকারে আধাকাপ চা খেয়ে বেরিয়ে পড়ি। হাঁটি। রিকশায় চড়ি। সুখী মানুষের মতো পায়ে পা তুলে। হেলতে হেলতে। দুলতে দুলতে।
আজকে গেলাম লালবাগের ওইদিকটায়। বন্ধু লাবীবের সঙ্গে ঘুরলাম। কেল্লায় বসে থাকলাম কিছুক্ষণ। প্রাতভ্রমণের সময় ফুরিয়ে এলে বেরিয়ে এলাম।
কিন্তু রোজ সকালে এই যে ‘ঢাকা’য় ঘুরেফিরে চলছি, এরই মাঝে আমার ভেতর একটা কৌতূহল বারেবারেই উঁকিঝুঁকি দেয়। ‘ঢাকা’ নামটা কোত্থেকে এলো? এর ওয়াজহে তাসমিয়াটা (নামকরণের কারণ) কী আসলে? এইরকম নামকরণের পেছনে ওয়াজাহ তো আছে নিশ্চয়ই, কী সেটা?
এ নিয়ে দেখলাম বেশ আলাপ আছে। মতপার্থক্য আছে। উইকিপিডিয়াসহ বেশ ক’ জায়গায় খুঁজলাম এর পেছনের রহস্য। এক এক করে বলি।
ঢাকা শহরের আয়তন ঠিক কতটুকু হবে তা নির্ধারণের জন্যে বুড়িগঙ্গায় সুবাদার খাজা ইসলাম খাঁ চিশতী তার রাজকীয় বজরায় ডঙ্কাপেটা করলেন। এ আওয়াজ যতটুকু শোনা যাবে, ততটুকুই হবে ঢাকার আয়তন। পোস্তগোলা থেকে হাজারীবাগ অপরদিকে জিঞ্জিরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আওয়াজ স্পষ্টতই শোনা গেল। যেহেতু ঢাকার আয়তন নির্ণয়ের জন্যে ঢাক পেটানো হয়েছিল তাই একদল ঐতিহাসিক বলতে চাচ্ছেন যে এর নাম ঢাকা হওয়ার এটাই আসল কারণ।
এ বর্ণনা অমূলক বলেই মনে হয়৷ কেননা যখন নৌকার ডঙ্কা পেটানো হয় এবং যুদ্ধের ঢেরা পেটানো হয়, তার বহু শতাব্দী আগ থেকেই এর নাম ছিল ঢাকা। তা ছাড়া সেদিন আয়তন নির্ণয়ে পেটানো হয়েছিল ডঙ্কা বা ঢেরা, ঢাক কিন্তু নয়।
কোনো কোনো ঐতিহাসিক কল্পনাপ্রসূত এ কথাও বলতে চেয়েছেন যে সে সময় ঢাকায় প্রচুর ঢাক গাছ ছিল, সে কারণে শহরটির নাম ঢাকা হয়ে গেছে। কিন্তু আজকের ঢাকায় তো ঢাকগাছ বলতে কিছুই দেখা যায় না। একটি গাছও নেই কেন? এসবের কোনো মানে নেই বলেই মনে হয়। নিছক অমূলক গালগল্প।
আরেক দল বলতে চান ঢাকা এসেছে ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে। সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণের সময় সন্নিহিত জঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার একটি মূর্তি খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ওই এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর মূর্তি ঢাকা বা আবৃত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো, তাই রাজা বল্লাল সে, মন্দিরের নাম রাখেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে এ শহর প্রসিদ্ধি পেয়ে গেছে ঢাকা নামে।
এ বক্তব্য সঠিক হবারও কোনো কারণ নেই। কেননা একটি শহর আবাদ হবার পরই এ শহরে বসবাসরত মানুষেরা এ ধরনের নাম দিয়ে থাকেন। যেমনটা দিল্লিশ্বরী, ভারতেশ্বরীর ক্ষেত্রে দেখা যায়। এখানে দিল্লি আগে, ভারতও আগে; এরপর যুক্ত হলো ঈশ্বরী। তাহলে ঢাকা আগে, এরপরই নিশ্চিত যুক্ত হয়েছে ঈশ্বরী।
তো স্পষ্ট করেই বলা যায়, ঢাকার কোনো কোণে ভক্তের নির্মিত মন্দিরই ঢাকেশ্বরী। অর্থাৎ ‘ঢাকেশ্বরী’ থেকে ঢাকা নয়।
তাহলে ঢাকা এলো কোত্থেকে?
হ্যাঁ। ‘ঢাকা’ শব্দটি শাসক আফগানদের কাছ থেকে আসা একটি নাম। এর অর্থ হলো, প্রতিরক্ষা সেনা চৌকি। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিরক্ষামূলক কৌশলগত জনপদ এই ঢাকা। এরপর কালক্রমে নানান পরিচয়ে ঢাকা পরিচিত হয়ে উঠেছে জনমানসে। আত্মপ্রকাশ করেছে নানা ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় ঔজ্জ্বল্য নিয়ে।
![](https://www.islamtime24.com/wp-content/uploads/2021/03/20210308_200803-scaled.jpg)