এথেন্সে ইসলাম চর্চা চলছে যেভাবে

গ্রিসের এথেন্সের একটি মসজিদ

মাওলানা ছফিউল্লাহ ।। এথেন্স থেকে

ইউরোপের দেশ গ্রিসের রাজধানী এথেন্স। বেশিরভাগই খ্রিস্টান। মুসলমানের সংখ্যা সামান্য। গত কয়েক বছর ধরে সেখানকার ওলামায়ে কেরাম ও দীনদার মুসলমানদের উদ্যোগে কিছু দীনি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এথেন্সে ইসলাম চর্চা ও শেখার জন্য তেমন মসজিদ-মাদরাসা নেই। পুরো এথেন্স জুড়ে মসজিদ আছে ৮৩ টি। এরমধ্যে মাত্র ৩টি মসজিদ ওয়াকফ করা। এখানে বলা হয়, বুনিয়াদী মসজিদ। বাকিগুলো ভাড়া বাড়িতে অবস্থিত।

মসজিদে আলজাব্বার। এথেন্সের প্রথম ওয়াকফ মসজিদ। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশি এক আল্লাহওয়ালা আলেম মাওলানা মাহাবুব এটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু হয় একটি ভাড়া বাড়িতে। পরে এই মাওলানা মাহবুব ইতালি যান। সেখানেও তিনি একটি বড় মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। ওই মসজিদের নাম মসজিদে কুবা। কয়েক বছর আগে মাওলানা মাহাবুব বাংলাদেশে ফিরে যান। ২০০৬ সালে এথেন্সের বাংলাদেশি ওলামায়ে কেরাম ও দীনদার মুসলমানগণ আলজাব্বার মসজিদটি জায়গাসহ কিনে নেন। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যে। বর্তমানে এথেন্সে কোনো মুসলমান মারা গেলে তার গোসল কাফন ও জানাযা- এসব ব্যবস্থা করা হয় আলজাব্বার মসজিদে।

এথেন্সে বসবাসরত কয়েকজন আলেম ২০০৪ সালে আলজাব্বার মসজিদের পাশে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মাদরাসা দারুল উলুম। আলজাব্বার মসজিদের মতো এটিও এথেন্সের প্রথম মাদরাসা। বর্তমানে এটির পরিচালক আলজাব্বার মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি আবু বকর সিদ্দিক। এথেন্সে বসবাসকারী আবদুল ওয়াদুদ এ মাদরাসার প্রথম ছাত্র। এ বছর সে ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসায় দাওরায়ে হাদিস পড়ছে।

২০০৪ সাল থেকে মাদরাসাটি মুসলিম শিশুদেরকে দীনি তালিম প্রদান করে আসছে। এথেন্স ছাড়াও পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন আরব দেশের শিশুরা মাদরাসাটিতে পড়ছে। কয়েকটি ছেলে নিজ উদ্যোগে কোরআন শরীফ মুখস্থ করা শুরু করে দিয়েছিল। তাদের কারো ১১ পারা, কারো ৫ পারা করে মুখস্থ। এতদিন এখানে কোনো হেফজখানা ছিল না। সম্প্রতি (২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার) মাদরাসা দারুল উলুমে কোরআন শরীফ হেফয করার জন্য চালু করা হয় তাহফিজুল কোরআন বিভাগ। এ ছাড়া কর্মব্যস্ত মানুষ ও বয়স্করা যেন দীনি শিক্ষা অর্জন করতে পারে সেজন্য রয়েছে একটি নৈশ মাদরাসা বিভাগ। সেখানে তাদেরকে ইসলামের জরুরি বিষয়, মাসয়ালা-মাসায়েল এবং কোরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শেখানো হয়।

আরেকটি মসজিদ মসজিদে উসমান। এথেন্সের দ্বিতীয় ওয়াকফ মসজিদ। এটি অবস্থিত কাতোপাতিসিয়ায় । এথেন্সের মধ্যেই। কয়েকজন বাংলাদেশী মসজিদটি জায়গাসহ কিনে ওয়াকফ করে দেন। গত বছর (২০১৭) রমযানের আগে মসজিদের পাশে তারা একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মাদরাসা উসমান।

গ্রিসের মুসলমানদের দীনি পরামর্শ ও রাহনুমায়ির জন্য ওলামায়ে কেরামের একটি বোর্ড আছে। এটিকে ওলামা শুরা বলা হয়। এটির বর্তমান আমির মুফতি ফজলুল হক। গ্রিসবাসীর জন্য ওলামা শুরা নামায, ইফতার ও সাহরির জন্য একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করেছেন। বাতিল কোনো ফেরকা যেন সেখানে মাথাচাড়া দিতে না পারে এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম কাজ করছেন। কাদিয়ানি ও শিয়া ফেতনা যেন না ছড়ায় এ ব্যাপারে তারা সজাগ আছেন। গ্রিসের মুসলমানদের ইমান-আমল হেফাযত এবং দীনি শিক্ষা অব্যাহত রাখার জন্য সেখানকার ওলামায়ে কেরাম বিভিন্নমুখী মেহনত করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিজেদের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ কমিউনিটি। এটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জনাব আবদুল কুদ্দুস, ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব মুহাম্মদ হাসান। এথেন্সের উলামা শুরার পরামর্শে বাংলাদেশ কমিউনিটির কর্মকর্তাগণ প্রতিবছর ঈদের সময় নামাযের ব্যবস্থা করেন। গ্রিসের মুসলমানরা ঈদের নামায একসঙ্গে মাঠে আদায় করেন।

দাওয়াত ও তাবলিগের কাজও এই এথেন্সে চলছে বেশ গতির সঙ্গে। এখানে আলেম ও তাবলিগের সাথীরা মিলিতভাবে মেহনত করছেন। প্রতিবছর বার্ষিক ইজতেমা হয়। ইজতেমায় জমায়েত হয় প্রায় চার-পাঁচ হাজার মানুষ। তাবলিগ জামাতের বর্তমান সংকটের কারণে কোনো কোনো দেশে তাবলিগের সাথীদের মধ্যে যে ফাটল ও বিবাদ দেখা দিয়েছে, এথেন্সে এমনটা হয় নি। এখানকার সাথীদের মধ্যে কোনো বিরোধ ও বিভেদ নেই। সবাই ওলামায়ে কেরামের সঙ্গে আছেন। ওলামায়ে কেরামের মাশওয়ারা ও রাহনুমায়িতে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ আনজাম দেওয়া হচ্ছে।

গ্রিস ইউরোপের একটা দেশ। সে দেশের রাজধানী এথেন্স। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ খ্রিস্টান। এখানে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে যাওয়া একটা মামুলি বিষয়। আশঙ্কার কথা হচ্ছে, দেশটাতে এখন অনেক আরব আসছে। বিশেষ করে বিধ্বস্ত ইরাক ও সিরিয়া থেকে। তাদের অনেকে খ্রিস্টান হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে এসেও যারা অনেক বছর আগ থেকে সেখানে থাকছে, তাদের কেউ কেউ খ্রিস্টান হয়ে গেছে।

বর্তমানে এথেন্সের বাংলাদেশি আলেমরা এ বিষয়টা সামনে রেখে তাবলিগি ভাইদের সঙ্গে নিয়ে মেহনত করছেন। ওলামায়ে কেরাম ও দীনদার মুসলমানরা চেষ্টা করছেন আরও কিছু মসজিদের জায়গা কেনার জন্য। মুসলমানরা যেন দীনের ওপর টিকে থাকতে পারে , তাদের ইমান-আমলের যেন হেফাযত হয়, সেজন্য মুসলিম বাচ্চাদের ইসলাম শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এখানকার ওলামায়ে কেরাম মসজিদ-মাদরাসা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সার্বিকভাবে বাংলাদেশি ওলামায়ে কেরাম ও দীনদারদের কার্যক্রম এথেন্সে দিন-দিন বাড়ছে।

গ্রন্থনা : সাদ আবদুল্লাহ মামুন

পূর্ববর্তি সংবাদপুরানা পল্টনের নতুন বেলা
পরবর্তি সংবাদসিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে বিপুল সমাগম