ক্যালিগ্রাফির সৌন্দর্য সড়কদ্বীপে আলো ছড়াক

আবু তাশরীফ ।।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের সামনের যে সড়কদ্বীপ-সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে আরবি আল্লাহু শব্দের একটি ক্যালিগ্রাফি। নান্দনিক অঙ্কন ও নির্মাণ। এই সড়কদ্বীপটির ঠিক উল্টো পাশে হজ্ব ক্যাম্প। মুসলিম-প্রধান একটি দেশের রাজধানীর জন্য এটি অত্যন্ত শোভন ও প্রাসঙ্গিক একটি শিল্পকর্ম ও প্রতীক। কিন্তু এই ক্যালিগ্রাফি ভাস্কর্যটিই যত্ন ও ঝাড়মোছের অভাবে সব সময় পড়ে থাকে ধুলিমলিন চেহারায়। এদিকে চোখ দেওয়ার মতো মহানগর কর্তৃপক্ষ কিংবা সিটি করপোরেশনের কেউ কি নেই?

ক্যালিগ্রাফি শিল্পী আরিফুর রহমান জানালেন, এই শিল্পকর্মটি ক্যালিগ্রাফি-শিল্পী সাইফুল ইসলামের। এই সড়কদ্বীপটি হচ্ছে বাংলাদেশ প্রবেশের পর প্রথম দরজার মতো। বিমানবন্দরের প্রথম মোড়। এখানে দুই হাজার ছয়-সাত সালের দিকে লালনের একটি মূর্তি বসানোর পরিকল্পনার কথা প্রকাশ হয়। তুমুল আন্দোলনের মুখে মূর্তি-ভাস্কর্য সরিয়ে এই ক্যালিগ্রাফিটি তখন স্থাপন করা হয়। বিমানবন্দর ও হজক্যাম্পের মিলনপথে এমন শিল্পকর্মের প্রাসঙ্গিকতাই ছিল তখনকার আন্দোলন, আলোচনা ও সিদ্ধান্তের মূল বিষয়।

শিল্পী আরিফুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ঢাকার কোনো সড়কদ্বীপে ক্যালিগ্রাফির আদলে ভাস্কর্য এটাই সম্ভবত প্রথম । এরই মধ্যে তেজগাঁও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের সড়কদ্বীপে একটি দৃষ্টিনন্দন ক্যালিগ্রাফি স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে কোনো কোনো বিভাগীয় শহরে দুয়েকটি থাকতে পারে। তবে তিনি মনে করেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহরের নানা প্রান্তে এ জাতীয় ক্যালিগ্রাফি স্থাপন করা যায়। এতে জনমনে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে এবং সুস্থ সংস্কৃতির চর্চাটা আরও বেগবান হবে।

পরিচর্যার অভাবে ঝোপঝাড় ছেয়ে গেছে। ধুলোর আস্তর পড়ে আছে পাশের দেয়ালে। নগর কর্তৃপক্ষের কেউ কি নেই দেখার?

সম্প্রতি নানা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে ঢাকা শুধু নয়, প্রায় সারা দেশেই বিভিন্ন পথের মোড়ে মূর্তি বা মানব-ভাস্কর্য বসানো হচ্ছে। একটি মুসলিম প্রধান দেশের সংস্কৃতির জন্য এটা যে মানানসই নয় সে কথা বারবার বলছেনে দেশের আলেম সমাজ ও ঐতিহ্যবাদী সংস্কৃতি বোদ্ধামহল। কিন্তু এসব আলোচনার প্রতি মোটেও ভ্রক্ষেপ করছেন না মূর্তিসংস্কৃতির অনুরাগীরা। কখনো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়, কখনো কোনো কর্পোরেট হাউজের সহায়তায় মানব-ভাস্কর্য দিয়ে ভরে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন রাস্তার মোড়। আর এর সবই করা হচ্ছে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও নগর-সৌন্দর্য-এর নামে। বোদ্ধারা বলছেন, শতকরা ৮৫ ভাগ মুসলিমের দেশে সাংস্কৃতিক পথচলায় এ জাতীয় কাজ মারাত্মক ভুল পদক্ষেপ। বরং এসব ক্ষেত্রে উপযোগী হচ্ছে, ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে, ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল কোনো কিছু স্থাপন বা প্রতিষ্ঠা করা। আর সেজন্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে ক্যালিগ্রাফি স্থাপন একটি যথাযথ পদক্ষেপ হতে পারে।

আরিফুর রহমান জানান, তিনি ইরান ও ইস্তাম্বুলের রাস্তায় ক্যালিগ্রাফি দেখেছেন। জানা গেছে, কুয়ালামপুর ও জেদ্দাতেও এ রকম ক্যালিগ্রাফি রয়েছে। রয়েছে আরব দেশগুলোসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশেই। যেখানে কুরআন শরীফের একটি আয়াত, একটি দোয়া, হাদীসের একটি বাণী কিংবা ইসলামি ঐতিহ্যের কোনো শব্দ উৎকীর্ণ হয়ে আছে। অথচ আমাদের ঢাকা-চট্টগ্রামের রাস্তার মোড়ে কিংবা দর্শনীয় স্থানে এমন ক্যালিগ্রাফি নেই! বরং নতুন করে ভাস্কর্য-এর নামে মূর্তি স্থাপনের হিড়িক পড়ে গেছে।

Image may contain: Arifur Rahman, beard
শিল্পী আরিফুর রহমান

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণের ফাঁকা জায়গায় এ জাতীয় ক্যালিগ্রাফি স্থাপনের জন্য প্রায় চার বছর আগে কয়েক জন ক্যালিগ্রাফি-শিল্পীর কাছ থেকে ডিজাইন আহ্বান করা হয়েছিল। মূল ক্যালিগ্রাফির ডিজাইন এবং স্থপতিদের পরামর্শ ও প্রস্তাবিত ব্যায়ের ধারণাসহ তারা তাদের কাজ জমা দিয়ে রেখেছেন। এখনো সেই কাজ বাস্তবায়নের কোনো খবর নেই। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড কেন্দ্রীয় অফিসের প্রবেশপথে টেরাকোটার কাজে কুরআন শরীফের একটি আয়াতের ক্যালিগ্রাফি স্থাপন করেছে। কাজটি শিল্পী আরিফুর রহমানের।

নগর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ক্যালিগ্রাফির সুন্দর ব্যবহার রুচি, ঐতিহ্য ও সুস্থ সংস্কৃতির চর্চাকে এগিয়ে নিতে পারে। এ জন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে, পথের মোড়ে মোড়ে এ-জাতীয় ক্যালিগ্রাফি স্থাপন হতে পারে অনেক শোভন ও উপযোগী উদ্যোগ। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসতে পারে। একইসঙ্গে খুবই দরকারি একটি বিষয় হচ্ছে, এ জাতীয় পবিত্র ও ঐতিহ্যপূর্ণ ক্যালিগ্রাফি স্থাপনের পর যেন তার অমর্যাদা ও অযত্ন না হয়- সেদিকেও সার্বক্ষণিক মনোযোগী চোখ রাখা।

পূর্ববর্তি সংবাদজাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সংযত হওয়ার পরামর্শ দিলেন প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদহবিগঞ্জে ড. আহমদ আবদুল কাদেরের সংবাদ সম্মেলন