উত্তরার গ্রাম-শহর

দিয়াবাড়ির কাশবন

শাহ মুহাম্মাদ খালিদ ।।

সারা সপ্তাহ কর্মব্যস্ততার মাঝে কাটিয়ে সপ্তাহান্তে আমরা একটু অবসরের রসদ খুঁজি। ছুটির দিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময়ে ঢাকা বা আশপাশের যেসব জায়গা থেকে সহজে ঘুরে আসা যায় সেদিকেই মানুষের আগ্রহ থাকে বেশি। বিশেষত রাজধানী ঢাকায় জনসংখ্যার তুলনায় দর্শনীয় বা অবসর কাটানোর মতো স্পট কম হওয়ায় মানুষ ‘এর বাইরে আরও কিছু’র খোঁজ করে। সেই বিবেচনায় উত্তরা এবং তার আশপাশের এলাকা সহজেই থাকতে পারে আপনার তালিকায়।

ঢাকা শহর বিশ্বের সবচেয়ে বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান দখল করলেও ঢকার মধ্যেই পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা উত্তরা এলাকা যেন খানিকটা হলেও সেই বদনাম ঘুচাতে চেষ্টা করছে ।নান্দনিক ডিজাইনের সারি সারি ভবন, প্রশস্ত পিচঢালা পথ আর সাধ্যের মধ্যে বৃক্ষরাজির সবুজায়নে ঢাকার আর দশটা এলাকা থেকে সহজেই উত্তরাকে আলাদা করা যায়। প্রতিটি সেক্টরেই রয়েছে পূর্ব পরিকল্পিত পার্ক ও কেন্দ্রীয় মসজিদ। কেন্দ্রীয় মসজিদগুলো বেশ প্রশস্ত ও কারুকাজময় হওয়ার পাশাপাশি এখানকার খতিবরাও জুমাপূর্ব বয়ানে অত্যন্ত চমৎকার আলোচনা করে থাকেন।

আজকে আমরা উত্তরার তিনটি স্পটের কথা তুলে ধরব যেখানে কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়ে আপনি অনায়াসেই ঘুরে আসতে পারেন। পরিবেশ দূষণ, শব্দদূষণ আর কাজের ঝক্কিঝামেলার বাইরে বেরিয়ে গ্রহণ করতে পারেন একটুখানি স্বস্তির শ্বাস।

দিয়াবাড়ি
দিয়াবাড়ি এখন ঢাকার একটি পরিচিত নাম। এখানকার নির্মল বাতাস, খোলামেলা পরিবেশ আর শরতের রাশি রাশি কাশফুল সহজেই আকৃষ্ট করে ভ্রমণ পিয়াসু মানুষদের। দিয়াবাড়িকে উত্তরার মতো বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে যেটাকে সহজে বর্ধিত উত্তরা বলা যেতে পারে। সুতরাং এই যে দৃষ্টি ছড়িয়ে দেওয়া খোলামেলা পরিবেশ আর রাশি রাশি কাশফুল— ক’বছরের মাথায় যখন এখানে কংক্রিটের আকাশছোঁয়া ইমারত গড়ে ওঠবে তখন স্বস্তিতে শ্বাস ফেলার এই জায়গাটুকুও ঢাকাবাসী হারাবে। ফলে দিয়াবাড়ি যাওয়ার শেষ সময় মূলত এখনই।
টঙ্গীর আগে হাতের বামে উত্তরা হাউজ বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে তিন কি.মি. পশ্চিমে দিয়াবাড়ির অবস্থান। এখান থেকে লেগুনা, বাস বা রিকশায় যেতে পারেন দিয়াবাড়ি।

বিমানবন্দরে অবতরণ করছে বিমান

আরেক সৌন্দর্য দলিপাড়া
বিমানে সচরাচর যাতায়াত হয় না বিধায় এই আকাশযানের প্রতি আমাদের যথেষ্ট কৌতূহল। ফলে ঢাকা বিমানবন্দরের প্রবেশ ও বাহির টার্মিনাল দিয়ে একনজর বিমান দেখার জন্য অনেকেই উঁকিঝুঁকি দিয়ে থাকেন। অথচ যেই জায়গাটায় খুব কাছ থেকে বড় করে বিমান দেখার সুযোগ আছে সেটার নাম দলিপাড়া। বিমানবন্দর থেকে টঙ্গীর পথে জসীমুদ্দীন এভিনিউতে নেমে পশ্চিম দিকে দশ থেকে পনের মিনিট হাঁটলেই দলিপাড়া। এটা মূলত বিমানবন্দরের রানওয়ের উত্তর দিক। পুরোটা জায়গা কংক্রিটের বাউন্ডারিতে ঘেরা থাকলেও ৫০/৬০ হাত লম্বা জায়গায় দেয়ালের বদলে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। এটা খুব সম্ভবত উৎসুক জনতার জন্য, যাতে কাঁটাতারের এপাশ থেকে বিমান উঠানামা তারা দেখতে পারে। অবশ্য বিমান উঠানামা না বলে অবতরণ বলা ভাল।

অবতরণ করা বিমান দেখছে মানুষ

বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দরে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য আলাদা রানওয়ে থাকলেও আমাদের ঢাকা বিমানবন্দরের রানওয়ে একটাই। ফলে একটি বিমানের উড্ডয়নকালে অন্য বিমানকে অবতরণের জন্য আকাশে অপেক্ষায় থাকতে হয়। দলিপাড়ায় রানওয়ের উত্তর পাশ থেকে কেবল অবতরণের দৃশ্য দেখা যায়। তবে সেটা এত কাছ থেকে যে, মাঝারি বা বড় আকারের বিমান অবতরণ করলে দর্শনার্থীদের প্রবল বাতাসের ঝাপটা দিয়ে যায়। যারা নিকট দূরত্ব থেকে বিমান দেখেনি, এত কাছ থেকে এত বড় আকারের বিমান, তার ইঞ্জিনের আওয়াজ এবং বাতাসের প্রবল বেগ তাদের মনে ভিন্ন অনুভূতির জন্ম দিয়ে যায়।

আছে কাঁচকুড়া, দক্ষিণখান
ঢাকা-মোমেনশাহী রোডের পূর্বে উত্তরখানের শেষ মাথা কাঁচকুড়া। এখানে বিশেষ দর্শনীয় কিছু না থাকলেও খুঁজে পাবেন গ্রামের আবহ। বেশ কয়েকটি বড় বড় বিল এবং আরো পূর্বে তুরাগ নদী। শহুরে জীবনের বাইরে গ্রামের আবহ খোঁজ করলে ঢাকার আশপাশের যে তালিকা দাঁড়াবে, তাতে অনায়াসে থাকবে উত্তরখানের কাঁচকুড়ার নাম। সেখানেও যেতে পারেন।

পূর্ববর্তি সংবাদবুদ্ধিমান ছাত্র সে, যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাথে সম্পর্ক রাখে : মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
পরবর্তি সংবাদজামায়াত আর হেফাজত এক নয় : প্রধানমন্ত্রী