৮ দফা দাবিতে রবিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ছয়টা থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। শনিবার (২৭ অক্টোবর) সংগঠনটির সভাপতি সংসদ সদস্য ওয়াজিউদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংসদে পাস হওয়া ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’-এর কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ পরিবহন শ্রমিকদের আট দফ দাবি হলো, সড়ক দুর্ঘটনায় মামলা জামিনযোগ্য করতে হবে। শ্রমিকদের অর্থদণ্ড ৫ লাখ টাকা করা যাবে না। সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করতে হবে। ওয়েস্কেলে (ট্রাক ওজন স্কেল) জরিমানা কমানোসহ শাস্তি বাতিল করতে হবে। সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকদের নিয়োগপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত স্বাক্ষর থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। সব জেলায় শ্রমিকদের ব্যাপক হারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে হবে এবং লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।
ফেডারেশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে যুগোপযোগী আধুনিক ও উন্নত সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের দাবি করে আসছে। সেই দাবিকে গুরুত্বসহ বিবেচনায় নিয়ে সরকার আইন পাস করলেও বেশকিছু ধারা শ্রমিকস্বার্থের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। যে কারণে পরিবহন শ্রমিকদের চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, আইনে সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য না করে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে জামিন অযোগ্য করা হয়েছে। আমরা জানি, দুর্ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটে না কিন্তু অপরাধ পরিকল্পিতভাবেই ঘটে।
দুর্ঘটনা মামলায় তদন্ত করে অপরাধী হিসেবে বিচারে ৩০২ ধারায় শ্রমিকদের ফাঁসি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এমনিতেই প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি চালান। তারওপর আবার বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুর ঝুঁকি। এ কারণে শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে পেশা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা শুরু করে দিয়েছেন। সড়ক পরিবহন জনগুরুত্বপূর্ণ সেবা খাত। সড়ক পরিবহনের প্রধান চালিকাশক্তি শ্রমিক। এই শ্রমিকদের সমাজ ও জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে আইনের এই ধারাগুলো বিশেষ মহলকে খুশি করতে পারলেও জাতীয় জীবনে চরম বিপর্যয়ের আশঙ্কা এনে দিয়েছে। যা আমাদের কাম্য নয়। এ অবস্থায় এই আইনের সংশোধন করা ও বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে আমরা ৮ দফা দাবি তুলেছি। একই লক্ষ্যে আগামীকাল ভোর ছয়টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা শুরু হবে।
