ইসলামী ঐক্যজোট কি নৌকায় উঠছেই?

ইসলাম টাইমস ডেস্ক ।। সম্প্রতি ইসলামী ঐক্যজোট বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর একটি ভিডিও-বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ইসলামি রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। দুই দশকের পুরোনো দল ইসলামী ঐক্যজোট আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করতে পারে – তার এমন সম্ভাবনার কথায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ইসলামি নেতাদের মধ্যে।

সম্প্রতি বেসরকারি টিভি চ্যানেল আইয়ের এক টিভি প্রতিবেদনে দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, ‘এখন আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যেতে হলে আওয়ামী লীগের দিকেই যেতে হবে। আগে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ধারণা ছিল যে তারা ইসলামবিদ্বেষী, সেটা আগের চেয়ে অনেক কমে আসছে।’

সে হিসেবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করতে নৈতিকভাবে কোনো অসুবিধা দেখছেন না মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী।

কিন্তু তার এ টিভি প্রতিবেদন প্রচার হওয়ার পর দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি তার স্ট্যাটাসে ইসলামি দল হিসেবে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে লিখেন-

‘…যে দল বা জোটের কর্মসূচি ইসলামী ঐক্যজোটের কর্মসূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক তার সঙ্গে জোট করা বাস্তবেই অসম্ভব। বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষ দল বা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে পৌত্তলিকতা প্রতিষ্ঠাকারী দলের সঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোটের জোট হতে পারে না যতক্ষণ না তারা ফিরে আসে। কেননা ইতিবাচক ও নেতিবাচক, হা বাচক ও না বাচক, সত্য ও মিথ্যা কখনোই একসঙ্গে চলতে পারে না।’

ইসলামী ঐক্যজোট আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে যাবে, নাকি এককভাবে নির্বাচনে করবে – এ বিষয়টি নিয়ে দোলাচল চলছে বেশ কিছুদিন থেকেই। বিবদমান বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলি বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থানরত মুফতী সাখাওয়াত হোসাইনের সঙ্গে।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করার বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনার ফেসবুক স্ট্যাটাসের বক্তব্য কি আপনার নিজের নাকি দলগত সিদ্ধান্ত?’

জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত, বাকি দলগতভাবেও কারো সঙ্গে জোট করার কোনো সিদ্ধান্ত এখনো গৃহীত হয়নি।’

কিন্তু দল থেকে যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখন আপনার অবস্থান কী হবে?

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা মনে করে এই সরকার সম্পর্কে আমাদের ভুল ধারণা ছিল, তারা কোনো মোহে প্রভাবিত। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারের অনেক আচরণেই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং সরকার আমাদের অনেক দাবি-দাওয়া মেনেও নিয়েছে। সেজন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। কিন্তু জোট ও একসঙ্গে চলা – এটি একটি আদর্শিক বিষয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আদর্শের জায়গা থেকে দুটি দল কাছাকাছি না আসে বা দুটি দল মিলে কোনো লক্ষ্য স্থির করতে না পারে ততক্ষণ তাদের মধ্যে জোট হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আকাবিরদেরও এই সরকার সম্পর্কে সঠিক ধারণা এমনই ছিল। বর্তমানে সরকারের মধ্যে যে পরিবর্তন তা পরিস্থিতির আলোকে বিবেচনায় নিতে হবে। আবেগে ভাসলে হবে না।’

নির্বাচনের খুব বেশি দেরি নেই আর। এরই মধ্যে ইসলামি দলগুলোতে দেখা দিয়েছে নানা ভাঙন ও জোটবদ্ধ হওয়ার তোড়জোড়। সেই তোড়ে ইসলামী ঐক্যজোট কোন পাড়ে তরী ভিড়াবে, সেটি দেখার জন্য খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না হয়তো।

পূর্ববর্তি সংবাদতফসিলের আগেই ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসবে আওয়ামী লীগ
পরবর্তি সংবাদভারতে বাবরি মসজিদ মামলার শুনানি শুরু, দেশ তাকিয়ে শীর্ষ আদালতের দিকে