টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি নওয়াব বাড়ি : ইতিহাসের ছবি

টাঙ্গাইল ধনবাড়ি নওয়াব বাড়ি

নকীব বিন মুজীব ।।

আবু তালহা সাজিদ৷ আমার সহপাঠী৷ ঢাকার জামিয়াতুল মাআরিফের সহকর্মী৷ প্রয়োজনে সহযোগী৷ দীর্ঘদিন থেকে ভাবছি৷ সফর করব ধনবাড়ি৷ সময় ও সুযোগ ছিল৷ ওর পক্ষ থেকে তাড়াও ছিল৷ কয়েকবার চেষ্টা করেছি। পারিনি৷ গত ১৮ অক্টোবর বুধবারের সুযোগটাকে আর হাতছাড়া করলাম না।

কমলাপুর থেকে ট্রেনে রওনা হলাম। টাঙ্গাইল মধুপুর হয়ে প্রাণের ছোঁয়া ধনবাড়ি৷ পৌঁছতে পৌঁছতে দুপুর। গোসল করে নামায আদায় করলাম। তারপর খাওয়া-দাওয়া৷ কিছু গল্প এবং কিছু সময় বিশ্রাম৷ বিকালে বের হলাম হাঁটতে। কিন্তু কোথায় যাব! তালহা বলল, চল নবাববাড়ি যাই।

তালহা কথাটা বলতেই আমার রুমে ঝুলানো নবাববাড়ির দৃশ্যটা সামনে ভেসে উঠল। বললাম, চল! মাগরিবের আগেই ফেরার নিয়ত। একটা মোটরসাইকেলে আমরা রওনা হলাম। বাইক চলছে এগিয়ে৷ অল্পসময়েই পৌঁছে গেলাম নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর নওয়াববাড়ির নবাবী মসজিদে৷ তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটির পাশে আছে কাঁচারি ভবন ও কবরস্থান৷

নওয়াব বাড়ি মসজিদ

নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর জন্ম তারিখ লেখা দেখতে পেলাম ২৯ ডিসেম্বর ১৮৬৩। মৃত্যু ১৭ এপ্রিল ১৯২৯। নওয়াব আলী চৌধুরীর প্রথম পুরুষ শাহ আতিকুল্লাহ বাগদাদ থেকে সফর করে মুসলিম শাসিত দিল্লিতে আসেন। পরে তৎকালীন পূর্ব বাংলার পাবনা জেলার নাকালিয়াতে বসত শুরু করেন। এভাবে বংশ পরম্পরার ধনবাড়িতে তাদের আগমন ও বসবাস৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম হলেন এই নওয়াব আলী চৌধুরী। ব্যক্তিগতভাবে তিন ছিলেন ধার্মিক। মসজিদের পাশেই রয়েছে তার কবর৷ লোকমুখে শুনেছি, ইনতেকালের পর থেকে আজ পর্যন্ত তার কবরের পাশে সবসময় কুরআনুল কারীম তিলাওয়াত করা হয়৷ আমরা যখন গিয়েছি তখনও একজন বয়স্কলোক তিলাওয়াত করছিল৷ জানতে পারলাম, কয়েকজন লোক ঠিক করা আছে। তারা নিয়মিত তার কবরের পাশে বসে তিলাওয়াত করতে থাকেন।

ধনবাড়ী উপজেলার ঐতিহাসিক স্থাপত্যের অন্যতম নির্দশন এ মসজিদ৷ ধারণা করা হয় ইস্পিঞ্জার খাঁ ও মনোয়ার খাঁ ছিলেন ধনবাড়ি মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। মসজিদটি বংশাই ও বৈরান নদীর পাশে। পানি টলোমলো দিঘি আর অপূর্ব নৈসর্গিক প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে- ধনবাড়ি নবাব মঞ্জিল।

 

নান্দনিক সৌন্দর্যের সমাহার : টাঙ্গাইলের গম্বুজ মসজিদ 

ধনবাড়ি থেকে রওনা হলাম মোটরসাইকেলে। গন্তব্য ২০১ গম্বুজ মসজিদ। টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত এটি৷ নির্মাণাধীন মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম৷

২০১ গম্বুজ মসজিদ

মসজিদটির ওয়েব ফেইজে বলা হয়েছে, মুসলিম বিশ্বের অন্যতম এ মসজিদটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদের অন্তর্ভুক্ত৷ ইটের তৈরি বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু মিনার হচ্ছে রফিকুল ইসলাম মিনার৷ যার উচ্চতা ৪৫১ ফুট৷ ২০১ গম্বুজ মসজিদের চার পাশের দেয়ালে পূ্র্ণ ত্রিশ পারা কুরআন লিখিত আছে৷ মসজিদের বাম পাশে জনাব রফিকুল ইসলাম সাহেবের কবরের জন্য স্থান নির্ধারিত রয়েছে৷

এটি শুধু একটি মসজিদই নয়; বরং মসজিদটিকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠছে মানবকল্যাণের জন্য বহুমুখী প্রকল্প৷ বৃদ্ধাশ্রম ও এতিমখানা। ২০১ গম্বুজ মসজিদের পাশেই বৃদ্ধাশ্রম ও অন্যন্য সেবামূলক কাজের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। সেখানে থাকবে বৃদ্ধাশ্রম। থাকবে কমপক্ষে ৩০ জন অবহেলিত বৃদ্ধ মানুষের সেবার জন্য নিয়মিত থাকা-খাওয়া ও সকল প্রকার সেবাসহ সুষ্ঠ জীবন যাপনের যাবতীয় ব্যবস্থা৷ পিতামাতা হারিয়ে সমাজের অবহেলিত দুঃস্থ হতদরিদ্র শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য থাকছে এতিমখানা৷

২০১ গম্বুজ মসজিদ

সমাজে অনেক দুঃস্থ্ মহিলা আছে যারা দরিদ্রতার কারনে গর্ভকালীন অথবা মাতৃকালীন সময়ে সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। এমন মায়েদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে থাকবে ২৫ শয্যা বিশিষ্ট মাতৃসদন হাসপাতাল৷
দেশী-বিদেশী পর্যটকদের যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সড়ক, রেল এবং নৌপথের পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে হেলিপ্যাড৷ পাঠক, সময় থাকলে আপনিও একদিন বেরিয়ে পড়তে পারেন, এই নান্দনিক স্থাপনা ও মানবিক আয়োজন দেখতে।

পূর্ববর্তি সংবাদগুম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও নির্বাচন নিয়ে বার্নিকাট যে পর্যবেক্ষণ দিলেন
পরবর্তি সংবাদড. কামাল ও ফখরুলের নেতৃত্বে সংলাপে যাবেন ঐক্যফ্রন্টের ১৬ নেতা