‘সংবিধান সম্মত আলোচনা’ নিয়ে চলছে নানা ব্যাখ্যা

ইসলাম টাইমস ডেস্ক  ।।  বিএনপি ও ড. কামালের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ২৮ অক্টোবর সংলাপের আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠানোর পর এক দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সংলাপে বসা ও নৈশভোজের আমন্ত্রণ পেয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। প্রথমে সংলাপে বসতে সম্মতি জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ফোন করেছেন ড. কামালের দল গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টুকে। এরপর মঙ্গলবার আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক চিঠি পৌঁছে দিয়েছেন ড. কামাল হোসেনের কাছে।

প্রধানমন্ত্রী সেই চিঠির একটি বাক্যের সম্ভাব্য ব্যাখ্যা নিয়ে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একেকজন দিচ্ছেন একেক ব্যাখ্যা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ‘সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত’। এরপর মন্ত্রী তোফায়েল আহমদ বলেছেন, সংলাপ হবে, কিন্তু সংবিধানের বাইরে কিছু মেনে নেওয়া হবে না। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংলাপে বসা মানে নতিস্বীকার নয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সংলাপে বসতে বিদেশিদের কোনো চাপ ছিল না।

আরও পড়তে পারেন : ড. কামালকে পাঠানো প্রধানমন্ত্রীর চিঠিতে যা বলা হয়েছে

কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে নিজের ফেসবুক একাউন্টে ‘সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার’ও একটি অন্যরকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কলামিস্ট ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন- ‘প্রধানমন্ত্রী সংবিধান সম্মত বিষয়ে আলোচনার কথা বলেছেন। অসুবিধা কি? আসলে তো সবই সংবিধানসম্মত হিসেবে দেখা সম্ভব। এমনকি আমি যদি বলি সংবিধান পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করুন তাহলে সেটাও হবে সংবিধানসম্মত। কারণ সংবিধানেই এটি পরিবর্তন করার বিধান রয়েছে।’

প্রায় একই কথা বিকেলে বলেছেন ড. কামাল হোসেন নিজেও। তিনি বলেছেন, সংবিধান, আইন পরিবর্তন মিনিটের ব্যাপার।’ বিবিসি বাংলার সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, আমরা তাদের বলব, এটা তো সংবিধান নয়, এটা সংশোধনী…। অবশ্যই নির্বাচন সংবিধানসম্মত হবে, অসাংবিধানিকভাবে তো নির্বাচন করা যায় না, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে সংশোধনী থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।’

সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধনীতে যেহেতু নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে- তাই বর্তমান সরকারি দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, নির্বাচন সংবিধানসম্মত পন্থায় হবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়া যাবে না। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে হবে। অপরদিকে ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলগুলিসহ বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকেই দাবি উঠেছে, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। এ অবস্থায় নির্বাচন পূর্ব সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রীর চিঠিতে ‘সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনা’র ব্যাখ্যাটা সরকারদলীয় বক্তব্যের নিরিখে দাঁড়ায়- নির্বাচন আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনেই হবে, সরকার পদত্যাগ করবে না, নিরপেক্ষ সরকারও প্রতিষ্ঠা করা হবে না। আলোচনাও হবে এই নীতির ভিত্তিতেই। এ কারণেই বিপরীত দিক থেকে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের চিঠিতে থাকা এই  বাক্যের ভিন্নরকম ব্যাখ্যাও উপস্থাপন করা হচ্ছে।

সংবিধানসম্মত বিষয়ে আলোচনার আসলে মর্ম যে কী- এটা অবশ্য বোঝা যাবে, ১ নভেম্বর গণভবনের আলোচনার টেবিলে। এর আগে এ বাক্যের ব্যাখ্যা শুধু অনুমানই করা যাবে, পরিষ্কার হওয়া যাবে না।

পূর্ববর্তি সংবাদশুকরানা মাহফিলে কে কোন দায়িত্ব পালন করবে
পরবর্তি সংবাদসংলাপের আমন্ত্রণ চেয়ে বিকল্প ধারার চিঠি, জাপা দেবে আগামী কাল