কেরানীগঞ্জে ইজতেমার নামে আসলে কী হয়েছিল?

আবু মুআজ ।।  

গত শুক্রবার (২৬ অক্টোবর) হঠাৎ করেই ঢাকার বাইরে কেরাণীগঞ্জে তাবলিগ জামাতের মাওলানা সাদ-এর অনুসারীদের মাত্র কয়েক হাজার লোকের উপস্থিতিতে ‘ঢাকা জেলার ইজতেমা’ অনুষ্ঠিত হয়। সারা বিশ্বের তাবলিগের মুরুব্বি (আলমি শুরা) ও উলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তাদের এমন কর্মকান্ডে কেরাণীগঞ্জসহ সারা দেশের তাবলিগ-সাথীদের মধ্যে ক্ষুব্ধতা ছড়িয়ে পড়ে। পরে প্রতিবাদের মুখে সেই ইজতেমা বন্ধ হয়ে যায়্।

আলমি শুরা, কাকরাইল মারকাজ ও উলামায়ে কেরাম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ বছর জেলাওয়ারি কোনো ইজতেমা হবে না। শুধুই টঙ্গীর ময়দানে বিশ্ব ইজতেমা হবে। প্রথম পর্ব ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ২৫, ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি। এ হিসেবে জেলাওয়ারি কোনো ইজতেমা হওয়ার কথা নয়। তারপরও সাদ-অনুসারীরা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ইজতেমার নামে জমায়েত হওয়ার চেষ্টা করেছে বারবার। প্রতিবারই তারা স্থানীয় উলামায়ে কেরাম ও প্রশাসনের বাধার মুখে ব্যর্থ হয়েছে।

সম্প্রতি ২৬ অক্টোবর ঢাকার কেরাণীগঞ্জে সাদ-অনুসারীরা হুট করে ইজতেমার আয়োজন করে বসেন। এর জন্য তারা বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শবগুজারির কথা বলে তারা কেরাণীগঞ্জের খোলামোড়ার বিভিন্ন মসজিদে অবস্থান নেয়। তাদের কেউ কেউ ময়দানে উপস্থিত হয় গভীর রাতে। সকালবেলা তারা ঘোষণা করে ‘ঢাকা জেলার ইজতেমা’ এটাই।

তাদের এমন কার্যক্রমের কথা জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় তাবলিগ-সাথী ও উলামায়ে কেরাম প্রতিবাদী হয়ে উঠলে তারা একদিনের মধ্যেই (শুক্রবার শুরু হয়ে শনিবার সকালে) তড়িঘড়ি করে শেষ করে দেয় তাদের জমায়েত।

ইজতেমার নামে প্রহসন

কেরাণীগঞ্জে ইজতেমা করার জন্য তারা মাননীয় মন্ত্রীর কাছে গেলে তিনি তাদের অনুমতি দেননি। তাবলিগের মুরুব্বিদের সিদ্ধান্তের বাইরে কেরাণীগঞ্জে সাদ-অনুসারীদের ইজতেমার কথা জানতে পেরে ঢাকার উলামায়ে কেরাম ও স্থানীয় তাবলিগ-সাথীরা থানায় অভিযোগ করেন। পরে তাবলিগ-সাথীরা কদমতলী গোলচত্বরে জমায়েত হলে উলামায়ে কেরাম সেখানে আলোচনা শুরু করেন। তখন স্থানীয় প্রতিনিধি উলামায়ে কেরামকে আশ্বস্ত করেন, আগামীকাল সকালের মধ্যে সাদ-অনুসারীদের কথিত ইজতেমা বন্ধ করে তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দেবেন।

অভিযোগ উঠেছে, তাদের সমাবেশে উপস্থিত হওয়া দশ-বারো হাজার লোককে লাখ লাখ লোক উপস্থিত হয়েছে বলে প্রচারণা চালানো। এই অসত্য প্রচারে তারা কয়েকটি মিডিয়াকে ব্যবহার করেছে বলে জানা যায়।

সাদ-অনুসারীরা ঢাকায় এর আগে প্রথমে ডেমরায়, পরে সাভার, তারপর মিরপুরে তাদের সমাবেশ করতে চেয়েছে। কিন্তু উলামায়ে কেরাম ও পুলিশ প্রশাসনের বাধার মুখে তারা ওসব এলাকায় কোনো ধরনের জমায়েত করতে পারেনি। পরে তারা কেরানীগঞ্জের খোলামোড়ায় শবগুজারির নামে একত্র হওয়ার নাম দিয়েছে ঢাকা জেলার ইজতেমা। উলামায়ে কেরাম ও তাবলিগ-সাথীদের প্রতিরোধের মুখে কেরাণীগঞ্জে সাদ-অনুসারীদের সেই জমায়েতও একদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ শুভাড্যা মাদরাসার শাইখুল হাদিস ও জিনজিরা ফেরীঘাট মসজিদের খতিব মাওলানা ফরিদুজ্জামান জানান, সারা দেশে উলামায়ে কেরাম ওজাহাতি জোড় করে বর্তমান তাবলিগের সমস্যা ও সংকটের বিষয়গুলো আলোচনা করছেন। ফলে সাদ-অনুসারীদের মনের মধ্যে বড় ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর আগে তারা ডেমরায় ও সাভারে সমাবেশ করতে চেয়েও পারেনি। মিরপুরে করতে চেয়েছে, তাও পারেনি। পরে তারা কেরাণীগঞ্জে গভীর রাতে চুপে চুপে এসে জমায়েত হয়েছে। এটা কেরাণীগঞ্জবাসীর অনেকটা অজান্তেই হয়েছে। পরে আমাদের উলামায়ে কেরাম ও তাবলিগ-সাথীদের প্রতিবাদ এবং স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থার মুখে তারা তিন দিনের জমায়েত কোনোভাবে এক দিনের মধ্যে শেষ করে চলে গেছে।

অগোছালো ইজতেমার ময়দান

মারকাযুল হুদা বাংলাদেশের তাফসির বিভাগের শিক্ষক ও জাতীয় ইমাম সমাজ কেরাণীগঞ্জ থানার সেক্রেটারি মাওলানা শামুসুদ্দিন বড়াইলি বলেন, সারা বিশ্বের তাবলিগের মুরুব্বি, উলামায়ে কেরাম এবং কাকরাইল মারকাজের মুরুব্বিগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ বছর কোনো জেলাওয়ারি ইজতেমা হবে না। তাদের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে সাদ-অনুসারীরা ঘোষণা দিয়েছে, তারা ঢাকা জেলা ইজতেমা করবে। এর জন্য তারা প্রশাসন থেকে অনুমতি চেয়েছে। প্রশাসন তাদের অনুমতি দেয়নি। এর পরও তারা প্রশাসনের আইন এবং সরকারি আইনের বাইরে গিয়ে কমান্ডো স্টাইলে রাতের বেলা অতর্কিতভাবে এক জায়গায় জমা হয়ে এটাকে ইজতেমা বলা, এ ধরনের কর্মকাণ্ড তাবলিগের ইতিহাসে নেই। দেশের আইনেও নেই।

তাছাড়া তারা নিজেদেরকে পরিচয় দেয় তারা সাদ সাহেবের অনুসারী। সাধারণ লোকদের তারা দাওয়াত দিয়ে সাদ-অনুসারী বানায়। দেওবন্দসহ সারা বিশ্বের উলামায়ে কেরাম ও তাবলিগের মুরুব্বিগণ বলেছেন, সাদ সাহেব বারবার শরিয়তবিরোধী কথা বলার কারণে হকের পথ থেকে সরে গেছেন। ফলে তিনি ও তার অনুসারীদের হকবিরোধী কথা বলার এবং তাদের কোনো ধরনের প্রচারণা চালানোর সুযোগ দেওয়া যায় না। এ জন্যই সারা দেশের উলামায়ে কেরাম সাদ-অনুসারীদের বাধা প্রদান করছেন। যাতে তারা বিভ্রান্তি ছড়াতে না পরে। সাধারণ মানুষদের বিপথগামী করতে না পারে।

পূর্ববর্তি সংবাদআসামের এনআরসি নিয়ে আবারও মমতার ক্ষোভ
পরবর্তি সংবাদরোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে এলো মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল