মদিনায় আন্তর্জাতিক ইসলামি ফিকহ একাডেমির ২৩তম সেমিনার অনুষ্ঠিত

মুহাম্মদ মাসরুর ।। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে

সমকালীন আধুনিক মাসআলার শরয়ি সমাধান প্রদান এবং মানবজীবনের যাবতীয় সমস্যাবলী নিরসনের ক্ষেত্রে ইসলামের চিরায়ত যথার্থতা তুলে ধরার লক্ষ্যে ‘ইসলামি সাহায্য সংস্থা’ (ওআইসি)-এর অধীনে একটি ‘আন্তর্জাতিক ইসলামি ফিকহ একাডেমি’ গঠন করা হয়। যার অনানুষ্ঠানিক পদযাত্রা শুরু হয় ১৪০৩ হিজরি মোতাবেক ১৯৮৩ সালে। তৎকালীন সৌদি বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজের পৃষ্ঠপোষকতায় মক্কাতুল মুকাররমায় তিনদিন ব্যাপী (৭-৯ জুলাই, ১৯৮৩) অনুষ্ঠিত সেমিনারের মাধ্যমে সারাবিশ্বের বিদগ্ধ ফকিহ ও আলেমদের নিয়ে এই ফিকহ একাডেমির প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই একাডেমি আধুনিক প্রয়োজনীয় মাসায়েলের গবেষণা ও সমাধানের জন্য সময়ে সময়ে বিভিন্ন সেমিনার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যেখানে সারা বিশ্বের নির্বাচিত বিদগ্ধ ফকিহদের গবেষণাগুলো পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্তমূলক সমাধান দেওয়া হয়।

এই সেমিনারগুলো সাধারণত বিভিন্ন রাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের সেমিনারটি ২৩তম। এটি কিং সালমান ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার  মদিনায় পাঁচদিন ব্যাপী (২৮ অক্টোবর-১ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়। যার ব্যবস্থাপনায় ছিল ‘ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মদিনা’।

গত রোববার (২৮ অক্টোবর) দিবাগত সন্ধ্যায় সেমিনারের উদ্বোধনী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এখানে মদিনার আমির ফয়সাল বিন সালমান ও কাবার ইমাম আব্দুর রহমান সুদাইসসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিলো।

সোমবার (২৯ অক্টোবর) সকাল থেকে ফিকহি অধিবেশনগুলো শুরু হয়। এই অধিবেশনগুলো শুধুমাত্র ফিকহ একাডেমির সদস্যদের জন্য নির্ধারিত ছিলো। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চারদিনে মোট ১৬টি অধিবেশন সম্পন্ন হয়।

সেমিনারের এবারের আলোচ্য বিষয়বস্তুগুলো ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্বব্যাপী চলমান আধুনিক মোট ১৩টি ফিকহি বিষয় নিয়ে আলোচনাকে সাজানো হয়। তন্মধ্যে ‘অপ্রাপ্তবয়স্কা মেয়ের বিবাহ ও অভিভাবকের অধিকার’, অাধুনিক চিকিৎসায় রোজাভঙ্গের নীতিমালা, ব্যাংক কর্তৃক কারেন্ট একাউন্ট (চলতি হিসাব)-এর সদস্যদের বাড়তি সুবিধা প্রদানের শরয়ি দৃষ্টিকোণ, অনিচ্ছাকৃত ভুল চিকিৎসায় ডাক্তারের দায়দায়িত্ব ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

শেষ তিনটি অধিবেশনে ২৩তম সেমিনারের সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করে খসড়া আকারে প্রকাশ করা হয়।

সবশেষে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সেমিনারের সমাপনী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এ অধিবেশন সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিলো। এখানে ফিকহ একাডেমির সিদ্ধান্তগুলো সকলের সামনে পাঠ করা হয়। এরপর বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ ও যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান-এর পক্ষ থেকে তারবার্তা পাঠ করে ফিকহ একাডেমি কর্তৃক এ ধরনের সেমিনারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এর সফলতা কামনা করা হয়। সেমিনারে অংশগ্রহণকারী একাডেমির সকল সদস্যকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদানের মাধ্যমে এই ফিকহি সেমিনারের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

আন্তর্জাতিক ইসলামি ফিকহ একাডেমিতে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ছিলেন শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকি উসমানি। বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিনিধি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মারুফ মোহাম্মদ শাহ আলম।

আন্তর্জাতিক ইসলামি ফিকহ একাডেমি (মাজমাউল ফিকহিল ইসলামি আদদুওয়ালি)-এর সেমিনারে আগত উলামায়ে কেরাম গত বৃহস্পতিবারই সেমিনারের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত করেন। এরপর শুক্রবার সকলকে উমরা পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শুক্রবার বিকালে তারা পবিত্র কাবা শরিফের প্রধান ইমাম শাইখ সুদাইসের বাড়িতে আমন্ত্রিত হন। তিনি মেহমানদের উষ্ণ সংবর্ধনা প্রদান করেন। আমন্ত্রিত উলামাদের নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় ছিলেন আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির সম্মানিত চেয়ারম্যান ড. সালেহ বিন হামিদ ও মদিনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটির সম্মানিত মুদির ড. হাতেম আল মারজুকি।

পূর্ববর্তি সংবাদআততায়ী ছিল দুইজন!
পরবর্তি সংবাদসোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত হয়েছেন লাখো কওমিয়ান