সম্রাট আলমগীরের জন্মের ৪০০ বছর পূর্তি

ড. মাহফুজ পারভেজ ।।

যাঁর শাসনে মুঘলরা সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের অধিকারী হয়েছিলেন, তিনি সম্রাট আলমগীর। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে তাঁর চেয়ে বৃহৎ রাজ্য আর কোনও রাজা বা বাদশাহ শাসন করতে পারেন নি। এই বীর্যবান মুঘল বাদশার জন্মের ৪০০ বছর পূর্তি রবিবার (৪ নভেম্বর)।

তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের ষষ্ঠ মুঘল বাদশাহ। তাঁর পূর্ণ নাম আল-সুলতান আল-আজম ওয়াল খাকান আল-মুকাররম আবুল মুজাফফর মুহি উদদ্বীন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব বাহাদুর আলমগীর। ১৬১৮ সালের ৪ নভেম্বর গুজরাটের দাহোদ-এ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা পঞ্চম মুঘল বাদশাহ তাজমহল-নির্মাতা শাহজাহান আর মাতা আগ্রার তাজমহলে শায়িতা মুমতাজ মহল। শাহজাহানের চার পুত্রের নাম দারা, সুজা, আওরঙ্গজেব ও মুরাদ।

একজন সফল শাসকের পাশাপাশি তিনি জিন্দাপীর হিসেবে আজও পরিচিত। একজন বাদশাহ কতোটা অনন্য সাধারণ ও বুযুর্গ হৃদয়ের অধিকারী হতে পারেন, তার উদাহরণ মুঘল বাদশাহ আলমগীর।

যদিও রাজ্য শাসনের ক্ষেত্রে তাঁর কঠোরতার বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে, তথাপি তাঁর সাদাসিধা ব্যক্তিগত জীবনেরও বহু উল্লেখযোগ্য দিকের কথা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিনি টুপি বানিয়ে এবং পবিত্র কুরআন কপি করে তা বিক্রির আয়ে শেষ জীবনে মাত্র আটশ পাঁচ টাকা সঞ্চয় করেছিলেন ৷ তাঁর মধ্যে মাত্র চার টাকা আট আনা তাঁর কাফন দাফনে ব্যয় করার জন্য রেখে অবশিষ্ট অর্থ দান করে দেবার জন্য অসিয়ত করে গিয়েছিলেন ৷

ধর্মপরায়নতা ও শুদ্ধাচারের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অটল। তাঁকে সাম্প্রদায়িক ও হিন্দু-বিদ্বেষী বলার একটা অপচেষ্টা হলেও ঐতিহাসিকগণ তার প্রমাণ পান নি। বরং অনেক হিন্দু-ধর্মস্থান সংরক্ষণের জন্য তাঁকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়। তবে তিনি আকবরের উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিরোধী ছিলেন। ছিলেন ইসলামী অনুশাসনের নিষ্ঠাবান অনুসারী।

বাদশাহ আলমগীর সুদীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর বিশাল ভারতবর্ষ শাসন করে গেছেন। অন্য কোনও মুঘল শাসক তাঁর মতো এতো বছর ক্ষমতাসীন ছিলেন না। তিনি মুঘল শাসকগণের মধ্যে নানা কারণে ব্যতিক্রম ছিলেন। সাম্রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি আদর্শ ছিলেন। অগ্রজ শাসকগণের মত অত্যধিক বিলাসিতা, বেপরোয়া জীবনযাপন পরিহার করে ইসলামের মহান চার খলিফাগণের জীবন-আদর্শকে বুকে ধারণ করে জীবন অতিবাহিত করেন তিনি। এবং রাজত্বের বেশির ভাগ সময়ই তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে ঘোড়ার পিঠে কাটান। রাজধানীতে থাকা তাঁর পক্ষে খুব কমই সম্ভব হয়েছিল। তিনি উত্তর ভারতের পাশাপাশি সমগ্র দক্ষিণ ভারতে মুঘল বিজয় পতাকা উত্তোলনকারী প্রথম শাসক।

৮৯ বছর বয়সে ১৭০৭ সালের ৩ মার্চ দক্ষিণাত্যের আহমদ নগরে তিনি যখন ইন্তেকাল করেন, তখনও তিনি যুদ্ধ করছিলেন। দৌলতাবাদের ২৮ কিলোমিটার দূরত্বে হুলদাবাদে একটি পাহাড়ের ওপর সাদামাটা কবরে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।

লেখক : প্রফেসর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তি সংবাদসিসির দেশে নিষিদ্ধ হচ্ছে নিকাব!
পরবর্তি সংবাদসামরিক সচিবের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানালেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী