মহাজোটের অংশিদার হতে যাচ্ছে কি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস?

আতাউর রহমান খসরু ।।

গত ৫ নভেম্বর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দলীয় ও তার নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জোটের ৩৪ জন নেতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বসেন। আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে কথা হয় আগামী নির্বাচন কেন্দ্রিক অনেক কিছু নিয়েই।

সংলাপের সময় চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিকট চিঠি পাঠানোর পর ধারণা করা হচ্ছিলো এ সংলাপ জাতীয় পার্টির দলীয়। আখেরে তা পরিণত হয় সম্মিলিত জোটের সংলাপে।

সংলাপের তারিখ নির্ধারণের পর এরশাদ বলেছিলেন, কোনো প্রস্তাব নিয়ে যাবো না; বরং এক সঙ্গে বসে চা খেতে যাবো। অন্য বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে কথা বলবো আমরা।

এরশাদ বার বার একক নির্বাচনের কথা বললেও সংলাপ পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার ঘোষণা দেন এবারও তারা মহাজোটের অংশিদার হিসেবে নির্বাচন করবে।

গণভবনে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত জোটের অংশিদার বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ।

তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম সংলাপে মূলত তারা সরকারকে কি প্রস্তাব দিয়েছেন? উত্তরে তিনি বলেন, আমরা সরকারকে নির্বাচন বিষয়ে দুটি প্রস্তাব দিয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা যেন করা হয় এবং ইভিএম ব্যবহার না করা হয়।

আর প্রধানমন্ত্রী আপনাদের কী বললেন? ‘প্রধানমন্ত্রী বললেন, আপনারা গত নির্বাচন আমাদের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছিলেন। আমরা চাই, একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আপনারা আমাদের সাথে থাকবেন।’ বলেন মাওলানা জালালুদ্দিন।

জাতীয় পার্টি মহাজোটের অংশিদার হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়ায় অংশিদার দলগুলোর অনেক হিসাবই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। বিশেষত আসন বণ্টনে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। জাতীয় পার্টি পৃথক নির্বাচন করলে স্বভাবত তাদের আসন প্রাপ্তি বেশি হতো। সে হিসেবে তারা একটি ভিন্ন হিসাবও কষে রেখেছিলো। কিন্তু এখন হিসাব পুরো উল্টে যাচ্ছে। ফলে খানিকটা অনিশ্চয়তার মধ্যেই পড়ে গেছে শরিক দলগুলো।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হকও বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আসন বণ্টন নিয়ে জাতীয় পার্টির সাথে আমাদের চূড়ান্ত কোনো আলোচনা হয়নি। তবে কোনো সন্দেহ নেই পরিস্থিতি কিছুটা জটিল হয়ে গেলো।

শুধু বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নয়; বরং অন্য কোনো দলকেও আসনের ব্যাপারে চূড়ান্ত কথা দেয়নি জাতীয় পার্টি। পরিবর্তিত পরিস্থিতির উপর নির্ভর করেই আসন বণ্টন চূড়ান্ত করা হবে বলে শরিকদের জানিয়েছে দলটি।

এ ব্যাপারে মাওলানা জালালুদ্দিন বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেছেন রাজনীতির নানান মেরুকরণ চলছে। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় বোঝা যাচ্ছে না। তবে আমি আপনাদের সম্মানজনক আসন দেবো।

অপরদিকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস প্রাথমিকভাবে ৬০ প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করেছে এবং দুই-চার দিনের মধ্যেই আসন বণ্টন চূড়ান্ত করার চেষ্টা করবে বলে জানান এ নেতা।

জাতীয় পার্টি মহাজোটের অংশিদার হিসেবে নির্বাচন করবে এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন কিনা এবং তাতে আপনারা আওয়ামী লীগ ও বাম দলগুলোর অংশিদার হলেন কিনা জানতে চাইলে মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, বাস্তবতা বুঝেই এগিয়ে যেতে হবে। পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল। অবস্থা কোনদিকে যায় তা দেখতে আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। আওয়ামী লীগের অংশিদার হয়ে গেলাম কি গেলাম না তা নিয়ে কথা বলার সময় হয়নি। পরিস্থিতি চূড়ান্ত মনে করছি না। যখন হবে তখন বোঝা যাবে। তফসিল ঘোষণার আগে এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।

একই প্রশ্নের উত্তরে মাওলানা জালালুদ্দিন বলেন, আমরা এখন একটা জোটের অংশ। জোটের বাকিরা যেতে রাজি হলে আমরাও যাবো। জোটগতভাবে এ বিষয়ে খোলাখুলি কোনো আলোচনা হয়নি।

জাতীয় পার্টির সঙ্গে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জোট গঠনের সময় ৭ দফা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলো দল দুটি। ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এ দফাগুলো উত্থাপন করেছিলো বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। তাদের বক্তব্য ছিল, লিখিত চুক্তির মাধ্যমে তারা ইসলামের স্বার্থ সংরক্ষণের দিকটি নিশ্চিত করলো।

কিন্তু সম্মিলিত জোট মহাজোটের অংশ হলে তা কতোটা সংরক্ষণ করা যাবে? মাওলানা জালালুদ্দিন মনে করেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যদি সম্মিলিত জোট নির্বাচন করে এবং আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে তবেই এ প্রশ্ন উঠতে পারে। অথচ বিষয়টি এখনো নিশ্চিত না। তবে মহাজোটের অংশ হলেও জাতীয় পার্টি তাদের দাবি আদায়ে সহায়ক হবে বলেই তাদের বিশ্বাস।

সম্মিলিত জোট মহাজোটের সাথে নির্বাচন করুক অথবা না করুক বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নিজস্ব প্রতীক রিকশা নিয়ে নির্বাচন করবে বলে জানিয়েছেন দলের এ দুই নেতা।

সবশেষে জানতে চেয়েছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকালের সংলাপ এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত বক্তব্য সবকিছু মিলিয়ে কি মনে হয় চলমান রাজনৈতিক সংকটের সুষ্ঠু কোনো সমাধান হবে?

তিনি বললেন, আমার মনে হচ্ছে সাংবিধানিক বিষয় যেমন সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের মতো বিষয়ে সরকার ছাড় দেবে না। তবে বেগম জিয়ার মুক্তির মতো আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো মানবে। আমরা চাই একটি সুন্দর পরিবেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক।

মাওলানা জালালুদ্দিনের মতো দেশের সাধারণ মানুষ ও রাজনীনিকদের প্রত্যাশাও একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর সেটা সম্ভব হবে কি না তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু দিন।

পূর্ববর্তি সংবাদপদত্যাগ করেছেন চার মন্ত্রী
পরবর্তি সংবাদভারতে এলাহাবাদের পরে বদলে যাচ্ছে ফয়জাবাদের নামও