পটিয়া মাদরাসায় জাতীয় সংগীত গাওয়ার নির্দেশনা নিয়ে যা বললেন বেফাক মহাসচিব

আবরার আবদুল্লাহ ।।

কওমি মাদরাসাসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের এ্যসেম্বলির ব্যবস্থা গ্রহণ ও শ্রেণিকক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ানোর নির্দেশনা জারি করেছে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা।

নির্দেশনাটি পটিয়া উপজেলায় অবস্থিত জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া, জামিয়া আল আলবিয়া জিরিসহ ১০টি মাদরাসায় পাঠানো হয়েছে।

জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার ইফতা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক মুফতি মন্জুর সিদ্দিকি ইসলাম টাইমসকে চিঠির পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে আমাদের জামিয়ার প্রিন্সিপালের বরাবর চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। আমাদের বলা হয়েছে, এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে এবং তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসকে অবহিত করতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের প্রশ্ন করেছিলাম আমরা দেওবন্দের মূলনীতির উপর স্বীকৃতি নিয়েছি। আমরা কেন এসব নির্দেশনা মান্য করবো? তারা উত্তর দিয়েছে, দেওবন্দ ভারতের প্রতিষ্ঠান সেখানের নিয়ম বাংলাদেশে চলবে না।’

উপজেলার নির্বাহী কার্যালয় থেকে মাদরাসার সকল শিক্ষকের মোবাইল ফোন নম্বরও জমা দিতে বলা হয়েছে। যেন তারা খবর নিতে পারেন নির্দেশনা বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না? জানান মুফতি মন্জুর সিদ্দিকি।

নির্দেশনার বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন’। আর সূত্র হিসেব উল্লেখ করা হয়েছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ (১৮.১০.২০১৮) এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (৩১.১০.২০১৮)।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পটিয়া উপজেলাধীন কওমী মাদরাসাসমূহে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিম্নবর্ণিত নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে অনুরোধ করা হলো।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে,

১. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন (বন্ধ ব্যতীত) জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

২. জাতীয় সংগীত পরিবেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৩. প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের এসেম্বলির ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৪. শ্রেণি কক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পডানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

স্বকীয়তা বজায় রেখে সরকার কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দেয়ার এক বছরের মাথায় এমন নির্দেশনা কেন আসলো তা নিয়ে বিস্মিত অনেকেই। কারণ, স্বীকৃতি আইনে কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা রক্ষা হাইআতুল উলয়াকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

এমনকি সরকারের যে কোনো নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব হাইআতুল উলয়াকে প্রদান করা হয়েছে। সে হিসেবে এ নির্দেশনা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশেষত বাংলাদেশের শুধু একটি উপজেলায় এ নির্দেশনা জারি হওয়ায়ও প্রশ্ন উঠছে অনেকের মনে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মহাসচিব ও হাইয়াতুল উলয়ার সদস্য মাওলানা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘বিষয়টি আমরা জানি না। তবে এমন হওয়ার কথা না। আমরা অবশ্যই খবর নিবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা বিরোধী যে কোনো পদক্ষেপ আমাদের চোখে পড়লে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবো এবং প্রতিকারের চেষ্টা করবো।’

পূর্ববর্তি সংবাদমালয়েশিয়ার কথা বলে প্রতারকরা শাহপরীর দ্বীপে নামিয়ে দিয়েছে ১৪ রোহিঙ্গাকে
পরবর্তি সংবাদআগামীকাল তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার