আজ তফসিল : সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটছে না ইসলামি দলগুলোর

আতাউর রহমান খসরু ।।

কোনো প্রকার রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়াই আজ একাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে তফসিল পেছানো, সংসদ ভেঙ্গে দেয়া, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন সরকার গঠনসহ বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেছিলো বিরোধী দল ও জোটগুলো। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তা সংবিধান পরিপন্থী বলে প্রত্যাখান করা হয়। নির্বাচন কমিশনও নির্ধারিত সময়ে তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। সে মতে আজ সন্ধ্যা সাতটায় জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে একাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণা করার কথা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের।

সরকারের এমন আচরণে এবারও ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন বিরোধী রাজনীতিকরা। গণমাধ্যমে প্রকাশ, গতকাল রাতে বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের বৈঠকে নির্বাচন বর্জনের পক্ষেও মত দিয়েছেন অনেকে । অন্যদিকে বিরোধী দলগুলোর মতামত উপেক্ষা করে নির্বাচনের পথে হাঁটায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

এমতাবস্থায় দেশের তফসিল পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে দেশের ইসলামি দলগুলো কী ভাবছেন তা জানতে কথা বলেছিলাম কয়েকজনের সাথে।

ইসলাম টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না বলেই শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তাকে বলেছিলাম, সংলাপ তো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হলো, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন কোনদিকে যাচ্ছে? তিনি বলেন, ‘সরকার তার এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথেই হাঁটছে। সরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায় না। বিরোধী দলগুলোর দাবি প্রত্যাখ্যান করে সরকার দেশকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

সরকার আপনাদের দাবি মানলো না। এখন কী করবেন? ‘আমরা তো একটি জোটের অংশ। আজ (৮ নভেম্বর) জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক আছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে আমরা কী করবো?’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আমলগীর কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে দেশে আবার রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের অবশ্য তেমন আশঙ্কা বোধ করছেন না। কারণ, ‘কঠোর আন্দোলন মানেই সহিংসতা নয়। জনগণের অংশগ্রহণে শান্তিপূ্র্ণ আন্দোলনও সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানও মনে করেন তফসিলের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না। তবে তার দৃষ্টিতে কারণটা ভিন্ন। তাহলো, সরকারের কঠোর অবস্থান এবং আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকার কারণে তা সম্ভব হবে না। তার ভাষায় ‘সরকার যেভাবে প্রশাসনকে সাজিয়েছে এবং সরকার দলীয় স্বার্থে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করছে তাতে মনে হয় না সরকার-বিরোধী কোনো আন্দোলন জমে উঠতে পারবে। সরকার তো বিরোধী দলকে কোথাও ঠিক মতো দাঁড়াতেই দেয় না। তাহলে পরিস্থিতি পাল্টে দেয়ার মতো আন্দোলন কীভাবে হবে?’

ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আলতাফ হোসাইন আবার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন অন্যভাবে। তিনিও মনে করেন তফসিলের পর সহসাই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না। সরকারের নমনীয়তা ও আলোচনার দরজা খোলা রাখাকে তিনি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে সরকার যদি আলোচনার দরজা একবারেই বন্ধ করে দেয় তবে দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

তবে তার সঙ্গে খানিকটা ভিন্নমত পোষণ করেন ড. আহমদ আবদুল কাদের। তার মতে তফসিল ঘোষণা এবং খালেদা জিয়াকে আবারও কারাগারে পাঠানোই সরকারের কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত বহন করে। এ থেকেই প্রমাণ হয় আলোচনার কথা বললেও সরকার শেষ পর্যন্ত নিজের নকশা অনুযায়ীই নির্বাচন করবে। তবে তিনি মনে করেন বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বাইরে যাবে না।

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে প্রায় একই রকম দাবি উত্থাপন করেছিলো খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সরকার তাদের দাবি উপেক্ষা করেই নির্বাচনের পথ ধরায় এখন কী ভাবছে দল দুটি? তারা কি নির্বাচন করবে? উভয় দল নির্বাচন করার আগ্রহই প্রকাশ করেছে। যদিও তারা বলেছে এখনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া যাচ্ছে না।

গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘আমরা পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবো। যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের মতো পরিবেশ তৈরি হয় তবে আমরা অংশগ্রহণ করবো। আর না হলে করবো না।’

না করার সম্ভাবনা কতোটুকু? ‘আমরা একটি নিবন্ধিত নির্বাচনী দল। কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে।’ উত্তর দেন তিনি।

পরপর দুইবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নিবন্ধন বাতিলের দিকেই ইঙ্গিত দেন গাজী আতাউর রহমান। গত জাতীয় সংসদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণে একপ্রকার আইনী বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়ে আছে ইসলামী আন্দোলনের ওপর।

একই সংকট তৈরি হয়েছে খেলাফত মজলিসেরও। তাই এবার তারাও নির্বাচনে যেতে আগ্রহী। নির্বাচন করা- না করার প্রশ্নে আহমদ আবদুল কাদের বলেন, আমি মনে করছি এবার আমাদের নির্বাচন করা উচিত। বিএনপিকেও আমরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তাব দেবো। কারণ, নির্বাচন না করলে সংগঠন আরও বেশি দুর্বল হয়ে যাবে। সরকার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পেয়ে আরও আগ্রাসী হবে।

বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে কোনো আপত্তি নেই বলে আগেই জানিয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী। তাই তাদের নির্বাচনে অংশ নেয়া এক প্রকার নিশ্চিত। নির্বাচনে কীভাবে অংশগ্রহণ করবেন? প্রশ্নের উত্তর দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আলতাফ বলেন, ‘আমরা এখনও একক নির্বাচনের চিন্তা করছি। তিনশো আসনে প্রার্থী দেয়ার বিষয়টিই ভাবছি এখনও।’

এখনও কোনো জোটে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকার দলীয় জোট এবং সরকারের বাইরে থাকা কয়েকটি জোটের সাথেও তাদের যোগাযোগ রয়েছে। তবে বিএনপি বা ২০ দলীয় জোটে আবার যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা তাদের নেই, জানান মাওলানা আলতাফ হোসাইন।

আপনারা সরকারের দলীয় জোটে যাচ্ছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আপনাদের চেয়ারম্যান-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের চেয়ারম্যান ২০ দলে যাবেন না বলেছেন। আওয়ামী লীগে যাবেন এটা বলেননি। আমাদের কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও।’

আইনী বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও নির্বাচনের ফল নিয়ে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের ভেতর। শেষ পর্যন্ত শঙ্কামুক্ত একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হরে আরো কিছু দিন।

পূর্ববর্তি সংবাদযুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বারে গুলিবর্ষণ, নিহত ১২
পরবর্তি সংবাদবিকল্প পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি দিলেন বি চৌধুরী!