সাদ আবদুল্লাহ মামুন ।।
হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল। একটু না; অনেকটাই কেমন যেন অন্যরকম। সব হাসপাতালেই থাকে জীবন-মৃত্যুর শঙ্কা। থাকে হাসি-কান্নার চিত্র। থাকে রোগীর গমন-আগমন। কিন্তু হার্ট ফাউন্ডেশনের মতো কি! এত দ্রুত কান্না কিংবা স্বস্তি! না বোধহয়।
ঢাকা মিরপুরের ২ নম্বর সেকশনে হৃদরোগ বিষয়ক এই হাসপাতালটির অবস্থান। হার্ট ফাউন্ডেশনের গ্রাউন্ড ফ্লোর বা নিচ তলার দৃশ্য। এখানে কিছু রোগী তো আসেন স্বাভাবিক গতিতে। রুটিন চেকআপ করাতে বা নির্দিষ্ট ডাক্তারকে দেখাতে। আর কিছু রোগী আসেন হঠাৎ করে। ঝড়ের গতিতে। কেউবা বুকে হাত রেখে কোনোভাবে কাতরাতে কাতরাতে। সোজা ছুটে যান জরুরি বিভাগে। অচেতন-অর্ধচেতন রোগীকেও পাজাকোলে করে এখানে আনা হয়। টিকেট কাটা, লাইন ধরা কোনো কিছু ছাড়াই।
জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত ডাক্তার-নার্সরাও যেন আগে থেকে প্রস্তুত। রোগী আসামাত্রই তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। জরুরি চেকআপ ও চিকিৎসা শুরু করে দেন। কেন কী কখন… ইত্যাদি প্রশ্ন ছাড়াই চলতে থাকে রোগীর প্রাথমিক পরীক্ষা ও চিকিৎসা।
জরুরি বিভাগের রোগীদের অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠেন। ফিরে যান ভালো হয়ে। হাসি হাসি মুখে। স্বস্তি নিয়ে। আর কেউ কেউ থমকে যান শঙ্কার আলামত নিয়ে। অজানা শঙ্কা চেপে বসে বুকে। চিন চিন ব্যথা। চেকআপ শেষে ডাক্তার জানিয়ে দেন- আপনার হার্টে এই এই সমস্যা। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মুখটা মলিন হয়ে যায়। ভয়টা ছড়িয়ে যায়। রোগীকে ছাড়িয়ে স্বজনদেরও মাঝে।
অসুস্থ মানুষের মৃত্যু যেন অনেকটাই স্বাভাবিক। ঘরে-বাইরে সব জায়গায়। হাসপাতালের ক্ষেত্রে এ দৃশ্য আরও স্বাভাবিক। অনেক রোগী যেমন ভালো হয়, সুস্থ হয় প্রতিদিন; তেমনি কিছু রোগী মারাও যায়। হাসপাতালের এটি রুটিন চিত্র।
অসুস্থ মানুষের মৃত্যু স্বাভাবিক। কিন্তু হার্টের রোগীর আকস্মিক মৃত্যু যেন অস্বাভাবিক। অবিশ্বাস্য। এত দ্রুত একজন মানুষ মারা যায়- সামান্য বুক ব্যথায়!
পরিবার-স্বজনদের মেনে নিতে কষ্ট হয় এমন মৃত্যু। একটু আগেও তো লোকটা সুস্থ ছিল। ভালো ছিল। এমন একজন জীবন্ত ও চলন্ত মানুষ এভাবে নাই হয়ে যায় কী করে! বুকভাঙা কান্নার রোল ওঠে হাসপাতালের বারান্দায়। মুহূর্তের মধ্যেই মীমাংসাহীন এক ঝড় নেমে আসে। হার্ট ফাউন্ডেশনের বারান্দার এটাই চিত্র।
হার্ট ফাউন্ডেশন থেকে আপনজনকে নিয়ে ফেরেন তারা- বিষাদমাখা চেহারায়। ব্যথাভরা মনে। ঝরে পড়তে থাকে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু। এ যেন এক হার্টের ব্যথা অন্য হার্টগুলো মেনে নিতে না পারার কষ্ট।
