কিশোরগঞ্জের শহীদি মসজিদে সাদপন্থীদের বিশৃঙ্খলার চেষ্টা

আবরার আবদুল্লাহ ।। বি-বাড়িয়ার পর এবার কিশোরগঞ্জে সাদপন্থীদের উৎপাতের খবর পাওয়া গেছে। কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শহীদি মসজিদে সাধারণ তাবলিগি সাথীদের সাথে সাদপন্থীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় মুসল্লিরা।

গত সোমবার এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। সামান্য হাতাহাতি হলেও বড় ধরনের কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের জামিয়া এমদাদিয়া সংলগ্ন শহীদি মসজিদে সাদপন্থীদের আমল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন উলামায়ে কেরাম। সিদ্ধান্ত হয়, ১২ নভেম্বর সোমবার থেকে শহীদি মসজিদে তাবলিগের কার্যক্রম উলামায়ে কেরামের নির্দেশনা মোতাবেক পরিচালিত হবে।

কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ১১ নভেম্বর রোববার রাতে কিশোরগঞ্জ শহরের সাদপন্থী তাবলিগি নেতাদের  সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। কিশোরগঞ্জ জামিয়া এমদাদিয়ার মুফতি মাওলানা ওমর ফারুকসহ কয়েকজন শিক্ষক গিয়ে তাদের বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন। তারা উলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু এই সময় তারা চুপ থাকে এবং ভালো-মন্দ কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়াই প্রকাশ করেনি।

পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার জোহরের নামাজের পর ঘোষণা করা হয়, শহীদি মসজিদে উলামায়ে কেরামের নির্দেশনা মোতাবেক তাবলিগের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। নামাজ শেষে মুসল্লিরা বের হয়ে যাওয়ার পর সাদপন্থীরা হৈ চৈ শুরু করে এবং মাদরাসারছাত্র ও তাবলিগের সাধারণ সাথীদের গায়ে হাত তোলে।

এ ঘটনার সঙ্গে কিশোরগঞ্জ ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের শিক্ষক প্রফেসর হিরা ও গুরু দয়াল কলেজের শিক্ষক প্রফেসর সাগর জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জোহরের সময়ের অপ্রীতিকর ঘটনার প্রেক্ষিতে আসরের সময় মসজিদে বিপুল সংখ্যক উলামায়ে কেরাম এবং নিরাপত্তার জন্য আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হন। আসরের নামাজের পর মসজিদে দৈনন্দিন আমল শুরু করেন। সাদপন্থীদেরও সে আমলে অংশগ্রহণের আহবান জানান। কিন্তু তারা উলামায়ে কেরামের আহবান উপেক্ষা করে পৃথক আমল অব্যাহত রাখেন। এতে মসজিদে উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং সাদপন্থীদের মসজিদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। দুপুরের ঘটনার জেরে এই সময় প্রফেসর সাগর ও প্রফেসর হিরার গায়ে হাত তোলেন কয়েকজন সাধারণ মুসল্লি।

সোমবারের পর মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জ মারকাজ মসজিদে উলামাদের নিয়মতান্ত্রিক মাশওয়ারায় বাধা দেয়ার ঘোষণা দেয় সাদপন্থীরা। এতে উত্তেজনার পারদ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু প্রশাসনের সহযোগিতা ও বিপুলসংখ্যক সাধারণ সাথীদের উপস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তি ছাড়াই শেষ হয় মাশওয়ারার আমল। অন্যদিকে মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের সড়ক ভবন মসজিদে একই সময় আলাদা বৈঠক করেছে সাদপন্থীরা।

এদিকে আগামীতে যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য আগামীকাল (১৫ নভেম্বর) বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উভয় পক্ষের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।

এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া কিশোরগঞ্জ জামিয়া এমদাদিয়ার প্রিন্সিপাল আল্লামা আজহার আলী আনোয়ার শাহ বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সংঘাত বা বিরোধে যেতে চাইনি। আগ থেকেই তাদের বুঝিয়ে বলা হয়েছে। কেন তাদের উলামাদের নির্দেশনা মেনে নেয়া উচিত তাও বুঝিয়ে বলা হয়েছে। তবুও তারা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ তৈরি করেছে। আমাকে অশালীন ও অকথ্য ভাষায় গালি দিয়েছে। এরপরও উলামায়ে কেরাম ধৈর্য্য-এর পরিচয় দিয়েছন। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের বিপরীতে নিজেদের সংযত রেখেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘গুটি কয়েক মানুষ কিশোরগঞ্জের পরিবেশটা নষ্ট করে রেখেছে। উলামায়ে কেরাম, সাধারণ মুসল্লি ও প্রশাসনের সহযোগিতায় বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’

সব পর্যায়ের দ্বীনদার ভাইদেরকে সাদপন্থীদের কোনো ধরনের উস্কানিতে কান না দেয়ার আহবান জানিয়েছেন আল্লামা আনোয়ার শাহ।

পূর্ববর্তি সংবাদধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল নিয়ে নতুন জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু
পরবর্তি সংবাদনয়াপল্টনে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়া যুবক ‘শনাক্ত’