মাওলানা গাজী ইয়াকুব। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্য-সহযোগিতায় কাজ করছেন বেশ কিছুদিন থেকে। কাছ থেকে দেখেছেন রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা এবং তাদের মানবেতর জীবনযাপন। সম্প্রতি বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কর্মসূচি নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন সংকট। বর্তমান সংকট, রোহিঙ্গাদের সার্বিক অবস্থা এবং অনুচ্চারিত অনেক সত্য বিষয়ে ইসলাম টাইমস-এর পক্ষ থেকে তার সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর।
ইসলাম টাইমস : বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের আরাকানে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যারা একবার হত্যা ও নিপীড়নের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, তারাই এখন আবার তাদের স্বাগত জানাচ্ছে-মিয়ানমারের এই সদিচ্ছাকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখছেন।
গাজী ইয়াকুব : প্রথমত মিয়ানমার সরকার এবং সে দেশের জনগণের ব্যাপারে বিশ্ব মিডিয়ায় এ কথা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে তারা খুনি এবং হত্যাকারী। তাদের ভেতরে মায়া-মানবতা বলতে কিছু নেই। তারা চরম অমানবিক একটা জাতি। এর ফলে পশ্চিমাবিশ্ব এবং আরব রাষ্ট্রগুলো তাদের প্রতি বিরূপ হয়ে আছে বেশ কিছুদিন থেকেই। নানাভাবেই তারা মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে।
আরেকটা বড় কারণ হলো অং সান সু চি। রোহিঙ্গাদের এই ইস্যুর কারণে বিশ্বব্যাপী তার ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। তিনি মানবতাবাদী হিসেবে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন অথচ তার দেশেই মানবতা বার বার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তার সেই পুরোনো ভাবমূর্তি পুরুদ্ধারের একটা ব্যাপার আছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুর পর গত এক বছর ধরে মিয়ানমার বাণিজ্যিকভাবেও নানা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তাদের অনেক পণ্য যেগুলো বহির্বিশ্বে রপ্তানি হতো, বিশেষত আরববিশ্বে-সেসব রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।
এই প্রত্যাবাসন চুক্তির মাধ্যমে তারা মূলত এই নানামুখী সংকট সুরাহার একটা চেষ্টা করছে মাত্র।
ইসলাম টাইমস : মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের পর এইসব রোহিঙ্গাদের কোথায় জায়গা দেয়া হবে? তাদের পূর্বেকার বাড়িতে নাকি নতুন কোনো ক্যাম্পে?
গাজী ইয়াকুব : মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানেই তাদের রাখা হবে। তারা আর কখনো তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে কি না, সেটা বাংলাদেশ বা মিয়ানমার কোনো রাষ্ট্রই সমঝোতা চুক্তিতে উল্লেখ করেনি।
নতুন যে ক্যাম্পগুলো করা হয়েছে, এসব ক্যাম্প আমেরিকার গুয়ান্তানামো কারাগারের মতোই হবে। সেখানে প্রত্যাবাসন বলে যে ক্যাম্পের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো মূলত ক্যাম্পের আড়ালে আরেক কারাগার। সেখান থেকে কাউকে বাইরে যেতে দেবে না, তাদের নাগরিকত্ব থাকবে না, সন্তান নিতে পারবে না-এমন সব নিষেধাজ্ঞা আগের মতোই জারি থাকবে।
ইসলাম টাইমস : এসব তথ্য কি মিডিয়ায় এসেছে?
গাজী ইয়াকুব : এসব তথ্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে। বিশেষত আরব মিডিয়ায় এই ক্যাম্প নিয়ে বেশ আলোচনাও হয়েছে। তাদের কোথায় রাখা হবে, কীভাবে রাখা হবে-ছবিসহ প্রচার হয়েছে।
ইসলাম টাইমস : বাংলাদেশ থেকে যদি রোহিঙ্গারা আরাকানে ফিরে যায়, তাহলে কি তাদের চিরদিন এসব ক্যাম্পেই কাটাতে হবে?
গাজী ইয়াকুব : বাস্তবতা তাই বলছে। কেননা মিয়ানমার সরকার এখনও স্বীকার করেনি যে প্রত্যাবাসনের পর তারা রোহিঙ্গাদের পৈতৃক বাড়ি-ঘর, তাদের ক্ষেত-খামার, গবাদিপশু এবং অন্যান্য সম্পদ ফিরিয়ে দেবে কি-না। শুধু বলছে, আপাতত তাদের ক্যাম্পে রাখা হবে এবং পরে বিভিন্ন স্থানে পুনর্বাসন করা হবে।
কিন্তু যারা রোহিঙ্গাদের হত্যা করে বিনাশ করতে চায়, তাদের নির্বংশ করে নির্মূল করতে চায় তারা আবার তাদের বাড়িঘর ফিরিয়ে দেবে-এ কথা কি কোনো পাগল বিশ্বাস করবে? আমরা তো নিজেদের চোখেই বাস্তবতা দেখে এসেছি। এক বছর আগে নাফ নদীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখেছি, হাজার হাজার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কিছুদিন আগেও টেকনাফে গিয়ে দেখতে পেয়েছি, শুনতে পেয়েছি, সেখানে এখন কিছুই নেই। সব বিরান পড়ে আছে। পোড়া বাড়ি-ঘরের জায়গায় ওই এলাকার বৌদ্ধরা সবজি চাষ করে খাচ্ছে।
ইসলাম টাইমস : তার মানে কি মিয়ানমার বিশ্ববাসীর সামনে এই প্রত্যাবাসন কর্মসূচির মাধ্যমে একটা আইওয়াশ হাজির করছে?
গাজী ইয়াকুব : এটা সম্পূর্ণ একটা আইওয়াশ। হয়তো কিছু শরণার্থী তারা ফিরিয়ে নেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখানোর জন্য । বাদবাকি আর কিছুই হবে না। মনে রাখতে হবে, রোহিঙ্গারা কিন্তু মিয়ানমারের নাগরিক না। মিয়ানমারে তাদের কোনো নাগরিকত্ব নেই। জাতি হিসেবে তাদের স্বীকৃতি নেই। সুতরাং এমন স্বীকৃতিহীন, নাগরিকত্বহীন গোষ্ঠীকে মিয়ানমার কেন তার দেশে জায়গা দেবে? তারা রোহিঙ্গাদের তাদের দেশের নাগরিকই মনে করে না।
ইসলাম টাইমস : তাহলে বর্তমানের এই প্রত্যাবাসন কর্মসূচির পুরোটাই মিথ্যা?
গাজী ইয়াকুব : দেখুন, সেই ১৯৯১ সাল থেকে রোহিঙ্গারা বার্মিজ সেনাবাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাংলাদেশে আসছে। আমাদের দেশ মিয়ানমারকে বার বার বলে আসছে, তোমরা তাদের ফেরত নিয়ে যাও। কিন্তু তারা কি এর আগে ফেরত নিয়েছে? তাদের যদি সদিচ্ছাই থাকতো তবে অনেক আগেই তারা লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফেরত নিতো।
ইসলাম টাইমস : কিন্তু এর আগেও তো বিভিন্ন সময়ে কিছু কিছু রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন হয়েছে…।
গাজী ইয়াকুব : হয়েছে, কিন্তু সেটা খুবই অল্প পরিমাণে। সবচে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, যখনই প্রত্যাবাসন শুরু হয়, এর পর পরই সে দেশে রোহিঙ্গা মুসলিমদের দ্বারা কোনো দাঙ্গার ঘটনা ঘটানো হয়, কিছু সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ হলেই তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে বলতে শুরু করে, এসব রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করে বেড়াচ্ছে। তখন প্রত্যাবাসন কর্মসূচি আবার থেমে যায়। এমনই চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে।
ইসলাম টাইমস : বিভিন্ন সময় শোনা গিয়েছে, আরাকানের কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠী মিয়ানমার সেনাবাহিনী বা সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। এর বাস্তবতা আসলে কতটুকু?
গাজী ইয়াকুব : এর বাস্তবতা কতটুকু সেটার চেয়ে বড় বিষয় হলো, এই হামলাগুলো কেন করা হয়-সেটার কারণ খুঁজে বের করা। আপনি শুনলে হয়তো বিশ্বাস করবেন না, যারা এসব হামলা চালায় তারা এ জন্য হামলা করে যাতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে আর ফেরত পাঠানো না হয়। কারণ, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে যে পরিমাণ স্বাধীনতা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে সেটুকু স্বাধীনতা ও সুযোগ-সুবিধা তারা আরাকানে পায় না।
আমি যতদূর জানতে পেরেছি, যখনই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের কোনো কর্মসূচি শুরু হয় তখনই সংঘবদ্ধ কিছু চরমপন্থী গোষ্ঠী আরাকানের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করে। এর ফলে প্রত্যাবাসন কর্মসূচি ভেস্তে যায় এবং রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে বসবাসের বিষয়টি বেড়ে যায়। কে চায় স্বাভাবিক জীবন ছেড়ে হামলা, গুলি, নির্যাতনের জীবনে ফিরে যেতে?
ইসলাম টাইমস : তার মানে প্রত্যাবাসন যাতে না হতে পারে এর জন্য দু পক্ষই বিভিন্ন অপতৎপরতা চালায়। এক. মিয়ানমার সরকার পরোক্ষভাবে রোহিঙ্গা ও বার্মিজদের মাঝে দাঙ্গা লাগিয়ে দেয়। দুই. আরাকানীয় কিছু চরমপন্থী সংগঠন বার্মিজ বাহিনীর ওপর হামলা চালায় যাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কর্মসূচি ভেস্তে যায়…।
গাজী ইয়াকুব : এটা আমি অনেক রোহিঙ্গার কাছে জিজ্ঞেস করেছি, এই হামলাগুলো কে বা কেন সংঘটিত হয়। তারা জানিয়েছে, যখনই বাংলাদেশে বা আন্তর্জাতিকভাবে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কোনো কথা চলতে থাকে তখনই চরমপন্থী সংগঠনের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে বার্মিজদের ওপর হামলা করে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। ফলে রাষ্ট্রীয়ভাবে সেখানে হস্তক্ষেপ করা হয় এবং জাতিগত দাঙ্গা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে অনেকদিন যাওয়া আসার ফলে এসব তথ্য জানার সুযোগ আমার হয়েছে।
ইসলাম টাইমস : আপনি যেসব চরমপন্থী গোষ্ঠীর কথা বলছেন, এরা মূলত কারা এবং এদের লক্ষ্য কী?
গাজী ইয়াকুব : এসব সংগঠন নিজেদের আইএসপন্থী বলে দাবি করে। এরা আসলে আইএস বা জিহাদি টিহাদি কিছু না। বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রের পেট্রোডলার দিয়ে নিজেদের উদরপূর্তি এদের মূল লক্ষ্য। এসব চরমপন্থীরা আরব রাষ্ট্রগুলোর শেখদের কাছে গিয়ে রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপনের ভিডিও দেখিয়ে তাদের সাহায্য কামনা করে। শেখরা মুসলিমদের দুর্দশা দেখে তাদের রিয়াল-দিরহাম দেয় আর তারা সেগুলো আয়েশ করে ভোগ করে। এগুলো জিহাদের নামে বানোয়াটী আর ভাওতাবাজি ছাড়া কিছু নয়।
ইসলাম টাইমস : আচ্ছা…! তাহলে এখানকার যারা রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে, তাদের মনোভাব কী? তাদের জীবনযাপনের বর্তমান পরিস্থিতি কী?
গাজী ইয়াকুব : হ্যাঁ, বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের মানসিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তারা কেউই আরাকানে ফিরে যেতে চায় না। ফেরত পাঠাবে জানতে পেরে অনেকে আত্মহত্যাও করতে চেয়েছে। অনেকে ভয়ে লুকিয়ে বেড়াচ্ছে।
এদিকে আবার সরকারও শরণার্থী শিবিরগুলোতে নজরদারি বাড়িয়েছে। একটা সময় ছিল যখন নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত রোহিঙ্গারা পাসপোর্টের মাধ্যমে অন্যান্য দেশে চলে যেতে পারতো। কিন্তু এখন সে সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তারা অবৈধভাবে ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা জাহাজে করে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। অনেকে চলেও গেছে।
ইসলাম টাইমস : এই যে বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী, আপনি তো বেশ কিছুদিন তাদের নিয়ে কাজ করছেন। আপনার কাছে এই সমস্যার সমাধান কী?
গাজী ইয়াকুব : আমাদের দেশ একটা ছোট দেশ, উন্নয়নশীল দেশ। এমন একটি দেশে ২০ কোটি মানুষ। রিজিকের মালিক তো আল্লাহ। তবে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আমি সবসময় চাই তারা তাদের ন্যায্য ভূমি ফিরে পাক। তারা নিজেদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাক। এটাই সবচে সহজ সমাধান। এছাড়া আর কোনো সমাধানই টেকসই হবে না।
ইসলাম টাইমস : এই ১২ থেকে ১৫ লাখ রোহিঙ্গা যদি নিজ ভূমে ফিরে যেতে না পারে, তবে সেটা কি বাংলাদেশের জন্য কোনো হুমকি মনে করেন আপনি?
গাজী ইয়াকুব : আশংকার কথা যেটা সেটা তো আগেই বললাম। তবে এই বৃহৎসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতিকে আমি আরেক অর্থে আশীর্বাদ মনে করি। কী কারণে, সেটা বলি।
বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেমন আরব রাষ্ট্রগুলোতে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা প্রবাসী রয়েছে। এছাড়াও মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকাসহ বিশ্বের নানা দেশে আরও প্রায় ২ থেকে ৩ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। এই রোহিঙ্গাদের আত্মীয়-স্বজন সবাই কিন্তু বাংলাদেশে। প্রবাসী রোহিঙ্গারা ব্যাংক বা হুন্ডি যে মাধ্যমেই টাকা পাঠাক না কেন, সে খাত থেকে কিন্তু বাংলাদেশ ভালো রেমিটেন্স পাচ্ছে। প্রায় ৮ লাখ প্রবাসী রোহিঙ্গার পুরো রেমিটেন্স বাংলাদেশে আসছে।
আবার রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজার এলাকার স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যও চাঙ্গা হয়েছে। এটা আমি নিজে গিয়ে প্রত্যক্ষ করেছি। সুতরাং তাদের অবস্থানকে আশীর্বাদ বললেও ভুল বলা হবে না।
ইসলাম টাইমস : ইসলাম টাইমসকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
গাজী ইয়াকুব : আপনাকেও ধন্যবাদ।
