একজন হাজি আবদুল ওয়াহাব সাহেব : জীবনজুড়ে যার তাবলিগ

আতাউর রহমান খসরু ।।

তাবলিগ জামাতের আলমি শুরার আমির ও প্রবীণতম মুরব্বি হাজি আবদুল ওয়াহাব আজ (১৮ নভেম্বর) ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। আজ পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডি তাবলিগি মারকাজে বাদ মাগরিব তার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।

হাজি আবদুল ওয়াহাব রহ. কিছুদিন যাবত ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছিলেন। ডাক্তারের নিবিড় পরিচর্যায় ছিলেন তিনি। এছাড়াও দীর্ঘদিন তিনি শ্বাসকষ্ট সমস্যায় ভুগছিলেন। এ কারণে কয়েক বছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।

গত রাতে হঠাৎ তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয় এবং একপর্যায়ে তার ইন্তেকাল হয়।

তার মৃত্যুতে মুসলিম বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিশেষত পাকিস্তানের সর্বস্তরের মুসলমান শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান হাজি আবদুল ওয়াহাব রহ.-এর ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, হাজি আবদুল ওয়াহাব রহ.-এর অসামান্য দ্বীনি খেদমত চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমি তার রুহের মাগফিরাত ও জান্নাতে তার উচ্চ মর্যাদা কামনা করছি। আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদা দান করুন।

হাজি আবদুল ওয়াহাব রহ. ১৯২২ সালে তৎকালীন হিন্দুস্তানের রাজধানী দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের সময় তার পরিবার পাকিস্তানে হিজরত করে। তিনি লাহোর ইসলামিয়া কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন এবং সরকারি কালেক্টর পদে যোগদান করেন।

তিনি তার জীবনের প্রায় পুরোটা সময় তাবলিগের মেহনতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তাবলিগি মেহনতের অসামান্য ত্যাগ তাকে প্রথমে পাকিস্তান তাবলিগ জামাতের আমিরের মর্যাদা এনে দেয় এবং পরবর্তীতে তিনি তাবলিগ জামাতের আলমি শুরার আমির নির্বাচিত হন।

তাকে বলা হয় পাকিস্তান তাবলিগ জামাতের তৃতীয় আমির। তার পূর্বের দুজন আমির হলেন মুহাম্মদ শফী কুরাইশি এবং হাজি মুহাম্মদ বশির।

হাজি আবদুল ওয়াহাব রহ. ১৯৪৪ সালে তাবলিগ জামাতের সাথে সম্পৃক্ত হন। যুবক বয়সে হাজি আবদুল ওয়াহাব রহ. আহরারে ইসলাম-এর কর্মী ছিলেন। দেশবিভাগের পর তিনি এই দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেন।

১৯৪৪ সালে তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা ও আমির মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভি রহ.-এর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। তার সঙ্গে তিনি তাবলিগের মেহনতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন।

মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভি রহ.-এর সাক্ষাৎলাভের পর হাজি আবদুল ওয়াহাব রহ. তাবলিগের কাজে পূর্ণ মনোযোগ দেন এবং তার জীবন উৎসর্গ করেন কালেমার দাওয়াতের জন্য।

একসময় তাবলিগের কাজের স্বার্থে কালেক্টরের চাকরি ছেড়ে দেন এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে জীবনযাপন শুরু করেন। আল্লাহ তার তাওয়াক্কুলে এমন বরকত দেন যে সারা দুনিয়া তার সুবাস ছড়িয়ে যায়।

আরও পড়ুন : হাজি আবদুল ওয়াহাব রহ.-এর বিদায় : দেশের শীর্ষ আলেমদের শোক ও স্মরণ

হাজি আবদুল ওয়াহাব রহ. মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভি রহ.-এর সেই প্রথম পাঁচ সাথীর একজন ছিলেন যারা তাদের পুরো জীবন ইসলামের জন্য ওয়াকফ করেছিলেন।

হজরত মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভি রহ. ১৯২৭ সালে তাবলিগের কাজ শুরু করেন এবং ১৯৪৪ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাবলিগ জামাতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। তার মৃত্যুর পর মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি রহ. ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত এবং তারপর মাওলানা এনামুল হাসান রহ. ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করেন।

মাওলানা এনামুল হাসান রহ.-এর ইন্তেকালের দুই মাস পর ১০ জুন ১৯৯৫ সালে হাজি আবদুল ওয়াহাব রহ. তাবলিগ জামাতের আলমি শুরার আমির নিযুক্ত হন এবং আমৃত্যু তথা ১৮ নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

সারা জীবন তাবলিগ জামাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও যে কোনো দ্বীনি আন্দোলনে তার প্রচ্ছন্ন সমর্থন থাকতো। বিশেষত তিনি পাকিস্তানে খতমে নবুওয়াত আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণে করেন।

এছাড়াও ২০১৩ সালে সরকার ও পাকিস্তান তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তার অংশগ্রহণে একাধিকবার পাকিস্তান বড় ধরনের জাতীয় সংকটের হাত থেকে রক্ষা পায়।

ডেইলি জং ও এক্সপ্রেস নিউজ অবলম্বনে

পূর্ববর্তি সংবাদবিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার পর্ব চলছে
পরবর্তি সংবাদথার্টিফার্স্ট নাইটে বাড়ির ছাদেও কোনো অনুষ্ঠান করবেন না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী