আতাউর রহমান খসরু ।।
তিনশো আসনের প্রার্থীদের মনোনয়ন সম্পন্ন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ১৭ ও ১৮ নভেম্বর দুইদিনে মনোনয়ন ফরম বিতরণ সম্পন্ন করলো দলটি।
দলের আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম শনিবার কেন্দ্রীয় সদস্যদের মাঝে মনোনয়ন ফরম বিতরণ করে মনোনয়ন ফরম বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
এ সময় তিনি দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘বড় দুইটি দলকে প্রত্যাখ্যান করে দেশবাসী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রতীক হাতপাখাকে বিজয়ী করবে। যদি কালো টাকা, পেশীশক্তি ও সন্ত্রাসমুক্ত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভালো ফলাফল করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
ইসলামী আন্দোলনের আমির অন্যান্য ইসলামি দলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘ইসলামের হেফাজতের প্রশ্নে ইসলামপন্থী সব দল এক ও অভিন্ন হয়ে কাজ করবে বলে আমরা আশা করছি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামীতে তাগুতি শক্তিকে পরাজিত করে ইসলামের পক্ষে শক্তিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানো সম্ভব হবে।’
কোনো ধরনের জোটে না গিয়ে তিনশো আসনে একক নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিষয়টি বেশ আলোচনাও রয়েছে গণমাধ্যমে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও নির্বাচন সেলের সদস্য মাওলানা গাজী আতাউর রহমান জানান তাদের দলের নির্বাচনী প্রস্তুতি ভালো। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করবো এবং তিনশো আসনেই করবো এ সিদ্ধান্ত আমরা আরও এক থেকে দেড় বছর আগে নিয়েছি। তখন থেকেই দল গোছানো ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার চেষ্টা করে আসছি। আল হামদুলিল্লাহ! আমাদের পরিকল্পনা মোতাবেক নির্বাচনের ৮০ ভাগ প্রস্তুতিই সম্পন্ন করতে পেরেছি।’
তাকে প্রশ্ন করেছিলাম, কোনো আসনে বিজয়ী হতে না পারলেও কেন সব আসনে প্রার্থী দিচ্ছেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিজয় আমাদের প্রধান লক্ষ্য তবে একমাত্র লক্ষ্য নয়। আমরা তিনশো আসনে প্রার্থী দিয়েছি যেন ভোটাররা একজন সৎ মানুষকে ভোট দেয়ার সুযোগ পায়। তাছাড়া দেশের রাজনীতি একটি স্বতন্ত্র ইসলামি ধারা তৈরি করা আমাদের বড় একটি লক্ষ্য। আমরা মনে করি, তিনশো আসনে নির্বাচন করলে আমরা সারা দেশের ভোটারদের কাছে আমাদের দলীয় দাওয়াত পৌঁছাতে পারবো। এতে দলের অবস্থান শক্তিশালী হবে। কারণ নির্বাচন মানুষের কাছে যাওয়ার একটি বড় মাধ্যম।’
অন্যদিকে সব আসনে পরাজিত হলে দলের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে এমন আশঙ্কার কথা নাকচ করে দেন তিনি। তার ভাষায় আমাদের কর্মীদের সামনে তিনশো আসনে নির্বাচন করার কারণ স্পষ্ট। তাছাড়া রাজনীতিকে তারা তাদের ধর্মীয় দায়িত্বই মনে করে।
তিনশো আসনে নির্বাচন করছেন কিন্তু কতোটি আসনে বিজয় প্রত্যাশা করেন? এবং কতোটি আসনে প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ অবস্থানে যেতে পারবেন বলে আশা করছেন? ‘আমরা তিনশো আসনেই বিজয় প্রত্যাশা করি। কিন্তু আপনি যা বুঝাচ্ছেন তা মনে হয়, সম্ভাবনাময় আসন কয়টি? সেটা বলা যাবে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর। কারণ, আমার বিপরীত প্রার্থী কে কে, তাদের দলীয় অবস্থান কেমন, নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন সবকিছুর উপর নির্ভর করে জয়-পরাজয়ের সম্ভাবনা। সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে আমরা শেষ পর্যন্ত আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাবো। -উত্তর দেন গাজী আতাউর রহমান।
আরও পড়ুন : মনোনয়ন ফরম বিক্রিতে এগিয়ে বিএনপি, ইসলামি দলগুলোতে খেলাফত আন্দোলন
‘একলা চল’ নীতি অবলম্বন করে আসলেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির দলীয় প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে সব ইসলামি দলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এর ব্যাখ্যা জানতে চাইলে গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘এক হলো, এমন আসন সংখ্যাই বেশি যেখানে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে কেবল আমাদের প্রার্থীই থাকবে, সেখানে ইসলামি দলের নেতাদের মনোযোগ কামনা করবো আমরা। তাছাড়া নেতাদের বাইরে সাধারণ কর্মীরাও আমাদের প্রার্থীকে ব্যক্তিগত বিবেচনায় অগ্রাধিকার দিতে পারেন। বা এমনও অনেক দল আছে যারা কোনো জোটে নেই এবং তারা নির্বাচনও করছে না বা সব আসনে করছে না তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ তো আমরা করতেই পারি।
নির্বাচনের প্রস্তুতি গুছিয়ে আনলেও এবং নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকার ঘোষণা দিলেও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের। দলটি মনে করে, নির্বাচন কমিশন এখনও আস্থা অর্জনের মতো কোনো কাজ দেখাতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনের আচরণ দেখে মনে হয় না একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তারা উপহার দিতে পারবে।
মাহফিলে নির্বাচনী প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা : কী বলেন ইসলামি চিন্তাবিদরা
