মাওলানা সাদের বিরোধী বই করায় হত্যার হুমকিও পেয়েছি : মাওলানা আবদুল্লাহ আল ফারুক

মাওলানা আবদুল্লাহ আল ফারুক। বাংলাদেশে ইসলামি বই অনুবাদের ক্ষেত্রে তিনি বহু গ্রন্থের অনুবাদক। এ পর্যন্ত তার অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭৯টি। উচ্চতর পড়াশোনা করেছেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে এবং শিক্ষকতা করেছেন বাংলাদেশের জামিয়া সোবহানিয়া ও বারিধারা মাদরাসায়। সম্প্রতি এই অনুবাদক তাবলিগ জামাতের সাম্প্রতিক বিবদমান বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক বেশ কিছু বই অনুবাদ করে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। তার সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে ইসলাম টাইমস-এর পক্ষ থেকে কথা বলেছেন আতাউর রহমান খসরু


 

ইসলাম টাইমস : আপনি তো অনেক বই অনুবাদ করেছেন। অন্য অনেক কাজ থাকতে আপনি মাওলানা সাদ কান্ধলভি বিষয়ক বই অনুবাদ শুরু করলেন কেন?

আবদুল্লাহ আল ফারুক : আমি দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্র। দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শ আমি বুকে ধারণ করি এবং দ্বীনি স্বার্থে মানুষের মাঝে দেওবন্দের আদর্শ ও চেতনা ছড়িয়ে দিতে চাই। আপনি দেখবেন, আমার অধিকাংশ বই পাক-ভারত উপমহাদেশের দেওবন্দি মতাদর্শী আলেমদের।

দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার পর আমার মনে হলো, বিষয়গুলো বাংলাভাষী মানুষের সামনেও আসা উচিত। কারণ, দারুল উলুম দেওবন্দ উপমহাদেশের ইসলাম ও মুসলমানের বিশ্বস্ত অভিভাবক। অন্তত উলামায়ে কেরামের বিশ্বাস এমনই।

ইসলাম টাইমস : মাওলানা সাদ সম্পর্কে কয়টি বইয়ের কাজ করেছেন?

আবদুল্লাহ আল ফারুক : এই পর্যন্ত ১৭টি বইয়ের কাজ করেছি। বাজারে এসেছে ১৫টি। সামনে আরও দুটি করার ইচ্ছে আছে।

ইসলাম টাইমস : আপনার অনূদিত বইগুলো থেকে যদি মাওলানা সাদের অনুসারী কেউ উপকৃত হতে চায় তাহলে কোন কোন বই পড়ার পরামর্শ দেবেন?

আবদুল্লাহ আল ফারুক : তাহলে আমি কয়েকটি বইয়ের কথা বলবো। তা হলো, নিজামুদ্দিনের মাদরাসা কাশেফুল উলুমের পরিচালনা পরিষদের সদস্য চৌধুরী আমানত উল্লাহ রচিত নিজামুদ্দিন মারকায নেপথ্যের কিছু সত্য, দারুল উলুম দেওবন্দের অবস্থান। এটা মূলত দারুল উলুম দেওবন্দের দুটি ফতোয়া, আকাবির উলামা ও মুরুব্বিদের দিকনির্দেশনা; এই বইটা মূলত মাওলানা সাদের সংশোধনের জন্য পাঠানো উলামায়ে কেরামের চিঠি। শায়খুল হাদিস জাকারিয়া রহ.-এর নাতি মাওলানা শাহেদ সাহরানপুরি রচিত ‘মাওলানা যুবায়রুল হাসান কান্ধলভি রহ. অব্যক্ত বেদনার বিস্মৃত ইতিহাস, ‘দ্বীন শিখিয়ে বেতন গ্রহণ কি নাজায়েয’?।

এই বইগুলো পড়লে বোঝা যাবে মাওলানা সাদ-এর সমস্যাগুলো কী এবং কেন তার বিরোধিতা করছেন উলামায়ে কেরাম।

ইসলাম টাইমস : আপনার বইগুলোর উৎস নিয়ে সাদপন্থীরা সন্দেহ প্রকাশ করে। আপনি এ বিষয়ে কী বলবেন?

আবদুল্লাহ আল ফারুক : আমি তো বলেই রেখেছি আমার অনূদিত বইয়ের মূল বইগুলোর ছাপানো কপি আমার কাছে আছে। কেউ দেখতে চাইলে আমি দেখাতে পারবো। তাছাড়া এসব কথা আমাদের কানে আসার পর থেকে আমরা বইয়ের পেছনে মূল বইয়ের প্রচ্ছদও ছাপানো শুরু করেছি।

ইসলাম টাইমস : আপনার ব্যাপারে অভিযোগ আছে আপনি তাবলিগে সময় দেননি…!

আবদুল্লাহ আল ফারুক : আমি মাদরাসায় পড়ার সময় একাধিকবার তাবলিগে সময় দিয়েছি। দারুল উলুম দেওবন্দে থাকার সময়ও তাবলিগে সময় দিয়েছি। নিজামুদ্দিনেও গিয়েছি। সাদপন্থীদের অন্যতম আলেম মুফতি জিয়া বিন কাসেম দেওবন্দে আমার এক বছরের সিনিয়র ছিলেন। তিনিও জানেন তাবলিগে আমি সময় দিয়েছি। আমার মহল্লার তাবলিগের কাজেও আমি সময় দিই, আলহামদুল্লিাহ।

ইসলাম টাইমস : সাদপন্থীদের মধ্যে দারুল উলুম দেওবন্দের ব্যাপারে পারস্পরিক বিরোধপূর্ণ আচরণ লক্ষ্য করা যায়। যেমন, কখনও তারা দেওবন্দকে অস্বীকার করছে আবার কখনও দেওবন্দের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা বা ভুল বক্তব্য প্রচার করছে। এটা কেন করে?

আবদুল্লাহ আল ফারুক : এই প্রশ্নের উত্তর তারাই ভালো দিতে পারবে। তবে আমার যেটা মনে হয়, বাংলাদেশে যারা মাওলানা সাদের অনুসারী তাদের মধ্যে আলেম কম এবং যে ক’জন আলেম আছেন তাদের ইলমি যোগ্যতাও খুব কম। তাই তারা একদিকে যেমন পারছে না দারুল উলুম দেওবন্দকে স্বীকার করতে আবার অন্যদিকে পারছে না দেওবন্দের কথার উত্তর দিতে। বিপরীতে তারা অপব্যাখ্যা ও ভুল প্রচারকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে।

আরও পড়ুন: তাবলিগ জামাত : এক নিঃশব্দ আন্দোলন

আরও পড়ুন: নবীগণের সিরাত আলোচনা করব হেদায়েত গ্রহণের জন্য, দোষ খোঁজার জন্য নয়

ইসলাম টাইমস : মাওলানা সাদ-এর অনুসারী আলেমরা আলেম হয়েও কেন তার পেছনে পড়ে আছেন-আপনার কী মনে হয়?

আবদুল্লাহ আল ফারুক : মাওলানা সাদের অনুসারী যেসব আলেম আছেন আমার মনে হয় তাদের দুইভাগে ভাগ করা যায়। এক. যারা মাওলানা সাদের ভুলগুলো স্বীকার করেন। কিন্তু তারা মনে করেন, এসব ভুলের জন্য তাকে নিজ দায়িত্ব থেকে সরানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তাকে সরালে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের ক্ষতি হবে। অন্ধভক্তি থেকেই তারা এসব করেন।

দুই. দ্বিতীয় শ্রেণি এমন যারা মাওলানা সাদের ভুলগুলো জানেন এবং নিজস্ব মহলে স্বীকারও করেন। কিন্তু নানাবিধ স্বার্থের কারণে তার অনুসরণ ছেড়ে আসতে পারেন না। তাদের পক্ষের একজন আলেম একবার মাওলানা আবদুল মালেক সাহেবের কাছে আসেন। আলোচনায় তিনি শেষ পর্যন্ত নতিস্বীকার করেন। কিন্তু তাকে তওবা করতে বললে ওই আলেম বলেন, আমার অনেক কিছু তাদের সাথে জড়িত। আমি ইচ্ছে করলেই তাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে পারবো না।

ইসলাম টাইমস : মাওলানা মওদুদির সঙ্গে মাওলানা সাদের স্খলনের মিল খুঁজে পান কি? কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে আপনার কী মনে হয়?

আবদুল্লাহ আল ফারুক : আমারও মনে হয়েছে, মাওলানা সাদের স্খলনের সঙ্গে মওদুদির স্খলনের অনেক মিল রয়েছে। যেমন, মওদুদি নবীদের পুতঃপবিত্রতা ও সাহাবাদের ন্যায়পরায়ণতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। মাওলানা সাদও ঠিক একই কাজ করেছেন। তিনি হজরত মুসা ও ইউসুফ আ.-এর উপর দোষারোপ করে কথা বলেছেন।

মওদুদি সাহেব দ্বীনের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠাকে মূল বলেছেন এবং অন্যান্য দ্বীনি বিধানকে সহায়ক বলেছেন। মাওলানা সাদও নির্দিষ্ট নেযামের দাওয়াতের কাজকে দ্বীনের সব বিধানের উপর অতিরিক্ত প্রাধান্য দিয়েছেন।

ইসলাম টাইমস : উভয় দলের একই পরিণতির আশঙ্কা করেন?

আবদুল্লাহ আল ফারুক : মাওলানা সাদ যেহেতু জীবিত আছেন, তাই আমরা তার হেদায়েতের প্রত্যাশাই করি। মওদুদি জামাতের পরিণতি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।

ইসলাম টাইমস : মাওলানা সাদ-এর বিরুদ্ধে বই অনুবাদ করছেন। কখনও কোনো হুমকি পেয়েছেন?

আবদুল্লাহ আল ফারুক : তা তো পেয়েছিই। আমার কাছে মেসেঞ্জারে পাঠানো অনেকগুলো স্ক্রিনশট ও অডিও রেকর্ড আছে। আমি হুমকি নিয়ে চিন্তিত না। কারণ, মানুষের জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। আমাদের রাশেদুল হক ভাই মারা গেলেন। খুব ভালো মানুষ ছিলেন। কেউ ভেবেছিলো এই বয়সে আর এইভাবে তার মৃত্যু হবে? বরং আল্লাহ আমাকে এই কাজের জন্য কবুল করেছেন সেটাকেই সৌভাগ্য মনে করি।

ইসলাম টাইমস : ওয়াজাহাতি জোড়ে কথা বলেন না কেন?

আবদুল্লাহ আল ফারুক : আমি ওয়াজাহাতি জোড়ে অংশগ্রহণ করি। কিন্তু কথা বলি না। কারণ, স্বভাবগত কারণেই আমি আলোচনা এড়িয়ে চলি। ওয়াজাতি জোড়ে যারা কথা বলেন, তারা আমার মুরব্বি। আমার চেয়ে তাদের যোগ্যতাও অনেক বেশি। আমি মনে করি, তাদের কথা বলাই যথেষ্ট।

আরেকটা বিষয় আল্লাহ তায়ালা আমাকে দিয়ে লেখার খেদমত নিচ্ছেন। এখন অন্য কারো মাধ্যমে বয়ানের খেদমত নিলে সমস্যা কোথায়?

ইসলাম টাইমস : আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আবদুল্লাহ আল ফারুক : আপনাকেও ধন্যবাদ।

পূর্ববর্তি সংবাদনিখোঁজ বিএনপি নেতার লাশ উদ্ধার: পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ সিইসির
পরবর্তি সংবাদইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বিষয়ে সিদ্ধান্ত দুয়েকদিনের মধ্যে, বললেন সিইসি