আতাউর রহমান খসরু ।।
আওয়ামী লীগের পর আজ থেকে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা শুরু করেছে বিএনপি। বিকেলে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে দলের খালেদা জিয়ার মনোয়নপত্র বিতরণের মাধ্যমে প্রার্থী ঘোষণা শুরু করে বিএনপি।
তবে আজ সকাল থেকেই গণমাধ্যমে বিএনপির জোটের প্রার্থীদের সম্ভাব্য তালিকা প্রকাশ পেতে শুরু করে। কোনো কোনো গণমাধ্যমে শরিকদের জন্য বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনের পৃথক তালিকাও প্রকাশ পায়। তালিকায় অনুযায়ী বিএনপির শরিক কওমি মাদরাসা ভিত্তিক ইসলামি দলগুলোর প্রাপ্ত আসন সংখ্যা মাত্র ৩টি।
তাহলো, হবিগঞ্জ-৪ আসনে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, যশোর-৫ আসনে মুফতী মোহাম্মদ ওয়াক্কাস এবং সুনামগঞ্জ-৩ আসনে এ্যাডভোকেট শাহীনূর পাশা চৌধুরী।
গণমাধ্যমে এই তিন নেতার নাম উল্লেখ করা হলেও এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নন বলে ইসলাম টাইমসকে জানিয়েছেন তারা। তবে তারা বিএনপির পক্ষ থেকে সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার কথা স্বীকার করেন।
দাবির তুলনায় আসন সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে দল দুটির মধ্যে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (উভয়াংশ) প্রাপ্ত আসন নিয়ে আপাতত সন্তোষ প্রকাশ করলেও চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে খেলাফত মজলিস।
সুনামগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন পাওয়া এ্যাডভোকেট শাহীনূর পাশা বিএনপি জোটের সবুব সঙ্কেত পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন ইসলাম টাইমসকে। তিনি বলেন, গতকালের বৈঠকে তারা আমাকে এমনটিই (আসন পাওয়ার কথা) বলেছেন।
যদি আর কোনো আসন দেয়া না হয় তাহলে কি করবেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের নীতি-নির্ধারণী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যেকোনো অবস্থায় আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে নির্বাচন করবো। আমরা আশা করি, তারা আমাদের যথাযথ মূল্যায়ন করবে। তবে তা না করলেও আমরা জোটে থাকবো।
তিনি আরও জানান, আমরা একটি আসনে মোটেও সন্তুষ্ট নয়। আমাদের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমি আজ বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং আরও ছয়টি আসন দাবি করেছেন। কেন এই ছয় আসন আমাদের দেয়া দরকার তাও আমরা বুঝিয়ে বলেছি। আশা করি, তারা তাদের সিদ্ধান্তের পুনঃবিবেচনা করবেন।
আরও পড়ুন : ‘এক আসনে এক প্রার্থী’ নীতি : ইসলামি দলগুলোর সমঝোতা-উদ্যোগ কতোটা সফল হবে?
একই অবস্থান তুলে ধরেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম-এর সভাপতি মুফতী মোহাম্মদ ওয়াক্কাস। তিনিও জানান, যেকোনো মূল্যে তারা জোটের সঙ্গে আছেন। দলের দাবি পূরণ না হলেও বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় তার দল জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে থেকেই নির্বাচন করবে।
তবে নিজের আসনটিও এখনও নিশ্চিত নয় বলে জানান এই নেতা। তিনি বলেছেন, বিষয়টি নিশ্চিত হতে তিনি আজই বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে যাবেন।
তবে নিজের আসন নিয়ে সন্তুষ্ট নন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের। পাঁচটির কম আসন দিলে তারা বিএনপিকে জোট ছেড়ে পৃথক নির্বাচন করবেন বলেও হুমকি দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘পাঁচটি কম আসন হলে জোটে থাকা না থাকার বিষয়টি আমরা নতুন করে ভেবে দেখবো বলে জানিয়েছি বিএনপিকে। বিএনপি এখনও কিছু জানায়নি। দেখি তারা কি বলে।’
তার কাছেই প্রশ্ন করেছিলাম, জমিয়ত ও খেলাফত মজলিস দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে থাকার পরও নামমাত্র আসন পাচ্ছে, বিপরীতে গণফোরামসহ ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য দলগুলো তুলনামূলক বেশি আসন পাচ্ছে কেন?
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট করেছে। তাই তাদের চাপ সহ্য করে নিতে হচ্ছে। তাদের দিক সেটা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের মূল্যায়নটা আমরা চাই।’
আরও পড়ুন : জোটে নিতে টানাটানি, আসনের খবর নেই!
তিনিও আরও বলেন, ‘আমি বিএনপিকে বলেছি, আমরা সুখে-দুঃখে সব সময় আপনাদের সাথে ছিলাম। বিষয়টা ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না। এখন দেখার বিষয় হলো তারা কী করে।’
বিএনপি তাদের যথাযথ মূল্যায়ন না করলে সালাম জানানোর দিকেও ইঙ্গিত করেন এই নেতা।
অবশ্য মুফতী ওয়াক্কাস মনে করেন, বিএনপির হাইকমান্ড যা করছেন তা ঠিকই করছেন। কারণ, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ায় বিএনপি হালে পানি পেয়েছে। তার ভাষায়, ‘প্রবাদ আছে, ‘সিঁকির মতো সিঁকি হলে দুই সিঁকিতে এক টাকা হয়’। গণফোরাম আসার পর বিএনপির গুণগত মান বেড়েছে। ওজন বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। তারা না আসলে বিএনপি এতোদিন উড়ে যেতো। আমরা কী করতে পারতাম?’
তবে বিএনপির এমন সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের অপর এক মনোনয়ন প্রত্যাশী। দলের যুগ্ম মহাসচিব পদধারী এই প্রার্থী বলেন, ‘আমরা বিএনপির এমন সিদ্ধান্ত মানবো না। শেষ পর্যন্ত তারা যদি আমাদের মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয় তবে আমরা ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো। আমরা চাই না তারা আমাদের বাধ্য করুক।’
