আবরার আবদুল্লাহ ।।
রাজনীতিতে সবচেয়ে অস্থিতিশীল দল হিসেবেই পরিচিত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। মুহূর্তে মুহূর্তে নিজের অবস্থান পরিবর্তনের জন্য বরাবরই আলোচনায় থাকে দলটি।
এবারের নির্বাচনেও দলটির একই চিত্র ফুটে উঠেছে। তারা কখনও বলছে একক নির্বাচন করবে আবার কখনও বলছে মহাজোটের অংশিদার হিসেবে নির্বাচন করবে।
জাতীয় পার্টির এই অবস্থানের কারণে বিপদে পড়েছে তার সাথে জোট করা দলগুলো। তারা ঠিক করতে পারছেন না আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের ভূমিকা ও অবস্থান কি হবে।
এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টি তার শরিকদের আসনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। আসন বণ্টন সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্নের উত্তর একটিই ‘আপনাদের আসনগুলোর ব্যাপারে মহাজোটের সঙ্গে সমাধানে যেতে পারিনি। তবে চেষ্টা করছি’। কবে নাগাদ সেই চেষ্টা শেষ হবে তাও ঠিক করে বলছে না দলের নীতি নির্ধারকরা।
শুধু শরিক নয়, নিজ দলের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে।
গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, জাতীয় পার্টির সঙ্গে মহাজোনের ৪৫টি আসনে সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু দলটি তা নিয়ে লুকোচুরি করছে শরিক দল ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে।
আরও পড়ুন : আসনপ্রাপ্তি নিয়ে যা বললেন বিএনপি জোটের ইসলামি দলের ৩ নেতা
একদিকে মহাজোট থেকে প্রাপ্ত আসনে দলের মনোনীত প্রার্থীদের চিঠি দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছে দলটি। যেমন ঢাকা-৪ আসনে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৬ কাজী ফিরোজ রশিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, খুলনা-১ সুনীল শুভ রায়, লালমনিরহাট-১ মেজর অব. খালেদ আখতার, ঠাকুরগাঁও থেকে হাফিজউদ্দিন আহমেদ মহাজোটগত মনোনয়ন পেয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।
অন্যদিকে আরও ১৫৫ আসনসহ ২০০ দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে।
দলীয় নেতা কর্মীরা এখনও জানে না দুইশো প্রার্থীর মধ্যে কারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করবে। অবশ্য জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বিষয়টিকে ‘কৌশল’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তবে তার কৌশলকে নিজ দলের নেতা-কর্মী ও শরিকদের সঙ্গে প্রতারণা বলে মনে করছেন অনেকেই। অভিযোগ উঠেছে, দলীয় মনোনয়ন যাদের দেয়া হয়েছে, তাদের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের স্বাক্ষর নিয়ে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ চূড়ান্ত মনোনয়নের সময় ৪৫ জন ছাড়া বাকিরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য থাকবেন। এটাকে ‘রাজনৈতিক প্রতারণা’ হিসেবেই দেখছেন মনোনয়ন প্রত্যাহারের স্বাক্ষরকারীরা।
তাদের একজন হচ্ছেন বগুড়া-৫ আসন থেকে মনোনয়নপ্রাপ্ত তাজ মোহাম্মাদ শেখ। তিনি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে বলেন, ‘মনোনয়ন আমাকে দেয়া হলো। কিন্তু দল যদি চায় আমি যেন প্রত্যাহার করি সেজন্য একটি স্বাক্ষরও নিয়ে রাখা হলো। আমার ভয়টা কিন্তু থেকেই গেলো।’ এটাকে তিনি রাজনৈতিক প্রতারণা বলেই আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘দল যদি তাকে প্রত্যাহার করতে বলে তিনি অবশ্যই মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন। তবে সেটি হবে রাজনৈতিক প্রতারণা।’
আরও পড়ুন : আসন বণ্টনে এখনও সুরাহা হয়নি : বিকল্প প্রস্তুতি জমিয়ত ও খেলাফত মজলিসে!
একইভাবে বিষয়টিকে শরিকদের সঙ্গে প্রতারণার কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের একজন যুগ্ম মহাসচিব। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ‘৪৫ আসন প্রাপ্তির খবর আমি গণমাধ্যমে দেখেছি। তিনি আমাদের বলেছেন, আপনাদের আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ কোনো ছাড় দেয়নি। আমার জানা মতে জাতীয় পার্টি তার সব শরিকদের একই কথা বলছে।’
দুইশো আসনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়াকেও জাতীয় পার্টির এক প্রকার প্রতারণা হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন। কারণ, আমার আসন চাইলে যেন তিনি বলতে পারেন এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। দেখেন না আমরাই দুইশো প্রার্থী মাঠে রাখছি।’
অন্যদিকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রস্তাবিত ‘এক আসনে একজন ইসলামি দলের প্রার্থী‘ প্রস্তাবটিও সামনে এগুচ্ছে না। কারণ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তাদের অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে বিএনপির শরিক খেলাফত মজলিস ও জমিয়তও আসন পেয়ে জোটের সঙ্গে সক্রিয় হচ্ছে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। প্রস্তাবক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও শরিক জাতীয় পার্টির আসন বণ্টনের দিকে তাকিয়ে আছে। সুতরাং জেটের বাইরে থাকা ইসলামী ঐক্যজোট ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নির্বাচনী সমঝোতা কোনো কাজে আসবে বলে মনে করছেন না অনেকেই।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের এই নেতা জানান, এরশাদের সঙ্গে আসন বণ্টনে কোনো সুষ্ঠু সমাধান না হলে নির্বাচিত কিছু আসনে তারা এককভাবে নির্বাচন করবে। এবং পর্যন্ত তারা ২০ জন দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র দিয়েছেন। একক নির্বাচন করলে এর সংখ্যা আরও বাড়বে।
