ইসলাম টাইমস ডেস্ক : নিউইয়র্ক শরিয়া বোর্ডের কার্যালয় নিউইয়র্কেই, কিন্তু এর কার্যক্রম চলছে নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি, পেনসিলভানিয়া, কানেকটিকাট, মিশিগান, রোড আইল্যান্ডসহ ৫-৬টি স্টেটে । শরিয়া বোর্ড যে দুটি কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মুসলিমদের মাঝে ব্যাপক সেবা দিচ্ছে তা হলো, ফ্যামিলি কাউন্সিলিং ও হালাল যবীহা নিশ্চিত করা ।
পারিবারিক জীবনে ভাঙনের কালো বাতাস নেমে এলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বজায় রাখতে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করে শরীয়া বোর্ড। আমেরিকার বহু মানুষ তাদের পারিবারিক সমস্যার সুরাহার জন্য শরিয়া বোর্ডের শরণাপন্ন হয়। আমেরিকা-ইউরোপে আধুনিক মুসলমানদের মধ্যে ডিভোর্সের হার বাড়ছে এখন। পশ্চিমা দেশগুলোর কুপ্রভাব মুসলিম পরিবারগুলোতেও ব্যাপকভাবে পড়ছে। আদালতে মামলা চলা বহু পরিবার শরিয়া বোর্ডে এসে নিজেদের সমস্যার সমাধান নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে ওই দেশের আদালতও সহযোগিতা করে। শরিয়া বোর্ডের সিদ্ধান্ত বা সুপারিশ তারা গ্রহণ করে।
প্রসঙ্গত, আমেরিকায় শরিয়া বোর্ড প্রতিষ্ঠার প্রথম উদ্যোগ নেন হায়দারাবাদের শায়খ মুফতি নাওয়ালুর রহমান। ২০১৩ সালে নিউইয়র্ক শাখা প্রতিষ্ঠার সময় সর্বসম্মতিক্রমে এর চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হন প্রবীণ বাংলাদেশি আলেম শায়খ মুফতি জামাল উদ্দিন। এ বোর্ডের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন হায়দারাবাদের মুফতি নোমান ওয়াজির কাসেমি, হায়দারাবাদের মুফতি রুহুল আমিন কাসেমি, বাংলাদেশের মুফতি খালেদ কাউসার, পাকিস্তানের মাওলানা কাসেম আজিজ।
বোর্ডটি সরকার অনুমোদিত। শরিয়া বিষয়ক একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। সেবামূলক সংস্থা। বহুমুখী দীনি খেদমত আনজাম দেয় এই শরিয়া বোর্ড।
হালাল যবিহার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতেও শরিয়া বোর্ড কাজ করে থাকে। শরিয়া বোর্ড এ বিষয়ে বহুমুখি সেবা দিয়ে থাকে। তারা নিউইয়র্কে এ পর্যন্ত অনেকগুলো প্রোগ্রাম করেছে। ইতোমধ্যে নিউইয়র্কে কিছু দোকান ও কয়েকটি রেস্টুরেন্ট সার্টিফাইড করেছে। যাদের যবিহা সহি এবং গোশত হালাল। আগে মুসলিমরা বিষয়টি বুঝতো না। বোর্ডের কল্যাণে এখন মুসলমানরা এ বিষয়ে সচেতন হচ্ছে।
নিউইয়র্কের দোকানগুলোতে সাধারণত যবাই করা প্যাকেটজাত মুরগি বিক্রি হয়। মুরগি পরিবেশনকারী এসব কোম্পানিগুলোকে সার্টিফাইড বা সত্যায়িত করে শরিয়া বোর্ড। পদ্ধতি হলো, শরিয়া বোর্ড প্রথমত পরিবেশনকারীদের স্লটারহাউজ- যেখানে মুরগি যবাই করা হয়- যাচাই করে দেখে ওখানে মুসলমানরা যবাই করে, না কি অমুসলমান? হাতে জবাই করে, না কি মেশিনে? অমুসলমান হলে এবং মেশিনে যবাই করলে শরিয়া বোর্ড অনুমোদন দেয় না।
পরিবেশকরা যদি অনুমতি দেয়, যে কোনো সময় গিয়ে শরিয়া বোর্ড তাদের স্লটারহাউজ দেখতে পারে, তা হলেই শরিয়া বোর্ড তাদের সার্টিফাইড করার বিষয়টি চিন্তা করে। শরিয়া বোর্ড এ পর্যন্ত কয়েকটি পরিবেশককে সার্টিফাইড করেছে। দোকানও মনিটরিং করে শরিয়া বোর্ড।
বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় এ বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে ওলামায়ে কেরামের মনিটরিংয়ের আওতায় চলে এসেছে। তারা অনায়াসে বলতে পারে, ৯০ ভাগের বেশি মুসলমান জবাইকৃত হালাল গোশত খায়। ইংল্যান্ডেও ৮৫ ভাগের বেশি মুসলমান জবাইকৃত হালাল গোশত খায়। শ্রীলঙ্কার ওলামায়ে কেরামও এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছেন। সেখানেও ৯৫ ভাগ মানুষ যবিহা হালাল খায়। একই সিস্টেমে তারা পরিচালিত হচ্ছে।
শরিয়া বোর্ডের আরেকটি কাজ হচ্ছে, চাঁদ দেখা। আগে শরিয়া বোর্ড এ কাজটি একাই করত। এখন আমেরিকার ২২টি স্টেটের আলেম প্রতিনিধি নিয়ে একটি নতুন কমিটি করা হয়েছে। যেটার নাম- সেন্ট্রাল হেলাল কমিটি। এটির চেয়ারম্যান মুফতি নাওয়ালুর রহমান এবং ভাইস চেয়ারম্যান মুফতি জামাল উদ্দিন।
ইউরোপ-আমেরিকায় বসবাসকারী কিছু তুর্কি ও আরব মুসলিম সৌদিতে চাঁদ উঠলেই ঈদ করে ফেলে। আমেরিকায় চাঁদ উঠল কি না, এ নিয়ে মাথাই ঘামায় না। এ বিষয়টিতে সচেতন করতে শরিয়া বোর্ড প্রথমে কাজ শুরু করেছে। মানুষকে বুঝিয়েছে, আমাদের দেশে চাঁদ উঠলেই কেবল আমরা চাঁদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ইবাদতগুলো পালন করতে পারি।
শরিয়া বোর্ডের ওলামায়ে কেরাম প্রতি মাসের ২৯ তারিখে একত্র হন। চাঁদ দেখা গেল কি না এ বিষয়ে পর্যালোচনা করেন। তারপর সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন, আগামী কাল চাঁদের ৩০ তারিখ, না কি ১ তারিখ।
[অডিও বার্তা থেকে অনুলিখন : সাদ আবদুল্লাহ মামুন]
