ইজতেমার মাঠে সাদপন্থীদের হামলা নিয়ে যা বললেন দেশের শীর্ষ আলেমরা

আবরার আবদুল্লাহ ।।

টঙ্গীর ইজতেমার মাঠ দখল করতে নিরীহ, নিরস্ত্র উলামায়ে কেরাম, সাধারণ সাথী ও মাদরাসা ছাত্রদের উপর নগ্ন হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ আলেমরা।

ইসলাম টাইমসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করলে এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আল্লামা আশরাফ আলী, আল্লামা আবদুল হালিম বোখারী, আল্লামা আজহার আলী আনোয়ার শাহ ও মাওলানা আবদুল কুদ্দুস।

তারা এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘এই হামলা সাদপন্থীদের গোমরাাহির অরেকটি প্রমাণ যে, তারা আলেমদের রক্তাক্ত করে মাঠ দখল করলো। নিঃসন্দেহে এই ঘটনা তাবলিগ জামাতের জন্য একটি কলঙ্ক হয়ে থাকবে।’

সম্মিলিত কওমি শিক্ষা বোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া-এর কো-চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ কওমি শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘উলামায়ে কেরামের হাতে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের সূচনা হয়েছে এবং তারাই তা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন যুগ যুগ ধরে। তারই ধারাবাহিকতায় উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু একদল তাবলিগি লেবাসধারী গুণ্ডা তাদের উপর আক্রমণ করেছে। নিরস্ত্র মানুষের উপর এভাবে আক্রমণের প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমার নেই। নিঃসন্দেহে এটা অত্যন্ত জঘণ্য কাজ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুনেছি, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সাদপন্থীদের সংঘবদ্ধ হতে কোনো প্রকার বাধা দেয়নি এবং সাদপন্থীরা আক্রমণ শুরু করার পরও তাদের ভূমিকা ছিল রহস্যজনকভাবে নীরব। আমি তাদের ভূমিকারও নিন্দা জ্ঞাপন করছি।’

বেফাকের সহ-সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ জামিয়া এমদাদিয়ার মহাপরিচালক আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহও এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমি এই ঘটনার চরম নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি যতোটুকু জেনেছি, আমার কাছে একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলাই মনে হয়েছে।

সাথে সাথে তিনি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদেরও সমালোচনা করে বলেন, ‘তারা উলামায়ে কেরামকে আশ্বস্ত করেছিলেন আপনারা অ্যাকশনে যাবেন না। ওরা ১১টার পর চলে যাবে। অথচ ঠিক ১১টায় তারা হামলা শুরু করে। আমি বুঝছি না, এখানে কার দ্বারা কে প্রতারিত হলো। আমার সন্দেহ হয়, এটা কোনো পাতানো খেলা নয় তো?’

আল্লামা আনোয়ার শাহ সংঘাত এড়াতে উলামায়ে কেরামকে আরও সতর্ক হওয়ার আহবান জানান। তিনি সরকার ঘনিষ্ঠ একজন আলেমের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এই ঘটনার পেছনে তার ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করছেন। শুনেছি, তার মাদরাসার মসজিদে এতাতীদের পরামর্শ সভা হয়েছে। তারা সেখানে রাত থেকে অবস্থান করছিল। এই লোকের ব্যাপারে আমি আর কী বলবো?’

আরও পড়ুন : আলেম-উলামা ও তাবলিগি সাথীদের রক্তের উপর দিয়ে মাঠে ঢুকলো সাদপন্থীরা

জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক আল্লামা আবদুল হালিম বোখারি বলেন, ‘আমি এই মাত্র এয়ারপোর্ট এসে নামলাম। খুব বেশি কিছু জানি না। তবে এতোটুকু তো বলাই যায় যে, এই ঘটনা দেশে-বিদেশে তাবলিগ জামাতকে কলঙ্কিত করবে। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা নষ্ট হবে।  এই ধরনের আত্মঘাতীমূলক কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।’

বাংলাদেশ কওমি শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘ এই ধরনের নৃশংস ঘটনা আমি আগে কখনো দেখিনি। এখানে আলেমরা পূর্ব থেকে তাবলিগের কাজ করছিলেন। আর তাদের সারা দেশ থেকে লোক এনে হামলা করে মাঠ দখল করতে হলো কেন? এটা খুবই নিন্দনীয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা দ্বীনের কাজের কথা বলে আবার আলেমদের গায়ে হাত তোলে এটা কীভাবে সম্ভব? আমি এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন : সাদপন্থীদের হামলার প্রতিবাদে এয়ারপোর্ট রোডে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

তবে এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানতে ইসলাম টাইমসের পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

পূর্ববর্তি সংবাদ‘মন্দির নয়, দু বেলা পেট পুরে খেতে চাই’
পরবর্তি সংবাদজার্মানে মুসলিমদের অনুষ্ঠানে শূকরের তৈরি সসেজ : ব্যাপক সমালোচনা