টঙ্গীর ঘটনায় পুলিশের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: শনিবার টঙ্গী ইজতেমা মাঠে সাদপন্থীদের সংঘবদ্ধ নৃশংস আক্রমণের সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রত্যক্ষদর্শী আক্রান্ত মানুষ ও তাবলিগ সংশ্লিষ্টদের মাঝে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আগের দিন রাত থেকে মাঠের বিভিন্ন দিকে পুলিশের উপস্থিতি ছিল। সকাল থেকে যখন সাদপন্থিরা  মাঠের  চারপাশে দলে দলে জড়ো হচ্ছিল, তখন পুলিশ ছিল আরো প্রস্তুত। সকালে সাদপন্থিরা যেন দলবদ্ধভাবে মাঠে ঢুকে কোনো আক্রমণ চালতে না পারে – সেজন্য পুলিশকে জলকামানসহ অবস্থানরত দেখা গেছে। কিন্তু মারমুখি হয়ে সাদপন্থিরা যখন ময়দানে প্রবেশ করে তখন পুলিশের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ।

তাবলিগ জামাতের একটি সূত্র জানিয়েছে, এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকে ময়দানে অবস্থানরত মুরুব্বিদের জানানো হয়েছিল, আপনারা অস্থির হবেন না। যারা জড়ো হয়েছে, বেলা এগারটার পর তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এগারটার পর যখন সংঘবদ্ধভাবে আক্রমণকারীরা গেট ভেঙ্গে ময়দানে ঢুকতে শুরু করে তখন থেকে পুলিশ ছিল নীরব দর্শকের ভূমিকায়।

উত্তরখানের তাবলিগের সাথী মাযহারুল ইসলাম জানান, আক্রমণকারীরা লাঠিসোটা নিয়ে টিনশেড মসজিদে, ময়দানের বিভিন্ন জায়গায় তাবলিগি সাথী ও মাদরাসার ছাত্র শিক্ষকদের বেদম প্রহারের সময়েও পুলিশকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়নি। ঘণ্টা  খানেক সময় ধরে আঘাতে আঘাতে বহু মানুষকে রক্তাক্ত করা, মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া, সামানা ফেলে যেতে বাধ্য করার সময়ও ময়দানের আশপাশের কোনো পুলিশ-সদস্যকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।

টঙ্গী দারুল উলূমের এক সাথী অনুযোগ করে বলেন, ঘটনার সময় পুলিশ যদি টিয়ার গ্যাসও ছুঁড়ত, তাহলেও এত হতাহত হতো না। আমাদের ধারণা ছিল, ময়দানে  অন্তত কেউ হামলা করতে আসবে না। এলেও পুলিশ ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু সকাল থেকে উপস্থিত থেকেও ঘটনার সময় পুলিশ কোনো ভূমিকা রাখেনি।

দেশের শীর্ষ আলেমে দ্বীন আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ বলেছেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আপনারা  কোনো অ্যাকশানে যাবেন না। ওরা ১১টার পর চলে যাবে। অথচ ঠিক ১১টায় তারা হামলা শুরু করে। আমি বুঝছি না, এখানে কে কার দ্বারা প্রতারিত হল। ’

জানা গেছে, সহস্রাধিক তাবলিগি সাথী আক্রমণের এক ঘণ্টার মধ্যেই টঙ্গীর ময়দানে সবকিছু ফেলে এক কাপড়ে নানা চেষ্টায় ময়দান ছেড়ে বাইরে বের হতে সক্ষম হন। কেউ দেয়াল টপকে কেউ নদী সাঁতরে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে থাকেন।

সাদপন্থি আক্রমণকারিরা টঙ্গীর মাঠে পুরো নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কয়েক ঘন্টা পর পুলিশ তৎপর হয়। বিকেল চারটায় খবর আসে, টঙ্গী মাঠের দায়িত্ব নিয়েছে পুলিশ। মাঠে এখন কোনো পক্ষই নেই। টঙ্গী ঘটনায় আহত শামসুল হক বলেন, আক্রমণকারীদের ধীরে ধীরে ময়দানের চারপাশে জড়ো হওয়া এবং গেট ভেঙ্গে আক্রমণ করার সময় পুলিশের পক্ষ থেকে সামান্য ছত্রভঙ্গ করার ভূমিকা থাকলেও এত হতাহতের ঘটনা ঘটতো না। তবে তিনি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার পেছনে ঘটনার আকস্মিকতাও কারণ হতে পারে বলে মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তি সংবাদ‘গত নির্বাচনে তরুণরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে, আগামী নির্বাচনটা নিরপেক্ষ হওয়া দরকার’
পরবর্তি সংবাদএবার সুচিকে দেয়া সম্মাননা পদক কেড়ে নিচ্ছে ফ্রান্স