আবদুল্লাহ আল আমান ।।
ভারতের বিতর্কিত তাবলিগি মুরব্বি মাওলানা সাদের অনুসারীদের সঙ্গে উলামায়ে কেরামের দূরত্ব বেশ আগ থেকে বাড়ছিলো। উলামায়ে কেরামে সক্রিয়তায় দিনদিন কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে তারা। ফলে উলামায়ে কেরামের উপর ক্ষুব্ধ ও অসহিষ্ণু হয়ে উঠছিলো তারা। কোথাও কোথাও উলামায়ে কেরামের গায়ে হাত তোলার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু আজ টঙ্গীর ইজতেমার মাঠ দখলের জন্য সাদপন্থীরা যে লঙ্কাকাণ্ড দেখালো তা নজিরহীন।
উলামায়ে কেরাম, সাধারণ তাবলিগি সাথী ও নিরীহ মাদরাসা ছাত্রদের বেদম প্রহারের ঘটনা সমাজের প্রতিটি বিবেকবান মানুষকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। তাদের একটিই প্রশ্ন আজ সাদপন্থীরা যাদের গায়ে হাত তুললো গতকাল পর্যন্ত তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ করেছে তারা। একই প্লেটে খেয়েছে এমন অনেকেই রক্তাক্ত হতে হয়েছে প্রতিপক্ষের আক্রমণে। তাহলে কী এমন ঘটলো যা তাদের দীর্ঘদিনের পরিচয় ও সম্পর্ক পেছনে ফেলে তাদেরকে এমন উগ্র করে তুললো। প্রতিপক্ষের প্রতি আগ্রাসী করে তুললো।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুধু জোড়, ইজতেমা বা মাঠদখলের স্পৃহা থেকে এমন নৃশংসতা হতে পারে না। বরং এর পেছনে রয়েছে এমন বদ্ধমূল বিশ্বাস যা তাদের মধ্যে সীমাহীন উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে। যা তাদের মন-মস্তিষ্ককে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে রেখে যে, তাদের হিতাহিত জ্ঞান পর্যন্ত লোপ পেয়েছে। তাহলো তাদের আলেমদের উন্মাদনা সৃষ্টিকারী কুরআন ও হাদিসের বিকৃত ব্যাখ্যা।
উলামায়ে কেরামের অনুসন্ধানে সাদপন্থীদের উন্মাদনার পেছনে কুরআন-হাদিসের যে ধরনের বিকৃতি থাকতে পারে তার একটি দৃষ্টান্ত ধরা পড়েছে। তাহলো বাংলাদেশে উলামায়ে কেরামের সমালোচনার বহুল আলোচিত তাবলিগি আলেম মাওলানা আবদুল্লাহ মানসুর রচিত ‘আল ইমারাতু হিয়াস সুন্নাহ’ (উর্দু) বইয়ের কয়েকটি লাইন। যেখানে তিনি মাওলানা সাদের নেতৃত্বের বিরোধিতাকে অবশ্যই-হত্যাযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন।
উলামায়ে কেরামের তীব্র আপত্তি ও সতর্ক বার্তার পরও মাওলানা আবদুল্লাহ মানসুর সাদপন্থীদের নিকট বরাবরই সমাদৃত ব্যক্তি। তাই উলামায়ে কেরামের আশঙ্কা সাদ শিবিরে হয়তো এমন ধ্বংসাত্মক চিন্তার চর্চা হয়। যা তাদেরকে এমন মারমুখী করে তুলছে।
মাওলানা আবদুল্লাহ মানসুর তার বইয়ের ১৫ ও ১৬ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, মোটকথা যেহেতু মাওলানা সাদ সাহেব নিজে আমিরত্ব চাননি এবং হননি। বরং (উলুল আমর) দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই তাকে (উলুল আমর বানান) দায়িত্ব অর্পণ করেন। আজ উলুল আমরের কর্তৃত্ব তার হাতেই ন্যস্ত। সারা পৃথিবীতে কোনো বড় বা ছোট ব্যক্তির মধ্যে এই উলুল আমরের সম্পর্ক ও কর্তৃত্ব নেই। সুতরাং যে তার বিরোধিতা করবে সে বিদ্রোহী ও ফেতনা সৃষ্টিকারী হিসেবে গণ্য হবে। যাকে অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হবে। পবিত্র শরিয়তে কুরআন-হাদিসের আলোকে বিষয়টি পরিষ্কার। এবং এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ইসলামি শাসন ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই। …
উলামায়ে কেরাম বিচারে কুরআন-হাদিসের এমন বিকৃত চর্চা –যা বিচারের ক্ষমতা অনেক সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে থাকে না- তা মানুষকে এমন নৃশংস করে তুলতে পারে। সুতরাং আজকের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কিছু না; বরং তাদের চর্চিত চিন্তা-চেতনা এবং তাদের ভেতরে জমা হওয়া অন্ধ ক্ষোভের বিস্ফোরণ।
