সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্য : কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ হামলাকারীদের মাঠে ঢুকতে সাহায্য করেছে

আবরার আবদুল্লাহ ।।

কাকরাইলের মুরব্বিদের পক্ষ থেকে মুফতি আমানুল হক লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি তাতে বলেন, আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে কর্মরত তাবলিগি সাথী, উলামায়ে কেরাম ও মাদরাসা ছাত্রদের উপর নৃশংস হামলা ও হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলেন।

নানান কারণে আসন্ন টঙ্গী ইজতেমার মাঠের কাজ এই বছর বিলম্বিত হয়। তাই ঢাকার সাথী ও মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা ৩ দিনের জামাতবদ্ধ হয়ে টঙ্গীর মাঠের কাজ আঞ্জাম দিচ্ছিলেন। কিন্তু তাদের উপর দিল্লির নিজামুদ্দিনের মাওলানা সাদ-এর অনুসারী ওয়াসিফুল ইসলাম ও নাসিম গংরা নিরীহ নিরস্ত্র সাথী, মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের উপর লাঠি-সোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে।

দুঃখজনকভাবে এ সময় পুলিশের ভূমিকা ছিলো নীরব ও রহস্যজনক।পুলিশ এ সময় দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাঠে প্রবেশ করতেও সহযোগিতা করে তারা। কিন্তু প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেছিলো আপনারা ভেতরে থাকেন। আমরা বাইরে দেখছি। বাহির থেকে কেউ ভেতরে যেতে পারবে না। প্রশাসনের কাছে জাতির প্রশ্ন সারা দেশ থেকে হাজার হাজার সাদপন্থী টঙ্গীতে একত্র হলো কীভাবে?

বিভিন্ন মিডিয়ায় কিছু ছোট ছোট মাদরাসার ছাত্র দেখানো হয়েছে। তারা মূলত টঙ্গী মাঠের ভেতরে অবস্থিত মাদরাসার ছাত্র। এই মাদরাসাটি কাকরাইলে অবস্থিত মাদরাসার শিশু বিভাগ। যার অধিকাংশ ছাত্রই নাবলক। বিভিন্ন গণমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভিডিও ফুটেজে যা যেসব শিশুদের দেখানো হয়েছে তারা সেই মাদরাসারই ছাত্র। তাদের সেখানে নেয়া হয়নি; বরং তারা সেখানে থেকেই লেখাপড়া করে।

এরপর তিনি মাওলানা সাদ সবার সিদ্ধান্তের বাইরে কীভাবে নিজেকে আমির হিসাবে দাবি করলেন এবং তাকে কেন মান্য করা সম্ভব নয় সংক্ষেপে তা তুলে ধরেন।

লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের  প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরও দেন মাওলানা আমানুল হক।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অফিসের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, নির্বাচনের আগে দুই পক্ষের কেউ জমায়েত হবে না এমন প্রশ্নের উত্তরে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘টঙ্গীর ইজতেমার প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য প্রায় ছয় মাস সেখানে থেকে কাজ করতে হয়। শেষের দিকে প্রতিদিন ৫-৬ হাজার সাথী কাজ করেন এবং শুক্রবার ৩০ হাজার সাথী কাজ করেন। এটাকে আমরা জমায়েত বলি না। এটা কাজের জন্য যাওয়া।

একই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, প্রশাসন ইজতেমা স্থগিত করেননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচন যথা সময়ে হলে ইজতেমাও যথা সময়ে হবে। যদি ইজতেমা যথা সময়ে হয় তাহলে তার প্রস্তুতি তো এক সপ্তাহে শেষ করা যাবে না। তাই ইজতেমার প্রস্তুতির কাজ চলছিলো। আমাদের প্রশ্ন নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও তারা সেখানে কীভাবে পৌঁছালো? আমাদের প্রশাসন কি এতোই দুর্বল?’

আহতদের তালিকায় মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বেশি দেখা গেছে এবং সাধারণ সাথীরা কি আপনাদের প্রতি আস্থাহীন? এমন প্রশ্নের উত্তরে মুফতি আমানুল হক বলেন, দাওয়াতের কাজ কোনো নির্ধারিত শ্রেণির জন্য নয়। তাহলে মাদরাসার ছাত্ররা কেন অংশ নিতে পারবে না? মাদরাসার ছাত্ররা আগেও শুক্রবার এসে কাজ করেছে। সমস্যা না হওয়ায় তা চোখে পড়েনি। সাধারণ সাথীরাও ছিলো শুক্রবার হওয়ায় মাদরাসা ছাত্ররা অন্যদিনের তুলনায় বেশি ছিলো।

মামলা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘টঙ্গীর ঘটনার জন্য মামলার বিষয়টি আহত ব্যক্তি, তাদের অভিভাবক ও আমাদের মুরব্বিদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেবো।’

আরও পড়ুন : সাদপন্থীদের হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় শীর্ষ আলেমদের ৬ দফা দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা

সাংবাদিকরা ‘ছাত্রদের বাধ্য করা হয়েছে এমন ভিডিও চিত্র রয়েছে’ এমন দাবি করলে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘মাদরাসা থেকে কাউকে জোরপূর্বক আনা হয় না। তাদের উৎসাহমূলক কথা বলে আনা হয়েছে। ছাত্রদের বক্তব্য বিষয়ক যে ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে তা বানোয়াট। ছাত্রদের আটক করে মারধার করার পর তাদেরকে এমন বক্তব্য দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

তিনি টঙ্গী ইজতেমার মাঠে সাদপন্থীদের হামলা যে পরিকল্পিত ছিলো তার প্রমাণ পেশ করে বলেন, ‘তারা হাতে ফিতা ব্যবহার করা হয়েছে সবুজ ও লাল। যা পরিকল্পনার প্রতি ইঙ্গিত বহন করেন।’

এই সমস্যার সমাধান এবং উভয় পক্ষের বোঝাপড়া সম্ভব কী না? মাওলানা মুহাম্মদ যোবায়ের বলেন, ‘আমি একই প্রশ্নের উত্তর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে দিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, ‘আমরা কুরআন ও হাদিসের উপর চলছি এবং তারা কুরআন-হাদিস বিকৃত করা একটি ভ্রান্ত মতবাদের উপর চলছে। এখন আমরা কুরআন-হাদিস ছেড়ে তাদের সাথে মিলবো নাকি তারা আমাদের সাথে মিলবে? আমার এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি যদি কুরআন-হাদিসের হয় তাহলে আমি আপোষ করাতে আসিনি। তা আমি জানি না। এই দেশ মুসলমানের দেশ। মুসলমান কখনো কুরআন-হাদিসের ব্যাপারে আপোষ করতে পারে না।

(সংক্ষেপিত)

পূর্ববর্তি সংবাদবিএনপির পক্ষ থেকে প্রশাসনে রদবদলের দাবি অবান্তর : এইচটি ইমাম
পরবর্তি সংবাদরোহিঙ্গা-সমস্যার মতোই সঙ্কট তৈরি হতে পারে ভারতের আসামে: আশঙ্কা গবেষকদের