নিহার মামদুহ ।।
গত ১ ডিসেম্বর টঙ্গীর ইজতেমার মাঠে সাদপন্থীদের হামলার প্রতিক্রিয়ায় দেশজুড়ে এখন তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ চলছে। এসব বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করছেন দ্বীনপ্রাণ মুসলমান, সাধারণ তাবলিগি সাথী, উলামায়ে কেরাম, মাদরাসার ছাত্র ও তাদের অভিভাবকগণ।
সাদপন্থীদের নৃশংস হামলার প্রতিবাদে দেশজুড়ে যে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে সেখানে অংশগ্রহণকারীরা জড়িতদের শাস্তি দাবি করছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ইন্জিনিয়ার ওয়াসিফুল ইসলাম, নাসিম, মাওলানা আশরাফ আলী, মাওলানা আবদুল্লাহ মানসুর, মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ প্রমুখ। মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ ব্যতীত অন্যরা তাবলিগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। আর তিনি হলেন তাদের একনিষ্ঠ সমর্থক।
তিনি তারা বক্তব্য ও আলোচনায় একাধিকবার বৃহত্তর উলামায়ে কেরামের মতামতের বাইরে গিয়ে তাবলিগের বিতর্কিত মুরব্বি মাওলানা সাদের পক্ষপাত করেছেন। অবশ্য শুধু তাবলিগ ইস্যু নয় হেফাজত-শাহবাগের মতো ইস্যুতেও তিনি উলামায়ে কেরামের মতামতের বাইরে ‘একলা চল’ নীতি অবলম্বন করেন। প্রকারান্তে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
সর্বশেষ টঙ্গীর ইজতেমা মাঠের হামলার সাথে নানাভাবে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। যেমন, হামলার পূর্বে থেকে তার পরিচালিত ইকরা মাদরাসার মসজিদে সাদপন্থীদের জমায়েত, হামলার দিন ফজরের সময় সেখান থেকে তাদের মাঠে যাওয়া এবং হামলার পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমনভাবে কথা বলা যাতে প্রকারান্তে উলামায়ে কেরাম দোষী প্রমাণিত হয়। ইত্যাদি।
এমন আরও কিছু প্রমাণ –যা থেকে হামলার ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা বোঝায়- তা সামনে আসার পর সারা দেশের উলামায়ে কেরাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছেন।
এই বিষয়ে সর্বপ্রথম কথা বলেছেন বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সহ-সভাপতি আল্লামা আযহার আলী আনোয়ার শাহ। তিনি হামলার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ইসলাম টাইমসকে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এই ঘটনার পেছনে তার ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করছেন। শুনেছি, তার মাদরাসার মসজিদে এতাতীদের পরামর্শ সভা হয়েছে। তারা সেখানে রাত থেকে অবস্থান করছিল। এই লোকের ব্যাপারে আমি আর কী বলবো?’
পরের দিন রোববার কিশোরগঞ্জের প্রতিবাদ সভায় জেলার শীর্ষ আলেমরা মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
আজ চট্টগ্রামে এক প্রতিবাদ সভায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ফরীদ উদ্দীন মাসউদসহ অন্যান্য উস্কানিদাতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন।
গতকাল ঢাকার মোহাম্মদপুরের মাদরাসাগুলোর সংগঠন ইত্তেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ দেখছি, প্রত্যক্ষ করছি- মাওলানা ফরীদ মাসউদ যেকোনো ধর্মীয় ক্ষেত্রে দেশের হাজার হাজার উলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধাচরণ করে নিজেকে আলেম-উলামাদের থেকে আলাদা করে নিয়েছেন।গত শনিবারের সাদপন্থীদের হামলার সমর্থন করে এবং হামলাকারীদের পক্ষ অবলম্বন করে তিনি ‘উলামা নামের কলঙ্কে’ রূপান্তরিত হয়েছেন। এই দেশে উলামায়ে কেরামের সমাজে তাকে আমরা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতে চাই।’
একই সভায় মাওলানা মামুনুল হক তার বিচার দাবি করেন।
ঢাকার রামপুরা, বাসাবো ও খিলগাঁও এলাকার সর্বস্তরের তৌহিদি জনতার উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদকে হুকুমের আসামী আখ্যা দিয়ে তার বিচার দাবি করা হয়।
আজ ঢাকার উত্তরায় আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা একইভাবে টঙ্গীর হামলার সঙ্গে তার জড়িত থাকা অভিযোগে বিচার দাবি করেন। এই সমাবেশে তার কুশপুত্তলিকাও পোড়ানো হয়।
সারা দেশে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভাগুলোয় মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বিরোধী প্লেকার্ড ও ফেস্টুনও দেখা যাচ্ছে। যেখানে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও তার বিচার দাবি করা হয়েছে।
এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ভূমিকা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন সাধারণ দ্বীনদার মানুষ ও উলামায়ে কেরাম।
তাদের দাবি, যে মানুষ বরাবর উলামায়ে কেরামের বিপরীত পথে চলতে চায় তাকে কেন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে না? এমনকি তারা মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদকে সম্মিলিত কওমি শিক্ষাবোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া থেকে বরখাস্ত করার দাবিও জানাচ্ছে।
উলামায়ে কেরাম ও সাধারণ মানুসের তীব্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও মাওলানা সাদ ও তার অনুসারীদের বাঁচানো এবং উলামায়ে কেরামের দোষারোপের পথেই হাঁটছেন মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।
