ইসলামা টাইমস ডেস্ক : সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে মিয়ানমার বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি। এরপর মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করে দেশে ফিরেছেন ১৭ বাংলাদেশি। সেখানে এখনও বন্দী আছেন আরও ৫০ জন।
বুধবার (৫ ডিসেম্বর) মিয়ানমার অভ্যন্তরে দুই দেশের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের হস্তান্তর করা হয়।
মিয়ানমার ইমিগ্রেশন বিভাগের একটি প্রতিনিধি দল ওই ১৭ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কয়েকজন কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি দলের কাছে হস্তান্তর করেন। তারা সবাই সমুদ্র পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় আটক হয়েছিলেন। দেশটির কারাগারে আরও ৫০ জন বন্দী রয়েছেন বলে জানা গেছে।
ফেরত আসা ১৭ বাংলাদেশি হলেন, চটগ্রাম জেলার বশিরা এলাকার বদিউল আলম, নেটা ফকির পাড়ার মো. হেলাল,বাশঁখালী সরল বাজার এলাকার জামাল উদ্দিন, খাগড়াছড়ি জেলার বড়দোলা কোনজুরি পাড়া এলাকার সে থু অং মারমা ও ইউ সা খ মারমা, টেকনাফ উপজেলা উত্তর শিলখালী এলাকার রহিম উল্লাহ,মুফিজুর রহমান ও আজিজুল ইসলাম, কক্সবাজার জেলা দক্ষিণ কলাতলি এলাকার মো. শফিক, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের গোদারবিল এলাকা মো শাকের, কক্সবাজার ঘোনা পাড়া এলাকার মো. জালার উদ্দিন, সাবরাং ইউনিয়নের হারিয়াখারী এলাকার মিজানুর রহমান, হারিয়াখারী এলাকার আজিজুল্লাহ ও আব্দুস সালাম, একই ইউনিয়নের লাফারঘোনা এলাকার নুরুল আলম, টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ এলাকার মো. জালাল এবং একই এলাকার আবু তাহের।
বিজিবি জানিয়েছে, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিয়ানমারের মংডুতে বিজিবি ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল আছাদুদ-জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল এবং মিয়ানমার মংডুর অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তা হটেন লিনেনর নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফেরত নাগরিকদের নিয়ে সদর বিওপি চৌকির সংলগ্ন বাংলাদেশ-মিয়ানমার টেকনাফ নতুন ট্রানজিট জেটি ঘাটে পৌঁছায়। সেখান থেকে ওই ১৭ বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফেরত আনা হয়।
পরে দুপুর ১টায় ওই জেটিতে আছাদুদ-জামান চৌধুরী সংবাদিকদের বলেন, ‘এসব ব্যক্তিরা মিয়ানমারের বিভিন্ন সময় আটক হয়েছিলেন। বিভিন্ন মেয়াদে সাজাভোগ শেষে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের দেশে ফেরত আনা হয়েছে। পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর বৈঠকের মাধ্যমে তাদের ফেরত আনা হয়।’ ফেরত ১৭ জনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান এই বিজিবি কর্মকর্তা।
আছাদুদ-জামান আরও বলেন, ‘ফেরত আসাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, মিয়ানমারের কারাগারে আরও অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন। তাদেরও ফেরত আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ‘ফেরত আনা ১৭ বাংলাদেশিকে যাচাই-বাচাই করে পরিবারের কাছে হন্তান্তর করা হবে।’
দেশে ফেরত আসা রহিম উল্লাহ জানান, সাত মাস আগে টেকনাফের শামলাপুর এলাকায় দিয়ে ট্রলারযোগে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য সমুদ্র পাড়ি জমান তিনি। পরে ট্রলারটি নষ্ট হয়ে তা ভাসতে ভাসতে মিয়ানমার সীমানায় পৌঁছায়। এসময় মিয়নমার সীমান্তরক্ষাকারী বাহিনী তাদের আটক করে। তার সঙ্গে অনেকেই আটক হন। পরে দেশটির কর্তৃপক্ষ তাদের সবাইকে ছয় মাসের সাজা প্রদান করে।
১৭ বাংলাদেশিকে ফেরত আনতে অন্যান্য যে সকল প্রতিনিধিরা মিয়ানমার গিয়েছিলেন তারা হলেন- টেকনাফ-২ বিজিবির মেজর মামুনুর রশিদ, স্টাফ অফিসার মোহাম্মদ জোবাইর আহমদ, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নুরুল আবছার, জেলা বিশেষ শাখার (ডিএসবি)র প্রতিনিধি পরিদর্শক এসএম মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি টেকনাফ মডেল থানার এসআই বোরহান উদ্দিন ভূইয়া, বিজিবির সুবেদার মোহাম্মদ ইব্ররাহীম হোসেন, স্টাফ অফিসার নায়েক সহকারী সরোয়ার আলম, মেডিকেল অফিসার শরীফুল ইসলাম, দোভাসী কবির হোসেন প্রমুখ।
