মালয়েশিয়ায় তাবলিগ এবং শ্রিপেতালিং মারকাজ

মুকীম আহমাদ ।। মালয়েশিয়া থেকে

মালয়েশিয়ার বর্তমান তাবলিগের মারকাজ ‘মাসজিদ জামেক বান্দার বারু শ্রীপেতালিং’ । রাজধানী কুয়ালালামপুরে অবস্থিত এই মারকাজ মসজিদটি। সুবিশাল আয়তনের মসজিদ । স্হাপনার দিক থেকেও দৃষ্টিনন্দন। নানা দেশ আর নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সমাগমে সবসময় ব্যস্ত থাকে মসজিদটি।

তবে কিছুদিন আগেও এটি মালয়েশিয়ার প্রধান মারকাজ ছিল না। কুয়ালালামপুরের পুরনো আরেকটি মসজিদ ‘মসজিদ ইন্ডিয়া’ই ছিল মূলত কেন্দ্রীয়  মারকাজ। পরবর্তীতে ওই মসজিদে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় আলাদাভাবে মারকাজ মসজিদ হিসেবে নির্মিত হয় শ্রীপেতালিং মসজিদ।

প্রতি শনিবার রাতে মসজিদে তাবলিগের প্রচুর সাথীদের সমাগম ঘটে। ছুটির দিন হওয়াতে এ রাতে মারকাজ মসজিদে শবগুজারি হয়ে থাকে। মাগরিবের পর নির্ধারিত ব্যক্তি মালয়ী ভাষায় বয়ান করে থাকেন। মসজিদের অভ্যন্তরে শুধু মালয়ী ভাষাভাষী শ্রোতাবর্গ বসেন।

তবে মেহরাবের ডানদিকের বাইরের অংশজুড়ে আছে বিভিন্ন দেশের হালকা। হালকাগুলোতে চলে ত্বরিৎ-অনুবাদ। দোতলায় পাকিস্তানি সাথীদের জন্য রয়েছে আলাদা কামরা,  বাংলাদেশী সাথীদের জন্যও রয়েছে খাস কামরা। প্রবাসী বাংলাদেশি দ্বীনি ভাইদের জন্য যেন এটি হয়ে ওঠে প্রিয়জনদের সঙ্গে সাক্ষাতের মিলনমেলা।

মসজিদ চত্বর ঘেঁষেই রয়েছে  মারকাজের মাদরাসা মিফতাহুল উলুম। দাওরা হাদীস পর্যন্ত মাদরাসা। বেশিরভাগ মাদরাসা ৭/৮ বছরের কোর্স হয়ে থাকে। অন্যসব মারকাজ মাদরাসার মতো এখানেও রয়েছে ভিনদেশী ছাত্রদের জন্য সুব্যবস্হা। শুধু মালয়ী শিক্ষকদের মাধ্যমেই পরিচালিত। আরবরাও এখানে পড়িয়ে থাকেন।

তাবলিগের শুরু : মালয়েশিয়াতে ১৯৫০ বা ৫২ সালের দিকে সর্বপ্রথম তাবলিগের দাওয়াত নিয়ে আসেন মাওলানা আব্দুল মালেক মাদানি রহ.। তাকে সহযোগিতা করেন স্থানীয় দাতোক দাউদ, আহমাদ মারিকান, টিকেএস আব্দুল মাজিদ প্রমুখ।

তবে পূর্ণাঙ্গভাবে তাবলিগের আমল শুরু হয় তৎকালীন ‘মসজিদ ইন্ডিয়ার ‘ সম্মানিত ইমাম মুহাম্মদ সাইয়্যিদের মাধ্যমে, যা পরিপূর্ণতা পায় ১৯৬৭ সালে। মালয়েশিয়া আরবি-সুফিপ্রধান দেশ হওয়ায় প্রথমদিকে সংগ্রাম করতে হয় প্রচুর। পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় গণ্যমান্য অনেকে এতে অংশগ্রহণ করায় কিছুটা সুগম হয় প্রচারের পথ।

বর্তমান অবস্থা : বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে চলমান তাবলিগের অভ্যন্তরীণ সংকট মালয়েশিয়াতেও আংশিক প্রভাব ফেলেছে । আলমি শুরার সাথীরা আলাদাভাবে মেলাকা প্রদেশে মারকাজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। আলাদা ইজতেমাও করেন।

তবে একজন শুরা সদস্য ও মারকাজ মাদরাসার শিক্ষক জানালেন, তারতিবের ব্যপারে জিম্মাদার সাথীগণ অবগত আছেন। কিন্তু বয়ানের বিচ্যুতি সম্পর্কে তাদের কাছে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ না থাকায় বড় কোনো বিভক্তি এখনও দেখা দেয়নি।

তবে গতবছর  বাংলাদেশের ইজতেমা সংকটের কারণে তাবলিগি আলেম সাথী ও সাধারণ উলামা মাশায়েখ কিছুটা উচ্চকিত হয়েছেন । তবে দেশটিতে মুসলমানদের বাস্তবতা বিবেচনায় বেশিরভাগ আলেম উলামা ঐক্যবদ্ধ হয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

তাছাড়া উক্ত জিম্মাদার আলেম আরও জানান, মালয়েশিয়াতে ব্যক্তি মাওলানা সাদ তেমন গুরুত্ব রাখে না। এমন অনেক সাথী আছেন যারা তাকে জানেনই না।

আরও কয়েকজন আম জিম্মাদার সাথীর সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারি,  দুই মাস আগে সেরডাং ইজতেমায় মাওলানা সাদ সাহেবকে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কোনো কারণে ভিসা দেয়নি। ফলে তিনি ওই ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি।

পূর্ববর্তি সংবাদআমার চিকিৎসা হচ্ছে না, মৃত্যুকে ভয় করি না : এরশাদ
পরবর্তি সংবাদঘরে ফিরেছে ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীরা