নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব সবার তবে চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে ইসিকেই : ড. মাহফুজ পারভেজ

প্রফেসর ড. মাহফুজ পারভেজ। একজন লেখক ও কলামিস্ট। অধ্যাপনা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে। বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে একাধিক মৌলিক গবেষণা রয়েছে তার। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন, নির্বাচনী পরিবেশ ও নির্বাচনী সহিংসতা ইত্যাদি নিয়ে ইসলাম টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন। আলাপচারিতায় তার সঙ্গে ছিলেন আতাউর রহমান খসরু

ইসলাম টাইমস : একটি গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচনী পরিবেশ কেমন হওয়া উচিত?

অধ্যাপক মাহফুজ পারভেজ : গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষত নির্বাচনের প্রশ্নে এবং জনগণের রায়ের সঠিক প্রতিফলন ঘটানোর জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা সবার কর্তব্য। এই দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের, তেমনিভাবে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে যারা আছে সবার। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলেরই কম-বেশি দায়িত্ব রয়েছে।

ইসলাম টাইমস : আমাদের দেশে কি সেটা হচ্ছে?

অধ্যাপক মাহফুজ পারভেজ : না। শুধু বাংলাদেশ নয়; উন্নয়নশীল দেশগুলোকে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চর্চাটা নেই। এসব দেশগুলোতে যার ক্ষমতা যতো বেশি সে তা প্রয়োগ করে পরিবেশ প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। তারা মনে করে, ক্ষমতার দম্ভ দিয়ে গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে দখল করে নেয়া হবে। কিন্তু তার ফলাফল ভালো হয় না।

ইসলাম টাইমস : নির্বাচনকালীন সহিংসতা বন্ধ করা কিভাবে সম্ভব?

অধ্যাপক মাহফুজ পারভেজ : নির্বাচনকালীন যে সহিংসতা দেখা যাচ্ছে তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। সুতরাং খুব সহজে যাবে না। এ ক্ষেত্রে নেতৃবৃন্দকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে পারলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি সম্ভব বলে আমি মনে করি।

ইসলাম টাইমস : নির্বাচনে ক্ষমতার চর্চা পরিণতি কী?

অধ্যাপক মাহফুজ পারভেজ : যারা ক্ষমতার চর্চা করে তারা মনে করে এর ফলাফল ভালো। কারণ, ক্ষমতা চর্চার নগদ কিছু লাভ পাওয়া যায়। আপাতত তা ভালো মনে হলেও শেষ পর্যন্ত তা ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়। ধ্বংস যেমন ধ্বংস ডেকে আনে, সন্ত্রাস ও হানাহানিও আরেকটি হানাহানি ডেকে আনে। সুতরাং সরকার, বিরোধী দল ও নির্বাচন কমিশন সবারই চেষ্টা থাকা উচিত নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখার। শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা দরকার। জনগণ যেন সঠিকভাবে তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পায়। বিশেষত প্রার্থীদের অবশ্যই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান রক্ষা সচেতন ভূমিকা প্রয়োজন।

ইসলাম টাইমস : এবারের নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করছে। সে হিসাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিশেষ কোনো গুরুত্ব বহন করে?

অধ্যাপক মাহফুজ পারভেজ : গণতান্ত্রিক দেশের জন্য সব দলের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ অবশ্যই একটি ভালো লক্ষণ। এটা যেন শেষ পর্যন্ত বজায় থাকে, সকলে যেন খোলা মনে আনন্দের সাথে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে সেটা নিশ্চিত করা গেলে গণতন্ত্র ও রাজনীতিতে বিরাট ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে আমার ধারণা।

এবারের নির্বাচনটা আরেক বিবেচনায়ও গুরুত্বপূর্ণ যে, প্রধান দুটি দলের রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে দেশের রাজনৈতিক অবস্থায় দুটি সংকটের প্রশ্ন উঠেছে। সাংবিধানিক শূন্যতা এবং গণতান্তিক ধারা অব্যাহত না থাকা। এর কোনোটিই দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এবারের নির্বাচন এই দুটি সংকট দূর করার একটি সুযোগ এনে দিয়েছে।

এছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচন জাতীয় সংহতি তৈরি পথ তৈরি করবে যা বাংলাদেশে নেই বললেই চলে।

ইসলাম টাইমস : বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটছে না কেন?

অধ্যাপক মাহফুজ পারভেজ : ইউরোপ-আমেরিকার শত শত বছরের চেষ্টার পর সেখানে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ সেখানে যেতে চাইলে সেই সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে। পারস্পরিক সহনশীলতা ও সহিষ্ণুতা বাড়াতে হবে। সমঝোতার পথে হাঁটতে হবে এবং শান্তিপূর্ব সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

ইসলাম টাইমস : নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখার চ্যালেঞ্জটা মূলত কার? সরকার, বিরোধী দল বা নির্বাচন কমিশনের?

অধ্যাপক মাহফুজ পারভেজ : যেহেতু নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব রয়েছে। তাই চ্যালেঞ্জটাও সবার। তবে আমার মনে হয়, নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জটা সবচেয়ে বেশি। কারণ, বাংলাদেশে এক সময় নির্বাচন হতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। যখন প্রচলিত ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থায় যাওয়ার প্রস্তাব আসলো তখন অনেক রাজনৈতিক দলই আশঙ্কা করেছিলো বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকে না। এখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দলগুলো নির্বাচন কমিশনের প্রতি এক ধরনের আস্থা প্রকাশ করেছে। মানুষের আস্থা রক্ষা করাই তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সংবিধান যেহেতু তাদের সেই ক্ষমতা দিয়েছে –প্রশাসনসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু তাদের অধীন- তাই তারা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে যদি তারা চায়। তাদের সামনে ইতিহাস সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে।

সরকারি দলের ভাবা উচিত, যে দলগুলো তাদের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলো তারাই এখন তাদের অধীনে নির্বাচন করছে। তারা যদি ক্ষমতার অপব্যবহার না করে তবে তারা যে সবাইকে সাথে কাজ করতে পারে তা প্রমাণ হবে। গণতন্ত্রের পক্ষে তাদের ইমেজ উজ্জ্বল হবে।

বিরোধী দলগুলোর চ্যালেঞ্জ হলো, জনগণকে এটা বোঝানো যে, তারা শান্তিপূর্ণ রাজনীতিতে বিশ্বাস করে এবং তারা নিজেদের ও দেশের উন্নয়নে শান্তিপূর্ণ পথেই এগিয়ে যেতে চায়। জনগণের মতামতের উপর তারা আস্থাশীল।

ইসলাম টাইমস : সুষ্ঠু পরিবেশের নূন্যতম মাপকাঠি কি?

অধ্যাপক মাহফুজ পারভেজ : এটা খুব আগাম বলার সুযোগ নেই। নির্বাচনের পর সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ পক্ষ যদি বলে ঠিক আছে তাহলে পরিবেশ ঠিক আছে। সকল মহলের মতামতের ভিত্তিতে ঠিক হবে নির্বাচন কতোটা সুষ্ঠু হলো এবং কতোটা অংশগ্রহণমূলক হলো।

পূর্ববর্তি সংবাদআফগানিস্তানে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন সৈন্য নিহত!
পরবর্তি সংবাদআন্দোলনকারীদের কাছে নতি স্বীকার করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট