ইসলাম টাইমস ডেস্ক : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্বাচনের আগে-পরে ৯ দিনের মতো মাঠে থাকবে সশস্ত্র বাহিনী (সেনা, নৌ ও বিমান)। আগামী ২৪ থেকে ২৬ ডিসেম্বরে তাদের মাঠে নামার কথা। ভোট গ্রহণের পরের দুই দিনও মাঠে অবস্থান করবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। সেইসঙ্গে মাঠে থাকবেন জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
আগামী কাল ১৩ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কমিশনের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হওয়ায় নির্বাচন হবে অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। আর এ কারণে নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের দিন ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্যবারের চেয়ে ভালো থাকবে। আর এ কারণেই মাঠে সেনাবাহিনী রাখার সময়সীমায় ২০১৪ সাল থেকে কিছুটা তারতম্য করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রের বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল দেবে। কিন্তু তারা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোটগণনা কক্ষে ঢুকতে পারবে না। তবে রিটার্নিং বা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা চাইলে স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিমের সদস্যরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ঢুকবেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আচরণবিধি প্রতিপালনে দেড় হাজারের বেশি জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৬ লাখেরও বেশি সদস্য।
সূত্র আরও জানায়, ভোটের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিভিন্ন সংস্থার প্রধান ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে কমিশন। ওই বৈঠকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদন অনুযায়ী ভোটের নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। এরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারির মাধ্যেমে ভোটের আইনশৃঙ্খলা পরিকল্পনা জানিয়ে দেবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা আগামী ২৪ ডিসেম্বর মাঠে নামবেন। ভোটের পরে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা নির্বাচনী এলাকায় থাকবেন। বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান সদস্যরা স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিম হিসেবে আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। ২৯ ডিসেম্বর থেকে ৩০০ সংসদীয় আসনে ৬৪০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। তারা ভোটের পরও দুই দিনসহ সবমিলিয়ে ৪ দিন মাঠে থাকবেন। এ সময় নির্বাচনী অপরাধে সংক্ষিপ্ত বিচার করবেন তারা।
ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা ভোটগ্রহণের দুদিন আগে, ভোটের দিন ও ভোটের পরের দিন পর্যন্ত মোট ৪ দিন মাঠে থাকবেন। আর অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা ভোটগ্রহণের তিনদিন আগে মাঠে নেমে থাকবেন ভোটের পরের দিন পর্যন্ত। এছাড়া ভোটগ্রহণের আগের দিন ও ভোটের দিন কেন্দ্রের পাহারায় থাকবে গ্রামপুলিশ (দফাদার ও চৌকিদার) সদস্যরা।
বেসরকারি প্রশাসনকে সহায়তায় ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় সারাদেশে সেনাবাহিনী সদস্য মোতায়েন করা হবে। তবে উপকূলবর্তী এলাকায় মোতায়েন থাকবেন নৌ-বাহিনীর সদস্যরা।
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জেলা, উপজেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার নোডাল পয়েন্ট এবং সুবিধাজনক জায়গায় তারা অবস্থান করবেন। নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার সহায়তা কামনা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা প্রদান করবে। রিটার্নিং বা প্রিজাইডিং অফিসার না চাইলে তারা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোটগণনা কক্ষে যাবেন না।
এছাড়াও ভোটের দিনে ভোটারদের যাতায়াতের পথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভোটারদের যাতায়াতের পথ নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ ইউনিটগুলোকে নিবিড় টহল দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হবে। ঝুকিপূর্ণ এলাকা ও ভোটকেন্দ্রের বিশৃঙ্খল পরিবেশ যাতে সৃষ্টি না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক রাখা হবে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে প্রয়োজনে মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করা হতে পারে। ভোটকেন্দ্রে ফল প্রকাশের পর তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিরাপদে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। দুর্গম এলাকার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী মালামাল ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের যাতায়াতে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হবে। ভোটের দিন যান চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।
প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট। নির্বাচনে মোট ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৩ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন
![](https://www.islamtime24.com/wp-content/uploads/2021/03/20210308_200803-scaled.jpg)