বিবাদ-বিসংবাদের সময় কী করবো আমরা?

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ ।। 

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর মুমিন বান্দাদের সম্বোধন করে আদেশ করেছেন, তারা যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য করে এবং দ্বীনী ও দুনিয়াবী ক্ষেত্রে কর্তা ও দায়িত্বশীলদের আনুগত্য করে। এরপর কোনো বিষয়ে তাদের মাঝে বিবাদ-বিসংবাদ তৈরি হলে তা যেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে পেশ করে। এটি কল্যাণকর এবং পরিণামের দিক থেকে উত্তম। -সূরা নিসা (৪) : ৫৯

কুরআন মাজীদ আমাদেরকে আমাদের জীবনের সকল কথা ও কাজের মূলনীতি জানিয়ে দিয়েছে। মুমিন তার জীবনের সকল কাজ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হুকুম অনুযায়ী করবে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্যের মধ্য দিয়ে করবে। দ্বীনী ক্ষেত্রে ও দুনিয়াবী ক্ষেত্রে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাদের দায়িত্বশীল বানিয়েছেন তাদের আনুগত্য করবে। এই আনুগত্য উপরের আনুগত্যের অধীন। এরপর কোনো বিষয়ে তাদের মাঝে বিবাদ-বিসংবাদ তৈরি হলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে পেশ করবে। ওখান থেকে যে ফায়সালা আসে তা সর্বান্তকরণে মেনে নিবে। এটি তাদের দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানে জন্য কল্যাণকর। তো মুসলিম-জীবনের নীতি হচ্ছে শান্তিতে-বিবাদে সর্বাবস্থায় আল্লাহর হুকুমের সামনে সমর্পিত থাকা ।

মুসলিমের জীবনাদর্শ ইসলাম। জীবনের সকল ক্ষেত্রে সে ইসলামেরই অনুসারী। ব্যক্তি-জীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজ-জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন সকল ক্ষেত্রে ইসলামের বিধি-বিধানেরই অনুগত। ইবাদত-বন্দেগী থেকে শুরু করে লেনদেন, বিয়ে-শাদী, পর্ব-উৎসব, আদব-আখলাক, নীতি-দর্শন, বেশ-ভূষা, লাইফস্টাইল সকল ক্ষেত্রে সে উসওয়ায়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথা নবী-আদর্শের অনুসারী।

মুসলিমের এই আনুগত্য ও অনুসরণ শুধু শান্তি ও সৌহার্দের অবস্থাতেই নয়, অশান্তি ও বিবাদের ক্ষেত্রেও। মুসলিমের বিচার-সালিশ, রায়-ফায়সালা সবই হবে আল্লাহ তাআলার হুকুম অনুসারে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়ত অনুসারে।

আরেক আয়াতে কসমের সাথে বলা হয়েছে যে, নিজেদের বিবাদ-বিসংবাদের বিচারের ভার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অর্পণ করার আগ পর্যন্ত এবং তাঁর রায় সর্বান্তকরণে মেনে নেয়ার আগ পর্যন্ত মুমিন হওয়া যায় না।

কাজেই বিবাদ-বিসংবাদের ক্ষেত্রেও মুসলিমের করণীয় দ্বীন ও শরীয়তের পাবন্দ থাকা। শরীয়ত এ অবস্থায় যে করণীয় সাব্যস্ত করে তা পালন করা, যা বর্জনীয় সাব্যস্ত করে তা বর্জন করা। ইসলামী জীবনের এটি অনেক বড় মৌলিক বৈশিষ্ট্য।

এই আয়াতে যে মৌলিক শিক্ষা দেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ কুরআন ও সুন্নায় আছে, ফিকহে ইসলামীতে আছে। সেই শিক্ষা যদি মুমিনগণ অবলম্বন করেন তাহলে তাদের দুনিয়ার জীবনও সুন্দর হবে, শৃংখলাপূর্ণ হবে, আখেরাতের জীবনেও নাজাত পাওয়া যাবে, শান্তি পাওয়া যাবে।

কুরআন মাজীদের এই আয়াত থেকে আমরা জীবনের এক বাস্তবতা এবং সেই বাস্তবতায় করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা পাই। ‘তানাযূ’ বা পরস্পরে বিবাদ-বিসংবাদ মানবজীবনের এক বাস্তবতা। বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তা যতই অপ্রিয় হোক। অপ্রিয় বাস্তবতার ক্ষেত্রেও সঠিক করণীয় জানতে হয় এবং সেই করণীয় অনুসরণ করতে হয়। তাহলেই জীবন ও কর্ম সুন্দর হয়। আমরা যদি বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাই, চোখ বন্ধ করে রাখি, এতে সমস্যার সমাধান হবে না। সমস্যাটি যদি হয় সামষ্টিক জীবনের সমস্যা তাহলে চোখ বুজে থাকার দ্বারা তো সমস্যার সমাধান হবেই না, এক্ষেত্রে নিজের কর্ম ও অবস্থান কী হওয়া উচিত সেটাও সঠিকভাবে বুঝতে পারব না। এ কারণে জীবনের বাস্তবতা অপ্রিয় হলেও তা এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়; বরং সে সম্পর্কে কুরআন মাজীদ যে বিধান দান করেছে  সেই বিধান ও নির্দেশনা সঠিকভাবে জানতে হবে ও বুঝতে হবে এবং সে অনুযায়ী নিজেকে চালাতে হবে।

তো এখানে এই আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যদি তোমাদের পরস্পরে বিবাদ-বিসংবাদ হয় তাহলে বিষয়টিকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে ওপর ন্যস্ত করো। ওখান থেকে যে ফায়সালা আসে সেই ফায়সালাকে শিরোধার্য করো। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর ন্যস্ত করার অর্থ কী?  যে পর্যন্ত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের মাঝে ছিলেন ঐ পর্যন্ত সরাসরি তাঁর নিকট থেকে ফায়সালা নেওয়ার সুযোগ ছিল। যখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন তখন তাঁর উপর ন্যস্ত করা ও তাঁর ফায়সালা গ্রহণ করার অর্থ হল, কুরআন ও সুন্নাহর উপর ন্যস্ত করা এবং কুরআন-সুন্নাহর সঠিক ভাষ্যের ভিত্তিতে ফায়সালা গ্রহণ করা।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, কিন্তু তাঁর সুন্নাহ, তাঁর আনীত দ্বীন ও শরীয়ত কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই দ্বীনকে সংরক্ষণ করেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষণ করবেন। কাজেই যে বিবাদ-বিসংবাদই তৈরি হোক, মুমিন-মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে, দ্বীনের বিধানের আলোকে তার সুরাহা করা। দ্বীনের বিধানকে শিরোধার্য করা।

পৃথিবীতে বহু রকমের মতভেদ হতে পারে। নানা বিষয়ে নানা প্রকারের বিবাদ-বিসংবাদ তৈরি হতে পারে। সকল বিবাদ এক প্রকারের হবে এটা সম্ভব নয়। অনেক রকমের হবে। বিবাদের মূলে যে মতভেদ-মতভিন্নতা তা বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। কিছু বিবাদ-বিসংবাদ এমন হয় যেখানে দুটো মতই সঠিক। দুটো মতের পক্ষেই শরীয়তের দলিল রয়েছে। যেরকম আমাদের আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের একাধিক মত সামনে এসেছে। এ জাতীয় ক্ষেত্রে যেহেতু উভয় মতের পক্ষে কুরআন ও সুন্নাহর দলিল রয়েছে সেহেতু উম্মাহর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত যে, তাদের দলিলসম্মত সিদ্ধান্তগুলো সবগুলোই সহীহ। তো এ জাতীয় বিষয় নিয়ে যদি বিবাদ-বিসংবাদ তৈরি হয় তাহলে তা কুরআন ও সুন্নাহর সামনে পেশ করা হলে কুরআন-সুন্নাহর মাহির ব্যক্তিবর্গ বলে দেবেন, এখানে উভয় মত সঠিক। এখানে এক পক্ষ অপর পক্ষের মতকে সম্পূর্ণ বাতিল করে দেওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং একে অপরের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও এবং যার জন্য যে মত অনুসরণ উপযোগী হয় সে সেই মতের অনুসরণ কর। ফলে এখানে একাধিক মত থাকবে, কিন্তু বিবাদ-বিসংবাদ থাকবে না।

আর কিছু মতভেদ এমন আছে যেখানে একটা সহীহ, অপরটা গলত। এক সিদ্ধান্ত ঠিক, আরেক সিদ্ধান্ত ভুল। এরকম মতভেদ যদি হয় এবং এর ভিত্তিতে বিবাদ-বিসংবাদ হয়, তাহলে এই মতভেদ কুরআন ও সুন্নাহর উপর ন্যস্ত হলে কুরআন-সুন্নাহর মাহির ব্যক্তিগণ বলে দেবেন যে, এই অবস্থানটা সহীহ, এই অবস্থানটা গলত। সুতরাং যারা ভুল অবস্থানে রয়েছ তাদের কর্তব্য, সেই অবস্থান ছেড়ে দেওয়া এবং সঠিক অবস্থানের দিকে ফিরে আসা। এক্ষেত্রে মুমিনের কর্তব্য হবে সেই ভুল মতকে বর্জন করা এবং সেই ভুল মতের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা, সহায়তা-সমর্থন সবকিছু বর্জন করা। এই বর্জনের মধ্য দিয়ে সেই ভুল মতটা সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়বে এবং বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কুরআন মাজীদ তো সহযোগিতা-সমর্থনের মূলনীতিও পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে-

‘সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে তোমরা পরস্পরকে সাহায্য কর; পাপ ও সীমালংঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না।’ -সূরা মায়েদা (৫) : ০২

ভুল মতের পক্ষে যদি সহযোগিতা-সমর্থন অব্যাহত রাখা হয় তাহলে সেটা তো গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পর সহযোগিতার মধ্যে পড়ে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের ক্ষেত্রে মানুষ একে অপরের সহযোগিতা কেন করে?

নানা কারণে করে। নিজের বংশ ও পরিবার বলে করে। নিজের দল ও গোষ্ঠী বলে করে। এই সব কারণে অন্যায়ে সহযোগিতাকে হাদীস শরীফে ‘আসাবিয়্যাহ’ বলা হয়েছে, যা ইসলামী জীবনের নয়, জাহেলী জীবনের বৈশিষ্ট্য।

হাদীস শরীফে আছে, এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আসাবিয়্যাহ’ কী? তিনি বললেন,

নিজের কওমকে জুলুমে সহযোগিতা করা। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫১১৯

তো সমর্থন-সহযোগিতার মূল মানদণ্ড হতে হবে নেক কাজ ও দ্বীনের আদেশ-নিষেধের মান্যতা। দ্বীনের কোনো ভুল ব্যাখ্যা ও ভুল কর্মপন্থার ব্যাপারে কারো সমর্থন-সহযোগিতার সুযোগ নেই। সে আমার বংশের হলেও, পরিবারের হলেও, আমার দলের হলেও, সম্প্রদায়ের হলেও।

কুরআন-সুন্নাহ কিন্তু আমাদেরকে আমাদের কর্মনীতি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে। এখন আমাদের কর্তব্য, বাস্তব ও প্রায়োগিক জীবনে সেই নীতিকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করা এবং অনুসরণ করা। এটা আমাদের দুনিয়ার জন্যও ভালো, আখেরাতের জন্যও ভালো।

বাস্তব ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহর সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে কুরআন-সুন্নাহর মাহির হক্কানী রব্বানী উলামায়ে কেরামের কাছে। তাঁরাই দ্বীন ও শরীয়তের বিশেষজ্ঞ। কাজেই বিবাদ-বিসংবাদের ক্ষেত্রে তাদের মাধ্যমে দ্বীন ও শরীয়তের বিধান জেনে সেই মোতাবেক আমল করতে হবে।

এই ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কারো কারো তরফ থেকে যে প্রশ্ন আসতে পারে তা হচ্ছে, আমরা তো  এদিকেও আলিম পাচ্ছি, ওদিকেও আলিম পাচ্ছি। তাহলে কীভাবে বুঝব যে, কোনটা সহীহ, কোনটা গলত। আসলে এই প্রশ্নগুলো যখন মনে বা মুখে আসে ঐ সময় নিজের মুহাসাবা করা দরকার। নিজেকেই জিজ্ঞাসা করা দরকার যে, আসলেই কি এই কারণে বিষয়টা আমার সামনে অস্পষ্ট, না আমি এটাকে আমার মনমতে চলার জন্য বাহানা হিসেবে গ্রহণ করছি। নিজেকে জিজ্ঞাসা করলে জবাব পাওয়া যাবে। এখানে বুঝতে হবে যে, সত্য ও ন্যায়কে সঠিকভাবে পাওয়া আমার নিজের প্রয়োজন। আমাকে নিজের কাছে ও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে পরিষ্কার থাকতে হবে। এই চেতনা নিয়ে কেউ যদি চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে হয়ত সঠিক রূপটা সামনে এসে যাবে, অন্তত সত্যকে বোঝার সঠিক অন্বেষা সৃষ্টি হবে।

কোনো আলিমের কোনো সিদ্ধান্ত যখন ভুল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়, জমহুর উলামা ঐ সিদ্ধান্তকে ভুল হিসেবে চিহ্নিত করেন তখন তার অনুসরণের কোনো সুযোগ থাকে না। এই অবস্থায় ওই মতের অনুগামী হওয়া উচিত নয়। সেটাকে সহায়তা ও সমর্থনের মাধ্যমে উজ্জীবিত করা উচিত নয়। আমাদের আলিমগণ এ বিষয়ে বারবার সতর্ক করেছেন। হাদীস শরীফেও এ বিষয়ে মৌলিক নির্দেশনা আছে।

হাদীস ও সুন্নাহর মাহির সাহাবা-তাবেয়ীন, আমাদের সালাফ এ বিষয়টি খুব পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। হযরত ওমর ফারুক রা. বলেছেন,  তিনটি বিষয় মানুষকে গোমরাহ করে। অর্থাৎ যে সকল কারণে মানুষ বিচ্যুত হয় তার মধ্যে তিনটা কারণ গুরুত্বপূর্ণ।

 

এক. المضلون الأئمة ঐসকল নেতৃবৃন্দ, যারা মানুষকে ভুল পথে নিয়ে যায়। সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিচালনায় যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা যদি ভুল পথে চলে, দ্বীন-শরীয়াহ বিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে মানুষ তাদের অনুসরণ করে ভুল পথে চলতে থাকবে। মানুষের বিভ্রান্তির, ভুল পথে যাওয়ার এক বড় কারণ এটা।

দুই.  بالكتاب المنافق جدال মুনাফিকের কুরআন নিয়ে বিতর্ক। হয়ত একেবারেই খালিছ মুনাফিক, ইসলামের বেশ ধারণ করেছে অথবা মুসলিম, কিন্তু কাজকর্ম ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক নয়, কর্মগত দিক থেকে মুনাফিকের কাতারে, এ ধরনের মানুষ যখন কুরআন নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে তখন এদের অপযুক্তিতেও মানুষ বিভ্রান্ত হয়। আমাদের সমাজেও আছে এরকম। কুরআন গবেষণার নামে নানা বিভ্রান্তি, নানা ভুল সিদ্ধান্তের প্রচার। মানুষ সেগুলোকে কুরআনের সিদ্ধান্ত মনে করে অনুসরণ করে। বিভ্রান্ত হয়।

 

তৃতীয় বিষয়, যার কারণে মানুষ বিভ্রান্ত হয় عالم زلة – কোনো আলিমের পদস্খলন। যেহেতু আলিম অনুসরণীয়, তাই যখন আলিমের সিদ্ধান্ত ভুল হয়, আলিমই ভুল কথা বলে, ভুল কথা প্রচার করে, তাহলে যারা সরাসরি দলিল-প্রমাণের বিশ্লেষণের যোগ্যতা রাখে না তাদের অনেকের জন্য এটা বিভ্রান্তির কারণ হয়। শরীয়তের অনেক নসে আলিমের অনুসরণ করার কথা আছে। সাথে সাথে এ কথাও বলে দেওয়া হয়েছে যে, আলিমের যে সিদ্ধান্ত কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী হবে সেই সিদ্ধান্ত মানা যাবে না। সেটা তার পদস্খলন হিসেবে চিহ্নিত হবে।

এখন কোনটা ভুল সিদ্ধান্ত, কোনটা সঠিক সিদ্ধান্ত, এই সিদ্ধান্ত কে দিবে? এই সিদ্ধান্তও উলামায়ে কেরামই দেবেন। একজন সাধারণ মানুষের কাছে একটা কথা ভুল মনে হল, শুধু তার মনে হওয়ার দ্বারাই সেটা ভুল সাব্যস্ত হবে না। তার কাছে ঠিক মনে হল, শুধু তার কাছে ঠিক মনে হওয়ার দ্বারাও কথাটা ঠিক সাব্যস্ত হবে না। এটা সাব্যস্ত হবে যারা শরীয়তের মাহির শরীয়তের বিশেষজ্ঞ, তাদের সিদ্ধান্তের দ্বারা। তারা যখন বলবেন, এই কথাটা ভুল আমাকে বিশ্বাস করতে হবে, এই কথাটা ভুল। তারা যখন বলবেন, এই সিদ্ধান্তটা সঠিক আমাকে বিশ্বাস করতে হবে, এই সিদ্ধান্তটা সহীহ। যেরকম আলিমের অনুসরণের কথা আছে তেমনিভাবে এটাও বলা হয়েছে যে, কারো কোনো সিদ্ধান্ত যদি ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে সেই সিদ্ধান্ত মানা যাবে না।

দেখুন, এভাবেই কিন্তু ইসলামী শরীয়ত আমাদেরকে সীমার ভেতরে রাখছে। আমাদেরকে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় রাখছে। আমাদের কর্তব্য, কুরআন ও সুন্নাহকে অনুসরণ করা। উলামায়ে কেরামের অনুসরণ তো আমরা এজন্যই করি যে, এটা কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণের নিরাপদ ও স্বাভাবিক পন্থা। আমরা ব্যক্তির মত হিসেবে অনুসরণ করি না। ব্যক্তির  ভুলও হতে পারে। যদি তার সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে সেই সিদ্ধান্ত বর্জন করতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত অনুসরণ করার সুযোগ নেই।

দেখুন, কখনো কখনো ব্যক্তির ব্যাখ্যা ও ভাষ্য এমনভাবে উপস্থাপিত হয় যেন সেটা সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ, অথচ সেটা সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ নয়, ব্যক্তির ভাষ্য ও ব্যাখ্যা। সেই ভাষ্য সঠিক হতে পারে, কিন্তু ভাষ্য তো ভাষ্যই, সেটা তো সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ নয়।

 

পূর্ববর্তি সংবাদনির্বাচনী সহিংসতায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ প্রকাশ
পরবর্তি সংবাদশরিকদের উন্মুক্ত নির্বাচন আওয়ামী লীগের কৌশল!