শরীফ মুহাম্মদ ।।
স্বাধীনতা বা আজাদি আল্লাহ তাআলার দান। মানুষ সৃষ্টিগতভাবে স্বাধীন। কোনো পরাধীন কিংবা ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া কারও জন্য সহনীয় হয় না। কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীন নাগরিক হতে পারা মানুষের জন্য প্রত্যাশিত। এ স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে দুনিয়ায় সুস্থতা ও কল্যাণমুখী জীবন যাপনে আল্লাহর দেওয়া অপরিমেয় সামর্থের অধিকারী হওয়া। এর জন্য বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ ও কৃতজ্ঞতার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে থাকা উচিত।
যুগে যুগে দেশে দেশে স্বাধীনতার জন্য মানুষ বহু ত্যাগ দিয়েছেন। আমাদের এ ভূখণ্ডে নিকট অতীতে স্বাধীনতার জন্য লড়াই হয়েছে ৪৭ বছর আগে, ১৯৭১ সনে। নয় মাসব্যাপী এই যুদ্ধ শুরু হয় ওই বছরের মার্চের ২৫ তারিখ রাত থেকে। ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে দেশটি স্বাধীনতা অর্জন করে। পাকিস্তানের অংশ-পূর্বপাকিস্তান আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ নামে। ১৬ ডিসেম্বর এ দেশের বিজয় দিবস।
স্বাধীনতা কিংবা বিজয়রে মাস এলে মনে পড়ে এ ভূখণ্ডের স্বাধীনতা বা আজাদির আত্মত্যাগদীপ্ত দাস্তানের কথা। মনে পড়ে নিকট অতীতের মুক্তিযুদ্ধের কথা। মনে পড়ে মুক্তিযুদ্ধরে আগওে এ ভূখণ্ডে অনেক দীর্ঘ ও সাধনাদীপ্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। খণ্ডিত চর্চার কারণে দীর্ঘ সে সংগ্রামের মাধুর্য ও মাহাত্ম্যের কথা আমরা প্রায় ভুলতেই বসেছি। অথচ ইতিহাসের সেই প্রলম্বিত আজাদির পথচলা ছিল আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনেই। এ আলোচনায় সে স্বর্ণালি প্রসঙ্গটির দিকেই আমরা চোখ ফেরাতে চাই।
১৭৫৭ সনের ২৩ জুন পলাশীর আমবাগানে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে বাংলার স্বাধীনতা লুণ্ঠিত হয়। এর পরের আধা শতকে একে একে ভারতবর্ষের সবকটি অঞ্চলই বৃটিশ শক্তির করায়ত্বে চলে যায়। পরাধীনতার এ নাগপাশ ছিন্ন করতে কিছুকালের মধ্যইে ছোট-বড় নানা বিপ্লবী উদ্যোগ নির্মিত হয়। সংঘটতি হয় যুদ্ধ ও সংগ্রাম। নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রামের পথ রচনা হয় আরো পর। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ.-এর শিষ্য ও সন্তান শাহ আব্দুল আযীয রহ. প্রথম ভারবর্ষকে ‘দারুল হরব’ ঘোষণা করে ফতোয়া দেন ১৮১৯ সনে। এরপরই প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয় আজাদির সংগ্রামের পথে দীর্ঘ পথযাত্রা। সেটিই ছিল উনবিংশ শতকের বাংলা-ভারতব্যাপী এক ব্যাপক ও সুসংগঠিত স্বাধীনতা বা আজাদির আন্দোলন।
এ আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন উত্তর প্রদেশের রায়বেরেলির সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ রাহ.। আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল বাংলা-ভারত থেকে ফিরিঙ্গী শাসন উচ্ছেদ করা, কুসংস্কারমুক্ত মুসলিম জীবনধারা প্রতিষ্ঠা করা এবং বাংলা-ভারতে একটি স্বাধীন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ‘তরীকায়ে মুহাম্মাদী’ কিংবা ‘জিহাদ আন্দোলন’ হিসেবে ইতিহাসে এই আন্দোলন প্রসিদ্ধ ছলি। অবশ্য ব্রিটিশ শাসক ও তাদের অনুচরদের কেউ কেউ একে ওহাবী আন্দোলন হিসেবেও পরিচিত করার চেষ্টা করেছে, যা কোনোভাবেই সঠিক নয়। সর্বভারতীয় এ আন্দোলনে আজকের বাংলাদেশ বা তৎকালীন পূর্ববঙ্গের আলেমসমাজ, মুসলিম মনীষী ও সাধারণ মুসলিমসমাজের ব্যাপক ও বিস্ময়কর অংশগ্রহণের অধ্যায়টি ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও সজীব।
দুই.
ব্রিটিশ সিভিলিয়ান উইলিয়াম হান্টার ১৮৭১ সনে প্রকাশিত তার ‘দি ইন্ডিয়ান মুসলমানস’ বইটির প্রথম অধ্যায়ের শুরুতেই লিখেছেন, ‘বাংলার মুসলমানরা এক অদ্ভুত অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। কয়েক বছর ধরে একটা বিদ্রোহী বসতি আমাদের সীমান্ত প্রদেশকে বিপন্ন করে তুলেছে। সময়ে সময়ে সেখান থেকে গোঁড়া মুজাহিদ বাহিনীর লোক দলে দলে বের হয়ে আমাদের ছাউনি আক্রমণ করছে, আমাদের গ্রাম পুড়িয়ে দিচ্ছে, আমাদের প্রজাদেরকে খুন করছে। ইতিমধ্যেই তারা আমাদের সেনাবাহিনীকে তিনটি ব্যয়সাধ্য যুদ্ধে লিপ্ত করেছে। মাসের পর মাস ধরে সীমান্তের এই বিদ্রোহী বসতিতে বাংলাদেশের অন্তস্থল থেকে নতুন নতুন মুজাহিদ এসে যোগ দিয়েছে। একের পর এক সরকারি মামলায় প্রকাশ পেয়েছে, ষড়যন্ত্রের এই তিমিরজাল আমাদের প্রদেশগুলিতে ছড়িয়ে আছে এবং পাঞ্জাব সীমান্তের বাইরে অবস্থিত জনবিরল পর্বতগুলির সঙ্গে এক সূত্রে বাঁধা আছে গঙ্গা নদীর মোহনা পর্যন্ত অসংখ্য ষড়যন্ত্র ঘাঁটি। গ্রীষ্ম-প্রধান বিস্তৃত জলাভূমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা নদীর মোহনা পর্যন্ত এ-সব ষড়যন্ত্রের ঘাঁটি বিদ্যমান। আরও প্রকাশ পেয়েছে, একটি সংগঠনের মারফত ব-দ্বীপ আকৃতি বঙ্গদেশ থেকে নিয়মিতভাবে মানুষ ও টাকাকড়ি সংগৃহীত হয়ে দু-হাজার মাইল দূরে অবস্থিত বিদ্রোহী বসতিতে চালান হয়Ñ আমাদেরই শাহী সড়কের উপর দিয়ে একের পর এক ঘাঁটি পার হয়ে। প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন ও ধনী লোকেরা এই ষড়যন্ত্রের নায়ক। তারা টাকা-পয়সা এমন সুকৌশলে চালান দেয় যে, এই বিপজ্জনক ষড়যন্ত্রমূলক কাজও তাদের জন্য ব্যাংকের লেনদেনের মতো সহজ ও নিরাপদ হয়ে পড়েছে।’
তিন.
উনবিংশ শতাব্দির প্রথমভাগেই এ আন্দোলন শুরু হয়। কয়েকটি জয়-পরাজয় এবং কিছুকাল একটি স্বাধীন ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের পর যখন ১৮৩১ সনের ৬ মে বালাকোটের বিয়োগান্তক ঘটনাটি ঘটে, তখন এ আন্দোলন অল্প কিছু সময়ের জন্য হোঁচট খায়। কিন্তু এরপরও আবার সংগঠিত হয়ে পুরো শতাব্দী জুড়ে থেমে থেমে এ আন্দোলন চলতে থাকে। ১৮৫৭ সনের সিপাহী বিপ্লবসহ ব্রিটিশবিরোধী ছোট-বড় বহু যুদ্ধে এ আন্দোলনের কর্মীরা জীবনবাজি লাগিয়ে লড়াই করেন। ১৮৭০ সনের পর থেকে ১৯৪৭ সনে ব্রিটিশ শক্তির বিদায় পর্যন্ত এ আন্দোলনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাব ছিল সক্রিয়। এ আন্দোলন শুরুর কিছুকাল পর (বালাকোট পূর্ব) থেকেই বাংলাদেশের আলেম, মাশায়েখ ও মুসলিম মণীষীরা এর সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন। বহু সংখ্যক সংগ্রামী এতে শহীদ হন, বহু মুজাহিদ ফাঁসিতে ঝুলনে। যাবজ্জীবনের শাস্তি ভোগ করেন হাজার হাজার জন। কর্মী সংগঠন, অর্থ সংগ্রহ আর লড়াই-সংগ্রামে তারা জীবনজাগানো এক ইতিহাস রচনা করেন। বালাকোটের বেদনাদায়ক ঘটনার পর এই আন্দোলন যখন পাঞ্জাবের পাশে ভারত-আফগান সীমান্তের সিত্তানা ও মুলকাকে কেন্দ্র করে চলতে থাকে তখন পূর্ববঙ্গের মুজাহিদরা কীভাবে তাতে অংশগ্রহণ করেন, তার বিক্ষিপ্ত বর্ণনা উঠে এসেছে হান্টারের বইটিতেই। ওই বর্ণনার নির্যাস তুলে ধরা হয় ইসলামি বিশ্বকোষের একাদশ খণ্ডের (প্রথম প্রকাশ) ৬০৮ পৃষ্ঠায়। সেই নির্যাসটুকু এখানে আমরা দেখার চেষ্টা করতে পারি।
সীমান্তের জিহাদে তথা জিহাদী আন্দোলনে বাংলার অংশগ্রহণ সম্বন্ধে ইংরেজ লেখক হান্টার লিখেছেন :
‘১. মাসের পর মাস ধরে সীমান্তের বিদ্রোহী বসতিতে বাংলাদেশের অন্তস্থল থেকে নতুন নতুন মুজাহিদ এসে যোগ দিচ্ছে।
২. বঙ্গদেশ থেকে নিয়মিতভাবে মানুষ ও টাকা-কড়ি সংগৃহীত হয়ে দুই হাজার মাইল দূরে অবস্থিত বিদ্রোহী বসতিতে চালান হয় আমাদেরই শাহী সড়কের উপর দিয়ে একের পর এক ঘাঁটি পার হয়ে।
৩. নয় মাস ধরে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান সংবাদপত্রের পৃষ্ঠায় শুধু এই আলোচনাই হচ্ছে : মহারাণীর বিরুদ্ধে মুসলমানদের যুদ্ধ করা ফরয কিনা…।
৪. বাংলাদেশ থেকে বিদ্রোহী বসতিতে নিয়মিতভাবে টাকা চালান করার জন্য তারা (মুজাহিদীন) পাকা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।
৫. নিম্নবঙ্গে প্রচারকদের মধ্যে একজন ছিলেন ভীষণ গোঁড়া। তিনি (জয়নাল আবেদীন) পূর্বদিকের জেলাগুলিতে বিশেষত ঢাকা ও সিলেট জেলায় প্রচারকার্য চালাতেন। তিনি এক হাজার মুজাহিদ নিয়ে উত্তরদিকে ১৮০০ মাইল সফর করে সীমান্তে উপস্থিত হন।
৬. বাংলাদেশে এই প্রচারক দল শক্তিশালী হিসেবে উদিত হয়েছিল। বাঙালী সূক্ষ্মবুদ্ধি শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলনকে নবজীবন দান করেছিল।
৭. বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলে বহু বিদ্রোহী বসতি গড়ে উঠেছিল।
৮. ভীরু (?) বাঙালীও ক্ষেত্রবিশেষে দুর্দান্ত আফগানের মতো লড়তে জানে।
৯. মুসলমান প্রজাগণ গত পৌণে এক শতক বছর ধরে একদল বিদ্রোহী বাহিনীকে সর্বদাই প্রস্তুত করে রেখেছে, প্রথমে রণজিৎ সিংহের বিরুদ্ধে এবং তারপর তার উত্তারাধিকারী হিসেবে আমাদের বিরুদ্ধে। সুদূর বাংলাদেশ হতেও তারা সীমান্তের বসতির জন্য দলের পর দল সুসজ্জিত বাহিনী পাঠিয়েছে।
১০. ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার কর্তব্যবিষয়ে গদ্যে ও পদ্যে যেই বিরাট প্রচার সাহিত্য গড়ে উঠেছিল তার সংক্ষিপ্তসার দিতে গেলেও একটা বিশাল গ্রন্থ হয়ে পড়ে। এই ধর্মপন্থীরা যেই বিরাট সাহিত্য সৃষ্টি করেছিল তা ব্রিটিশ শক্তির পতনের ভবিষদ্বাণীতে ও জিহাদ করার কর্তব্য-নির্ধারণে ভরপুর।’
চার.
পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার নিসার আলী তিতুমীর গড়ে তোলেন ব্রিটিশ-অনুচর-জমিদার ও সরাসরি ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের কেল্লা। ১৮২২ সনে কলকাতায় কিংবা হজ্বের সফরে মক্কায় সাইয়েদ আহমদ শহীদ রহ.-এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন তিনি। ১৮৩১ (বালাকোটে যুদ্ধের বছর)-এর ১৯ নভেম্বর ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে তিনি শহীদ হন। অপরদিকে হাজী শরীয়তুল্লাহ তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বাহাদুরপুর-মাদারিপুরে গড়ে তোলেন ফারায়েজী আন্দোলন। ১৮১৮ সনে তিনি সংস্কার আন্দোলনের পাশাপাশি নিজ এলাকায় কেন্দ্র গড়ে জমিদার ও ফিরিঙ্গী শাসন বিরোধী সংগ্রামের পথ রচনা করেন। ১৮৪০ সনে তার ইন্তেকালের পর তার সন্তান দুদুমিয়ার নেতৃত্বেও দীর্ঘকাল এ আন্দোলন চলে। বিভিন্ন সূত্রে উল্লেখ পাওয়া যায়, হজ্বের সফরে তিনিও সাইয়েদ আহমদ শহীদ রাহ.-এর সংশ্রব গ্রহণ করেন।
উনবিংশ শতকের জিহাদ আন্দোলনে প্রভাবিত ছিল উপরের দুটি আন্দোলন। স্বতন্ত্র আন্দোলনের কারণে এ দুটি ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু বালাকোট ঘটনার আগে ও পরে সর্ব ভারতীয় জিহাদ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত অনালোচিত ও অচর্চিত বহু বীর-শহীদ এই বাংলাদেশ থেকেও যুক্ত ছিলেন বলে জানা যায়। এ তালিকার সংগঠক ও নেতৃস্থানীয় কিছু সংগ্রামীর নাম এখানে উল্লেখ করা যায়। এঁদের প্রায় প্রত্যেকেই ছিলেন পণ্ডিত আলেম ও উঁচু পর্যায়ের বুযুর্গ ব্যক্তিত্ব। অতুলনীয় আধ্যাত্মিক রাহবার হিসেবেও স্থানীয়ভাবে তাদের খ্যাতি ছিল। এঁদের অন্যতম প্রধান ছিলেন নোয়াখালীর মাওলানা গাজী ইমামুদ্দীন বাঙ্গালী রহ.। আরও রয়েছেন চট্টগ্রাম মিরসরাইয়ের শায়খ সুফী নূর মুহাম্মদ নিযামপুরী রহ., সাতকানিয়ার মাওলানা আব্দুল হাকীম রহ., কুষ্টিয়া-কুমারখালীর মাওলানা কাজী মিয়াজান রহ.। এছাড়াও বালাকোট শহীদ মৌলভী আলীমুদ্দীন রহ., ময়মনসিংহ-ত্রিশালের মাওলানা গাজী আশেকুল্লাহ রহ., মাওলানা লুৎফুল্লাহ শহীদ রহ., মৌলভী আলাউদ্দীন বাঙ্গালী রহ., মাওলানা আশরাফ আলী মজুমদার রহ., মাওলানা মুহাম্মদ মনীরুদ্দীন রহ., মাওলানা আমীনুদ্দীন রহ., শায়খ হাসান আলী রহ., মুন্সি ইবরাহীম শহীদ রহ., সাইয়েদ মুযাফফর শহীদ রহ., মৌলভী করীম বখশ শহীদ রহ., হাজী বদরুদ্দীন রহ., মাওলানা আজীমুদ্দীন রহ. ও মাওলানা আশরাফ আলী রহ. প্রমুখ। ইসলামী বিশ্বকোষে উল্লিখিত এ তালিকার বেশ কয়েকজন সংগ্রামীর বাস্তুভিটা ও বংশধরেরও সন্ধান পাওয়া গেছে।
পাঁচ.
মুক্তিযুদ্ধের নিকট ইতিহাস সম্পর্কে দেশবাসী পড়েন, শোনেন এবং জানেন। কিন্তু ১৯০ বছরের ব্রিটিশ-উপনিবেশ থেকে মুক্ত হওয়ার এ অঞ্চলরে একদল জানবায মানুষের যে সংগ্রাম, সে সংগ্রামের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস জানার সুযোগ আমাদের হয় না। আজাদির সর্বভারতীয় সংগ্রামের প্রসঙ্গ উঠলেও সে পর্যায়ে এই অঞ্চলের (তৎকালীন পূর্ববঙ্গ) সংগ্রাম-প্রয়াসের কথা তেমন একটা ওঠে না। তথ্যের অভাব, উপাদানের ঘাটতি এবং আমাদের অনাগ্রহে সংগ্রামদীপ্ত সেই দাস্তান চাপা পড়ে থাকে। অপরদিকে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র সংগ্রামে এ অঞ্চলের কারও নাম জানতে চাইলে কেবল উচ্চারতি হয় বিপ্লবী সূর্যসেন ও তার সঙ্গীদের কথা। বিশ শতকের দ্বিতীয়-তৃতীয় দশকে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের অংশ হিসেবে তার সশস্ত্র কয়েকটি অর্থ ও অস্ত্র লুটের কথা এমনভাবে চর্চা করা হয়, যেন এমন মাপের সংগ্রাম পূর্ববঙ্গে আর হয়নি। অথচ এরও শত বছর আগে থেকেই এ অঞ্চলে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের নানা আয়োজন আলেমসমাজ, মাশায়েখ ও মুসলিম মনীষীদের হাতে সম্পন্ন হয়েছে। সংগঠিত হয়েছে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম। ঘটেছে সাগরসমান রক্ত ও জীবন ত্যাগের ঘটনা।
আমাদের ত্যাগী সাধক-পূর্বপুরুষদের এই সব অবদান ও ঋণ আমরা ভুলে যেতে চাইলেই কি ইতিহাস আমাদের দায়মুক্তি দেবে? দেবে না। তাই যথার্থ স্মরণ ও চর্চার মধ্য দিয়ে এ দেশ ও জাতির মুক্তির অতীত, এ ভূখণ্ডের আজাদি ও স্বাধীনতার ইতিহাস পুনঃপাঠে আত্মনিয়োগ করতে হবে। জানতে হবে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।জানতে হবে ৭১-এর শত-দেড়শত বছর আগেরও ইতিহাস।
