নারায়ণগঞ্জে ফখরুল: এই নির্বাচনেই আমাদের জিততে হবে

ইসলাম টাইমস ডেস্ক: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সিইসি বলেছেন, দেশে নাকি গণতন্ত্রের সুবাতাস বইছে। সুবাতাস কেমন? সুবাতাস কি জনগণ নির্বাচনী সভায় আসতে না পারার সুবাতাস? বিরোধীদের প্রচার করতে না দেওয়া ও মাইক লাগাতে না দেওয়ার সুবাতাস? কী চমৎকার নির্বাচন! কিন্তু এই নির্বাচনেই আমাদের জিততে হবে। ৩০ তারিখ নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে দেশের মানুষ কি আলোতে যাবে নাকি অন্ধকারে থাকবে, স্বাধীন থাকবে নাকি পরাধীন, গণতন্ত্রে পথে থাকবে নাকি স্বৈরতন্ত্রে থাকবে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আসবে নাকি আসবে না।

শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে মানুষ ততই জেগে উঠেছে, তাই শেখ হাসিনার সরকার ভয় পেয়ে গেছে ।

তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর হাজার হাজার নেতাকর্মীদের জেলে নেয়া হয়েছে। তাদের জামিন দেয়া হচ্ছে না। অথচ ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তফসিল ঘোষণার পর কোনো গ্রেফতার করা হবে না।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব প্রশ্ন করে বলেন, কী বলব আপনাকে সত্যবাদী?

এসময় শ্রোতারা চিৎকার করে বলতে থাকেন বেঈমান, মিথ্যাবাদী।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বললেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে। কিন্তু কীসের লেভেল প্লেয়িং? একদল মঞ্চ করে হাজার হাজার লোক নিয়ে, হেলিকপ্টারে করে, বিভিন্নভাবে পতাকা উড়িয়ে সভা করছে। আর আমাদের সভা করতে দেয়া হয় না।’

নানা বাধা বিপত্তির চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এই নির্বাচনেই আমাদের জয়ী হতে হবে, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। আমাদের ১৫ জন প্রার্থীকে তারা জেলখানায় পাঠিয়েছে। গতরাতেও ধানের শীষের একজন প্রার্থীকে জেলে পাঠানো হয়েছে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বিগত ১০ বছর যাবৎ ধরে এই স্বৈরাচারী সরকার আমাদের অসংখ্য ভাইকে গুম করেছে, আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বিনা কারণে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। সবশেষ আমাদের গণতন্ত্রের মাতা যিনি গণতন্ত্রের মাতা, যিনি গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘদিন লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন সেই বেগম খালেদা জিয়াকে বিগত ১০ মাস অন্ধকার কারাগারে বন্দি রেখেছে। তিনি এখন প্রতিটি মুহূর্ত অপেক্ষা করছেন কবে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পতাকা উড়বে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, তারা এখন মানুষের কাছে উন্নয়নের কথা বলে। অথচ তারা এই উন্নয়নের নামে মেগা প্রকল্প থেকে চুরি, বিদ্যুৎ চুরিসহ ব্যাংক-শেয়ারবাজার লুটপাট করতে করতে বর্তমান সরকার ভোট চুরিতেও ওস্তাদ হয়ে উঠেছে। তাদের এই ভোট চুরি ঠেকাতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলছে, ‘তারা (সরকার) বলছে, আগের রাতেই ব্যালটবক্সে ভোট ভরে রাখবে। তাই তাদের ভোট চুরি ঠেকাতে আগের রাত থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাহারা বসাতে হবে। এবার আর কোনও ছাড় দেওয়া হবে না।’

পুলিশ, বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ), সেনাবাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে আছেন। চাকরি বিধি অনুযায়ী নিরপেক্ষতার সঙ্গে এ দায়িত্ব পালনে আপনারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আপনারা নিরপেক্ষ থাকবেন। আপনারা জনগণের পক্ষে অবস্থান নেবেন, জনগণের বিরুদ্ধে নয়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ। আমরা যা বলি তা শুধু শুনেন। কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না। অসহায়। নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই, কোমর সোজা করে দাঁড়ান। সংবিধান ও রাষ্ট্র আপনাকে যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা দিয়েছে তা সঠিকভাবে পালন করুন। না পারলে চলে যান। কিন্তু কোনো অন্যায় করবেন না। অন্যায় করলে জনগণ মেনে নিবে না।

সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা বারবার বলে দেশের উন্নয়ন হয়েছে। হ্যাঁ উন্নয়ন হয়েছে, উন্নয়ন হয়েছে তাদের। তাদের পকেট ভারি হয়েছে। বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দাম, পানির দাম, চালের দাম, বাড়ি ভাড়া বাড়ছে। রাস্তায় খানাখন্দে ভরা। শেয়ারবাজার লুট করেছে, ব্যাংক লুট করেছে। বলেছিল, ঘরে ঘরে তরুণদের চাকরি দিবে। হ্যাঁ, চাকরি আছে। তবে ১২ লক্ষ টাকা খরচ করে চাকরি পেতে হয়। তাও ডিএনএ টেস্ট করে আওয়ামী লীগ হতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে তরুণদের চাকরি দিব। চাকরি না হওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা দিব। আমরা মেয়েদের বিনা বেতনে উচ্চশিক্ষা করার সুযোগ দিব, সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। এই দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আঘাত দেওয়া যাবে না। দাড়ি টুপি পরলেই জঙ্গি বললে চলবে না। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের ওপর হামলা করা যাবে না। সব ধর্মের দেশ বাংলাদেশ।

এ সময় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা।

পূর্ববর্তি সংবাদচার ডিসিকে ‘সতর্ক হওয়ার’ হুমকি দিয়ে উড়ো চিঠি!
পরবর্তি সংবাদঅলীক কাহিনী : আখেরী যামানায় একজন পুরুষের বিপরীতে ১৫/২০ জন নারী হবে!