কুমিল্লা ভাটপাড়া বড় মসজিদের ঐতিহ্য-আলো

খসরু খান ।।

কুমিল্লার সদর দক্ষিণের ধনপুর-ভাটপাড়া বড় মসজিদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের দ্যুতি। সোয়াগাজি বাজার থেকে সামান্য ভেতরে এই মসজিদ। এ মসজিদে দীর্ঘকাল এতেকাফ করেছেন হজরত মাদানী রহ.-এর বিশিষ্ট শাগরিদ ও খলিফা ফেনুয়ার হজরত আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন রহ.।

ভাটপাড়ার বর্ষীয়ান ব্যক্তিত্ব সাবেক ডিপিএমজি আলহাজ্ব ইদরীস মিয়া (৯২) জানান, ১৯৪৬ সালে নিকটবর্তী এলাকায় তাশরিফ এনেছিলেন শায়খুল ইসলাম হজরত হোসাইন আহমদ মাদানী রহ.। সাবেক মন্ত্রী আশরাফুদ্দীন চৌধুরীসহ এ অঞ্চলের অনেকেই তখন তাঁর হাতে বায়াত গ্রহণ করেন।

৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কিছুদিন পর থেকে (আনুমানিক ১৯৫২) হজরত মাদানী রহ.-এর পরামর্শে ভাটপাড়া বড় মসজিদে রমজানের শেষ দশক এতেকাফে বসতেন তারই শাগরিদ ও খলিফা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন ফেনুয়ার হুজুর রহ.।

তিনি যখন এতেকাফে বসতেন তখন দেশের নানা প্রান্ত থেকে তার সঙ্গে এতেকাফের সময় ছুটে আসতেন বহু আলেম-উলামা, দ্বীনদার মানুষ। প্রায় শতাধিক মানুষের তেলাওয়াত-ইবাদতে আলোকিত হয়ে উঠত এই মসজিদ, মসজিদ প্রাঙ্গণ, আশেপাশের বাড়িঘর।

ইদরীস মিয়ার ছেলে মাশুকুর রহমান জানান, তখন তাদের এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মেহমানদারির উৎসব লেগে যেত। ফেনুয়ার হুজুর ইন্তেকালের আগ পর্যন্তই এই ইতিকাফের ধারাটি বজায় ছিল।

এখনও বেঁচে আছে সেই ঐতিহ্য। গতবার এই মসজিদে মুরিদ-মুসল্লিদের নিয়ে এতেকাফ করেছেন ফেনুয়ার হুজুরের বিশিষ্ট খলিফা ঢাকার কুড়িল নিবাসী মাওলানা আবদুস সাত্তার। প্রায় ৫০ জন তার সঙ্গে এতেকাফে বসেছিলেন।

বর্ষীয়ান ইদরীস মিয়ার ভাষায়, স্থানীয় একজন আলেমের পরামর্শে তার আব্বা মরহুম ডা. দলীলুর রহমান বুযুর্গ উলামায়ে কেরামকে বাড়ির মসজিদে তাশরিফ আনার উদ্যোগ নেন। আলেমদের দ্বীনী কাজে পাশে থাকতে পারলে তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করতেন। তিনি ছিলেন এলাকার সর্বজন পছন্দের একজন জনপ্রতিনিধি। এক সময় প্রেসিডেন্ট, পরে চেয়ারম্যান। সেই পাকিস্তান আমলের শুরু থেকেই বিভিন্ন সময় সম্মানীয় ও বিশিষ্ট উলামায়ে কেরাম এখানে তাশরিফ এনেছেন।

গত ২৪ ডিসেম্বর ছিল ভাটপাড়া বড় মসজিদ সংলগ্ন আশরাফিয়া হোসাইনিয়া হাফেজিয়া মাদরাসার বার্ষিক মাহফিল। এই মাদরাসার প্রতিষ্ঠা ২০০০ সালের দিকে। পাশেই রয়েছে আরেকটি প্রাচীন নূরানী মক্তব।

কৃষিবিদ ইকবাল আহমেদ আবু জানালেন, নানাবাড়িতে বেড়াতে এসে সেই ষাটের দশকে এই মক্তবে তিনি কায়দা-আমপারা পড়েছেন।

উলামায়ে কেরামের পদচারণা ও সংশ্রবধন্য গ্রামটিতে দ্বীনের পরশ লেগে আছে। ভাটপাড়া মাদরাসার মাহফিলেও এলাকার মানুষেরা ভালোবাসা নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন। নির্বাচনী বিধি-নিষেধের কথা বলে পুলিশ এসে বাধা দেওয়ায় বেশির ভাগ মাইক খুলে ফেলা হয়েছিল। শামিয়ানার নিচে তারপরও আবেগী ও দ্বীনপ্রেমী মানুষের মনোযোগে কোনো কমতি ঘটেনি। মাহফিলে বয়ান করেন মাওলানা মাকসুদুর রহমান, মাওলানা আবদুল আজিজ সিরাজী, মাওলানা এমদাদুল হক, মুফতি আবুল হাসান রাজাপুরী, মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন মুফতি মুহাম্মদ শোয়াইব, মাওলানা মুহাম্মদ ফাহাদসহ ঢাকা ও কুমিল্লার বিশিষ্ট সুধীজনেরা।

পূর্ববর্তি সংবাদমিথ্যা মামলা-হামলা নির্বাচনের পরিবেশকে নষ্ট করছে : বাম জোট
পরবর্তি সংবাদভাঙা প্যান্ডেলে সুলতান মনসুরের জনসভা