ইসলাম টাইমস ডেস্ক: প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, কারো কারণে নির্বাচন যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। প্রার্থী ও ভোটাররা যেন ন্যায্য অধিকার থেকে ভোট দিতে পারে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে সকলের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলার সর্বস্তরের সদস্যদের নির্দেশ দিচ্ছি। সহিংস ও নাশকতামূলক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কঠোর অবস্থান নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিচ্ছি। কোন মহল ভোটকেন্দ্রে অবৈধভাবে কোন অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে অবশ্যই দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা নিয়ন্ত্রণ করবে। কোনো বাহিনীর নির্লিপ্ততার কারণে অথবা নিস্ক্রিয় ভূমিকার কারণে কোনো কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ ব্যাহত হলে অধিক্ষেত্রের বাইরে গিয়ে তদন্ত করা হবে এবং দোষী প্রমাণিত হলে প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শনিবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
গণমাধ্যমের খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে সিইসি বলেন, প্রার্থীর এজেন্টদের হয়রানি করা হচ্ছে, তা কোনভাবেই কাম্য নয়। কোন এজেন্টের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন ফৌজদারী কোন অভিযোগ না থাকলে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়ারনি করবে না। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে তাদেরকে পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে হবে। এজেন্টদেও দায়িত্ব অনেক, তারা প্রার্থীর প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা প্রার্থীর স্বার্থে কাজ করেন।
লিখিত বক্তব্যে সিইসি বলেন, কাঙ্খিত ও প্রত্যাশিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছি আমরা। স্বাচ্ছন্দের সাথে একে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে পারি। দেশের সব রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে। নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় সমগ্র দেশ মুখরিত হয়েছে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৩জন ভোটরের জন্য মোট ৪০ হাজার ১৮৩টি নির্বাচনী কেন্দ্র, দুই লক্ষ ৬ হাজার ৭৭৭টি বুথ নির্ধারণ করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী সামগ্রী, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্টসহ সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় তদন্ত কমিটি, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্মকর্তা রয়েছেন।
প্রিজাইডিং অফিসার আজ রাতের মধ্যেই নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছে যাবেন। পুলিশ ও আনসার প্রহরায় নির্বাচনী মালামালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। প্রিজাইডিং অফিসার আগামীকাল সকাল সাতটার মধ্যে নির্বাচন পরিচালনার কাজ শুরু করবেন। তার সহযোগীদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দিবেন। নির্বাচন শুরু করার পূর্বে তিনি ব্যালট বাক্সগুলো সবাইকে দেখাবেন, ব্যালট বাক্স খালি আছে কিনা দেখিয়ে নেবেন। তারপর বাক্সটি তালাবদ্ধ করবেন। সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু করবেন।
নির্বাচন শেষ হলে এজেন্ট, সাংবাদিক, পর্যবেক্ষকদের সামনে ব্যালট গণনা করবেন। কোন অবস্থাতেই নির্বাচনী কেন্দ্রের বাইরে ব্যালট গণনা করা যাবে না। ফলাফলের তালিকা অবশ্যই প্রত্যেক এজেন্টকে সরবারহ করতে হবে। নির্বাচনের ফলাফল হাতে না পাওয়ার আগ পর্যন্ত কোন অবস্থায় তারা কেন্দ্র ত্যাগ করবেন না। কেউ যদি অবৈধভাবে এজেন্টকে কক্ষ ত্যাগ করতে বলে তখন ম্যাজিস্ট্রেট বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা নিতে হবে।
গণমাধ্যমকর্মীগণ নির্বাচনের বড় দায়িত্ব পালন করেন। তাদের মাধ্যমে দেশবাসী নির্বাচনের সঠিক চিত্র দেখতে পারে। সংবাদ সংগ্রহ এবং পরিবেশনকালে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাগণ স্বাভাবিক কাজ যাতে ব্যাহত না হয় তার প্রতি তাদের খেয়াল রাখতে হবে।
রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বলবো, তারা যেন নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলেন, ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দেন। যাতে একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন, নির্বাচনী প্রতিযোগিতা যেন সহিংসতায় রূপ না নেয়। কিন্তু দুঃখের সাথে লক্ষ্য করেছি, নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, অনেক মালামাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে , সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হয়েছে, এটা কাম্য ছিল না। সহিংসতার কারণে যেখানে ফৌজদারী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেখানে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকলে প্রতি আবারো অনুরোধ করতে চাই আপনারা আচরণবিধি মেনে চলুন। সহিংসতা পরিহার করুন, প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ বজার রাখুন, নির্বাচনের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদেরকে সহযোগিতা করুন। ভোটার সাধারণের কাজে অনুরোধ করি, আপনার ভোট অতি মূল্যবান। কোন ভয়ভীতির কাছে নত স্বীকার করবেন না, স্বাধীনভাবে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন হবে।
বিফ্রিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
