একজন কবি মাহবুব তালুকদার

আসাদ জোবায়ের ।।

বর্তমান সময়ে যাদের নাম প্রতিদিন দেশের মানুষকে নানাভাবে আলোড়িত করছে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তাদের মধ্যে অন্যতম। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তার আকুতি আশান্বিত করছে নুয়ে পড়া মানুষকে। তিনি বারবার বলছেন, তিনি তাঁর বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ। যদিও তাকে নিয়ে একপক্ষ সমালোচনাও করছেন।

কে এই মাহবুব তালুকদার? তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন কবি ও শিশু সাহিত্যিক। তাঁর ৪৪টি বই বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। যার স্বীকৃতি হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারই তাকে ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দিয়েছে।

এ পর্যায়ে তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের দিকে একটু তাকানো যায়। ১৯৪২ সালে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলায় জন্মগ্রহণ করা মাহবুব তালুকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যয়ন করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিষয়ে শিক্ষকতা করেছেন ১৯৬৮ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি মুজিব নগর সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। সেসময় তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন ‘শব্দসৈনিক’।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সময়ে উপসচিবের মর্যাদায় রাষ্ট্রপতির ‘স্পেশাল অফিসার’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আরেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সময়ে রাষ্ট্রপতির জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন। দেশের প্রথম চার রাষ্ট্রপতির দফতরে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহকারী প্রেসসচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

এছাড়া মাহবুব তালুকদার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ১৯৯০-৯১ পর্যন্ত। চাকরির শেষ সময়ে ১৯৯৮ সালে তিনি জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৯ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি।

তার এই কর্মজীবন পর্যালোচনা করলে দেখবেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন সকারে দায়িত্বপালন, বঙ্গবন্ধুর সহকারী প্রেসসচিব থাকা, এরশাদ সরকারের শেষ সময়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক থাকা, ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসরে যাওয়া এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ- এর কোনোটার সাথে কি বিএনপির সম্পর্ক আছে? বিএনপির কয়েক দফা সরকারের সময় তার মুকুটে কোনো পালক জমা হয়নি। যা হয়েছে তার বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই হয়েছে।

এতোকিছুর পরেও কবি মাহবুব তালুকদার কেন অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে হাত মেলাননি? কারণ তিনি একজন কবি। প্রকৃত কবিরা কখনো বিবেকের বিরুদ্ধে যেতে পারেন না। কবিতা হচ্ছে পৃথিবীর সব সৌন্দর্যের নির্যাস। আর সেই কবিতার যিনি চাষ করেন তিনিই কবি। সুন্দর কখনো আপোসকামী হয় না। যা সত্য, প্রকাশ্য, স্বচ্ছ- তাই সুন্দর। মিথ্যা, প্রতারণা, অন্ধকার, আপোস, হলুদ চশমা, অসততা- এসবই অসুন্দর। সুন্দরের সৃজনশিল্পী মাহবুব তালুকদার তাই অন্যদের থেকে আলাদা। শিশুদের কোমল মানসে যিনি সৌন্দর্যের বীজ বপন করেন, তিনি কিভাব অসুন্দরের সঙ্গে আপোস করবেন?

আরেকজন কমিশনার আছেন, তার নাম কবিতা খানম। বাবা-মা নাম রেখেছিলেন বলেই তিনি কবিতা। আদতে তিনি কবিতা নন। বাকিদের কথা আর নাই বা বললাম।

সৌন্দর্যের চাষাবাদে কবিরা অবিরাম থাকুন। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে মানবিকতার পথ ধরে …।

পূর্ববর্তি সংবাদথার্টি ফার্স্ট নাইটে ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষ নির্দেশনা
পরবর্তি সংবাদরাশিয়ায় গ্যাস বিস্ফোরণে নিহত ২